Advertisement
E-Paper

যুদ্ধ নয়, ইরানবাসীকে ভাবাচ্ছে এখন অর্থনীতি

‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন কী করবেন কেউ জানে না। ওদের হাতেই তো বিশ্ব অর্থনীতির চাবি। আমাদের অবস্থা খুব কঠিন,’’ বললেন আফরা হামেদজ়াদে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০১:০৩

উপসাগরীয় এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই নৌবহর বাড়িয়ে চলেছে আমেরিকা। মুখে মাঝে মধ্যেই ওয়াশিংটন হুমকি দিচ্ছে, তাদের উপরে কোনও আক্রমণ হলে তেহরানকে উপযুক্ত জবাব দেবে তারা। কিন্তু এই যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহ নিয়ে ইরানের সাধারণ মানুষের অবশ্য হোলদোল নেই তেমন। ২০১৫-র ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর পরই তেহরানের উপরে এক গাদা নিষেধাজ্ঞার বোঝা চাপিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। যার জেরে ইরানের তেল রফতানি ধাক্কা খেয়েছে। তার পর থেকেই হু হু করে পড়েছে রিয়ালের দাম। প্রায় আট কোটি ইরানবাসীর এখন মাংস বা ওষুধের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার মতো অর্থও পকেটে নেই। এই অবস্থায় আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের থেকেও তাঁরা বেশি চিন্তিত মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করা নিয়ে।

‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন কী করবেন কেউ জানে না। ওদের হাতেই তো বিশ্ব অর্থনীতির চাবি। আমাদের অবস্থা খুব কঠিন,’’ বললেন আফরা হামেদজ়াদে। বছর কুড়ির আফরা তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাঁর কথার সুরই কার্যত শোনা গিয়েছে তেহরানের অলি-গলিতে। ক্যাফেটেরিয়া হোক বা শেয়ার ট্যাক্সি। যুদ্ধের আতঙ্কের থেকেও আমেরিকার একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভাবাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে।

সত্যি সত্যি যুদ্ধ বাধলে ইরানের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যে পুরো ভেঙে পড়বে, তা মেনে নিচ্ছেন দেশের মানুষ। ৩৪ বছরের ট্যাক্সিচালক জাফর বললেন, ‘‘যুদ্ধ হলে দু’দেশেরই ক্ষতি। আমাদের সরকারের উচিত যুদ্ধ থামাতে কিছু করা। যুদ্ধে কারও উপকার হলে ইরাক আর আফগানিস্তানে এত দিন সেটা হয়ে যেত। আমার মনে হয় দু’দেশেই এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা শান্তির পক্ষেই সওয়াল করবেন।’’

৫১ বছরের গৃহবধূ জ়োরেহ সাদেগির মতে, মুখে যুদ্ধ যুদ্ধ করলেও ইরানকে আসলে ভয় দেখিয়ে চাপে রাখতে চায় আমেরিকা। নমাজ সেরে মসজিদ থেকে বেরোতে বেরোতে বললেন, ‘‘যুদ্ধ করার হলে আমেরিকা এত দিনে আক্রমণ করেই ফেলত।’’ একই কথা বললেন যাদুঘরের কর্মী মাস্সুমেহেরও। তাঁর সাফ কথা, ‘‘যখন কেউ কথায় কথায় যুদ্ধের ভয় দেখাতে থাকে তার অর্থ এই যে, তারা নিজেরাই এখন সেটার জন্য প্রস্তুত নয়। থাকলে এত দিনে যুদ্ধটা তারা করেই ফেলত। আমেরিকা কিছুই করতে পারবে না।’’

বেজিং সফর শেষ করার আগে কার্যত ওই যাদুঘর কর্মীর মনের কথাগুলিই সাংবাদিকদের বলেছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভাদ জ়ারিফ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা আসলে কেউই ভাবতে পারে না।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধ তো নয়ই, কোনও দ্বন্দ্বই চাই না।’’ জাভাদের স্পষ্ট কথা, ‘‘আমরা যুদ্ধ চাই না। আমার মনে হয় কোনও দেশের ক্ষমতাও নেই যে, তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা ভাববে।’’ জাভাদ আরও বলেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পও যুদ্ধ না করার বার্তাই দিয়েছেন বরাবর। কিন্তু তাঁর প্রশাসনের কিছু লোক ক্রমাগত যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিচ্ছে।’’ কূটনীতিকদের মতে, নাম না করে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের দিকেই ইঙ্গিত
করেছেন বিদেশমন্ত্রী।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু দিন আগেই টুইট বার্তায় জানিয়েছিলেন, তাঁর মনে হয় ইরান সরকার খুব শীঘ্রই এই সঙ্কট কাটাতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, চাপ দিয়ে আমেরিকা তাঁদের আলোচনার টেবিলে বসাতে পারবেন না। গত কাল এক সাক্ষাৎকারে রৌহানি বলেন, ‘‘আমরা আলোচনার পক্ষে। তবে সেটা যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। কিন্তু কোনও চাপ বা খোঁচার কাছে আমাদের দেশ মাথা নোয়াবে না।’’

Iran Crude Oil US Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy