নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার চার মাস পরে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ প্রবল উদ্যমে দেশজুড়ে প্রতিবাদকে তুঙ্গ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশের মতে, দিন দিন আওয়ামী লীগের মিছিলের দৈর্ঘ্য যে ভাবে বাড়ছে, তাতে দলের নেতারা উৎসাহিত হতেই পারেন। আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের কথা চিন্তাভাবনা করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব।
আওয়ামী লীগ সূত্রের খবর, মুহাম্মদ ইউনূস জমানায় রীতিমতো ‘স্টিম রোলার’ চালানো হচ্ছে দলের উপরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলের তৃণমূলস্তরের নেতা-কর্মীদের দলের প্রতি আনুগত্যে ভাটা পড়েনি। তার মূল কারণ সাধারণ মানুষের সমর্থন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘‘আগে আওয়ামী লীগের নাম শুনলেই লোকে গালিগালাজ করত। সেই পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে গিয়েছে। মব সন্ত্রাস থেকে, তোলাবাজির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। মানুষ দিশাহারা। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছি।’’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত ভেঙে পড়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য— সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে মিছিলগুলিতে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম সর্বত্রই আওয়ামী লীগের মিছিলগুলির আকার বাড়ছে। দলের নেতাদের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে, তার বহরে রীতিমতো অবাক হতে হয়। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গির কবীর নানক বলেন, ‘‘মিছিল আরও বাড়বে। প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল হবে। যে অনাচার বাংলাদেশে চলছে তার অবসান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হবে।’’ আওয়ামী লীগ সূত্রের খবর, আগামী দিন ‘মার্চ টু যুমনা’ ডাক দেওয়া হবে কিনা, সে ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছেন দলীয় নেতৃত্ব। বিক্ষোভ-মিছিলের তীব্রতা আরও বাড়ানো হবে।
আপাতত মিছিল-মিটিংয়েই দলীয় কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না শেখ হাসিনার দলের নেতারা। সূত্রের খবর, সামাজিক কাজকর্মেও মাধ্যমে জনসংযোগ বাড়ানো শুরু করেছেন তাঁরা। আপাত দৃষ্টিতে ওই সংগঠনগুলির সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগাযোগ থাকবে না। তা ছাড়া যে সকল নেতা-কর্মী জেলবন্দি তাঁদের পরিবারগুলির পাশে আর্থিক সাহায্য নিয়ে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, আজ ২৮ সেপ্টেম্বর দলনেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। তাই নিঃশব্দে প্রচার হয়েছে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, আর আজকের পরিস্থিতি কী! দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের কথায়, ‘‘সত্যকে কোনও ভাবেই ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বুঝতে পারছেন, শেখ হাসিনার জমানা কতটা ভাল ছিল। তাই আগামী দিনে মিছিলের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়বে তার বহরও।’’ সূত্রের খবর, মিছিল ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। ঢাকার পুলিশ অফিসারদের সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মিছিলের আগাম খবর না পেলেই বদলি করে দেওয়া হবে। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে
দেশের মাটিতে যেমন ইউনূস বিরোধী বিক্ষোভ চলছে, বিদেশের মাটিতেও তা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের কথায়, ‘‘ইউনূসের দেড় বছরের শাসনে দেশ বন্দিশালায় পরিণত হয়েছে। সেই সময় খুব দূরে নয়, যখন আওয়ামী লীগের মিছিলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে আসবেন। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইউনূসের পতন ঘটাবে সাধারণ মানুষ।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)