Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শীঘ্রই সন্ত মা টেরিজা, সিদ্ধান্ত পোপের

প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়েছিল এক যুগ আগেই। এ বার তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়তে চলেছে। মা টেরিজা অচিরেই ‘সন্ত টেরিজা’ হয়ে উঠবেন। শুক্রবার সকালেই ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি ফ্রায়ার ব্রায়ান কলোডিজচাক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘সন্তে’র মর্যাদা পাওয়ার ব্যাপারে মা টেরিজা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়েছিল এক যুগ আগেই। এ বার তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়তে চলেছে। মা টেরিজা অচিরেই ‘সন্ত টেরিজা’ হয়ে উঠবেন।

শুক্রবার সকালেই ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি ফ্রায়ার ব্রায়ান কলোডিজচাক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘সন্তে’র মর্যাদা পাওয়ার ব্যাপারে মা টেরিজা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেছেন। পোপ ফ্রান্সিস কিছু দিনের মধ্যেই তাঁকে সন্ত বলে ঘোষণা করবেন।

দিনক্ষণ অবশ্য এখনই খোলসা করেনি ভ্যাটিকান। রোম্যান ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ স্তরের কার্ডিনালদের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে ফ্রায়ার ব্রায়ান জানিয়েছেন। তবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠানটি হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমের কোনও কোনও সূত্রে বলা হচ্ছে। সব আনুষ্ঠানিকতা মিটলে টেরিজা পরিচিত হবেন ‘সেন্ট মাদার টেরিজা অব কলকাতা’ নামে।

খবরটা ছড়িয়ে পড়তে স্বাভাবিক ভাবেই কলকাতার ভক্ত-গুণমুগ্ধদের মধ্যে আনন্দের বান ডেকেছে। দুপুরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন, ‘এই মাত্র সুখবরটা পেলাম। ‘ব্লেসেড’ মাদার টেরিজা ২০১৬-য় সন্ত হচ্ছেন। খুশির দিনে মিশনারিজ অব চ্যারিটি-কে অনেক শুভেচ্ছা।’ জোড়া গির্জার ‘মাদার হাউস’-এ টেরিজার সমাধিসৌধ ঘিরে এ দিন বিকেলে শুরু হয়ে যায় ‘থ্যাঙ্কসগিভিং প্রেয়ার’। কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা সেখানে বলেন, ‘‘মিশনারিজ অব চ্যারিটির জন্য, কলকাতার জন্য— বড়দিনের মরসুমে এটাই ঈশ্বরের সব থেকে বড় উপহার।’’

মৃত্যুর পর দু’দশকেরও কম সময়ে (মাদার টেরিজা ১৯৯৭ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন) ‘সন্তে’র মর্যাদা অর্জন করার নজির বেশ দুর্লভ। বিশপ ডি’সুজা বলছিলেন, কারও কারও সন্ত হতে শতাধিক বছরও লেগে যায়। তবে কোন কোন ধাপ পেরিয়ে টেরিজা সন্ত হচ্ছেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে ভ্যাটিকানের বিবৃতিতেই।

রীতিমাফিক কাউকে ‘সন্ত’ ঘোষণা করার জন্য দু’টি অলৌকিক ঘটনা বা ‘মিরাক্‌ল’ ঘটা আবশ্যক। রোম্যান ক্যাথলিক গির্জার দাবি অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে মা টেরিজার নামে প্রার্থনা করে পশ্চিমবঙ্গে মনিকা বেসরা নামে এক মহিলার তলপেটের টিউমার সেরে গিয়েছিল। এই ঘটনার সুবাদে ২০০৩ সালে টেরিজাকে ‘ব্লেসড’ বা ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য বলে ঘোষণা করে ভ্যাটিকান। সেই অনুষ্ঠানটি বিয়েটিফিকেশন নামে পরিচিত। সন্ত হওয়ার সেটিই প্রথম ধাপ।

পরবর্তী ‘মিরাক্‌ল’টি ২০০৮ সালে ব্রাজিলে ঘটেছে বলে ভ্যাটিকানের বক্তব্য। এ বারও টেরিজার নামে প্রার্থনা করে মস্তিষ্কের জটিল রোগের শিকার এক যুবক প্রবল সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে আচমকা সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই যুবকের স্ত্রী ‘ব্লেসড টেরিজা’র কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। তার পরেই তাঁর স্বামী সেরে ওঠেন। দৃষ্টান্তটি মিরাক্‌ল বলে গ্রাহ্য হবে কি না, তা নিয়ে ভ্যাটিকানে বৈঠক হয়। বিশেষজ্ঞ কার্ডিনাল ও বিশপদের দিয়ে গড়া ভ্যাটিকানের ‘কংগ্রিগেশন ফর দ্য কজেস অব সেন্টস’ সিদ্ধান্ত নেয়, এই ঘটনাটি ‘মিরাক্‌ল’ বলে গণ্য হওয়ারই যোগ্য। সেই সিদ্ধান্ত খুঁটিয়ে দেখেই পোপ ফ্রান্সিস তাঁর চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন।

তবে চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশ এবং যুক্তিবাদীরা অবশ্য এই জাতীয় ‘মিরাক্‌ল’ নিয়ে কিছুটা সংশয়ী। প্রার্থনাবলে দুরারোগ্য ব্যাধি সারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাঁদের মনে। মাদার হাউসে সংবাদমাধ্যমের একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন এ দিন প্রসঙ্গটি ওঠেও। পরে কলকাতার আর্চবিশপ বলেন, ‘‘কেউ কেউ মিরাক্‌লে বিশ্বাস করেন না। তবে তাঁরাও বলেন, মাদার টেরিজার জনসেবার কাজটাই জলজ্যান্ত মিরাক্‌ল।’’ রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতেও, ‘‘মাদারের শ্রেষ্ঠ মিরাক্‌ল হল, দীনদুঃখীদের জন্য তাঁর সেবা।’’ ভ্যাটিকানে সন্ত ঘোষণার অনুষ্ঠানে দেশের সাংসদদের প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের কাছে তিনি আবেদন করবেন বলেও ডেরেক জানিয়েছেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী টেরিজা আদতে আলবানিয়ার মেয়ে। তাঁর জন্মস্থান বর্তমানে মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত। ১৯৪৯ সালে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ গড়ে তোলার পর থেকে অবশ্য দুনিয়ার অনেকের কাছেই কলকাতা ও টেরিজার পরিচয় প্রায় একাকার। মাদার হাউসে জড়ো হওয়া ভক্তদের মধ্যেও এ দিন জাত-ধর্মের ফারাক মুছে গিয়েছিল। মাদারের স্নেহধন্য প্রাক্তন টেনিস তারকা নরেশ কুমার ও তাঁর স্ত্রী সুনীতা কুমার শিখ ধর্মাবলম্বী। ফোনে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’-র এক সিস্টারের কাছ থেকে খবরটা পাওয়ার সময়ে গুরুদ্বারেই ছিলেন সুনীতা। বলছিলেন, ‘‘ওঁর জীবনটাই তো সন্তের মতো নিঃস্বার্থ ছিল। আনন্দে আমার চোখে জল এসে যাচ্ছে!’’ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৮৪ বছরের রেখা বড়ুয়া এ দিন বিকেলের বিশেষ প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিলেন। ‘‘আমি ধর্ম অত বুঝি না! কিন্তু মাদারকে দেখেছি। ওঁকে ভালবাসি,’’ বললেন বৃদ্ধা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pope Francis Mother Teresa Saint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE