Advertisement
১০ মে ২০২৪
Pope Francis

Pope Francis: গির্জার নির্যাতন, ‘ক্ষমাপ্রার্থী’ পোপ গেলেন কানাডায়

ধর্মের ঘেরাটোপে কানাডার আদিবাসী শিশুদের উপরে হওয়া সেই নির্যাতনের কোনও বিচার হয়নি, অপরাধীদের কোনও শাস্তি হয়নি।

পোপ ফ্রান্সিস।

পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ভ্যাটিকান সিটি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ০৫:৫৪
Share: Save:

দশকের পর দশক ধরে অত্যাচার চলেছে ক্যাথলিক গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক স্কুলগুলিতে। ধর্মের ঘেরাটোপে কানাডার আদিবাসী শিশুদের উপরে হওয়া সেই নির্যাতনের কোনও বিচার হয়নি, অপরাধীদের কোনও শাস্তি হয়নি। নির্যাতিতদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্যাথলিক গির্জার হয়ে ক্ষমা চাইতে রোম থেকে কানাডা পাড়ি দিলেন পোপ ফ্রান্সিস।

এক সপ্তাহ ব্যাপী এডমন্টন সফর। ভ্যাটিকান জানিয়েছে, এই সফর হল ‘অনুতাপের তীর্থযাত্রা’। রবিবার এডমন্টনে পোপকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, কানাডার গভর্নর জেনারেল মেরি সিমন। কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা করবেন পোপ। ক্যাথলিক গির্জার গায়ে যে দীর্ঘদিনের কলঙ্কের দাগ লেগে রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলবেন। পোপ আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাইবেন বলে শোনা গিয়েছে।

১৮০০ শতকের শেষ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, কানাডায় অন্তত ১৩৯টি স্কুল চলত গির্জার নিয়ন্ত্রণে। এই সব আবাসিক স্কুলে কানাডার আদিবাসী, জনজাতি শিশুদের পাঠিয়ে দিত সরকার। এক রকম কয়েদ করে রাখা হত তাদের। ছোট ছোট বাচ্চাদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল তাদের পরিবার থেকে। নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিল ওরা। সেই সঙ্গে চলত শারীরিক ও যৌন নির্যাতন। অত্যাচার করত এই সব স্কুলের হেডমাস্টার ও অন্য শিক্ষকেরা। হাজার হাজার বাচ্চা মারা গিয়েছিল অসুস্থ হয়ে, অপুষ্টিতে কিংবা স্রেফ ভালবাসা না পেয়ে, অবহেলায়।

গত বছরও ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও সাসকাটচেওয়ানের দু’টি আবাসিক স্কুলে কয়েকশো পরিচয়হীন কবর মিলেছে। কানাডার ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গির্জার অবহেলা, অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়ে এই সব আবাসিক স্কুলে ৪ হাজারেরও বেশি আদিবাসী শিশুর প্রাণ গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১৩০০-র বেশি কবর মিলেছে। কানাডায় দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, পোপকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই অপরাধ স্বীকার করতেই হবে।

গত এপ্রিলে পোপের সঙ্গে দেখা করতে ভ্যাটিকানে যান কানাডার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির নেতারা। পোপ সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, ওই কলঙ্কের কথা ভাবলে তাঁর কষ্ট হয়, লজ্জা লাগে। যাদের হাতে শিক্ষার দায়িত্ব ছিল, তাদের এই অপরাধ মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, আপনাদের অস্তিত্বকে যে ভাবে অশ্রদ্ধা করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত করা হয়েছে, তা লজ্জার।’’ কিউবেক ও ইকালুয়েটেও যাবেন পোপ। তাঁর সঙ্গে থাকবেন দুই কানাডিয়ান কার্ডিনাল, মার্ক ওলেট ও মাইকেল জারনি।

এ মাসের গোড়ায় আফ্রিকা যাওয়ার কথা ছিল ৮৫ বছর বয়সি পোপ ফ্রান্সিসের। কিন্তু হাঁটুর ব্যথা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য সফর বাতিল করতে হয়। ১০ ঘণ্টার উড়ানে কষ্ট করেই কানাডা আসতে হয়েছে তাঁকে। সঙ্গী হয় লাঠি, নয়তো হুইলচেয়ার। এডমন্টনে বক্তৃতা দেবেন পোপ। দেড় হাজার মানুষের সেখানে থাকার কথা। তবে অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’ ৬৮ বছর বয়সি লিন্ডা ম্যাকগিলভারি যেমন জানিয়েছেন, তিনি যাবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন, আর ওই সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীরা, যারা অপরাধ করেছিল, তারা তো আর নেই!’’ ম্যাকগিলভারি নিজে ৬ থেকে ১৩ বছর বয়স অবধি একটি আবাসিক স্কুলে ছিলেন। বললেন, ‘‘আমি তো সব হারিয়ে ফেলেছি। সংস্কৃতি, পরিবার, শিকড়... আর কী হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pope Francis canada
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE