Advertisement
E-Paper

পড়ুয়াদের বাঁচিয়ে গুলিতে প্রাণ দিলেন স্যার

জঙ্গিদের দিকে বন্দুক তাক করে নাগাড়ে গুলি চালাচ্ছিলেন বছর চৌত্রিশের যুবক। চিৎকার করে ঘরের ভিতরেই থাকার নির্দেশ দিচ্ছিলেন পড়ুয়াদের। কারণ বাইরে তখন সাক্ষাৎ মৃত্যু। একটু আগেই বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছে চার জঙ্গি। বন্দুক তাক করে তখন ছুটে আসছে তাঁদেরই দিকে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৯
সৈয়দ হামিদ হুসেন

সৈয়দ হামিদ হুসেন

জঙ্গিদের দিকে বন্দুক তাক করে নাগাড়ে গুলি চালাচ্ছিলেন বছর চৌত্রিশের যুবক। চিৎকার করে ঘরের ভিতরেই থাকার নির্দেশ দিচ্ছিলেন পড়ুয়াদের। কারণ বাইরে তখন সাক্ষাৎ মৃত্যু। একটু আগেই বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছে চার জঙ্গি। বন্দুক তাক করে তখন ছুটে আসছে তাঁদেরই দিকে।

কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসা গুলির সামনে বেশি ক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। পড়ুয়াদের চোখের সামনেই এক সময় গুলিতে লুটিয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক সৈয়দ হামিদ হুসেন।

বু‌ধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, পেশোয়ারের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা-জঙ্গির ছ’ঘণ্টার লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। সৈয়দের ছাত্ররা মনে করছেন, স্যার না থাকলে বাড়তো এই সংখ্যাটা। বন্দুক হাতে যখন হামিদ জঙ্গিদের মুখোমুখি, তখনই কোনও মতে পিছনের দেওয়াল টপকে প্রাণে বাঁচেন পড়ুয়ারা। যদিও নিজে বাঁচতে পারেননি।

এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সাড়ে ন’টা নাগাদ গুলির আওয়াজ কানে আসে তাঁদের। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তখন একে একে জড়ো হচ্ছিলেন ছাত্র-শিক্ষকরা। উপলক্ষ, বাচা খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত কবিতার অনুষ্ঠান। কিন্তু ছন্দ কাটে গুলির শব্দে। এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আল্লাহ মহান’’ চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছিল জঙ্গিরা। আমাদের বিভাগে পৌঁছনোর সিঁড়ির দিকেই এগিয়ে আসছিল। জঙ্গিদের দেখে আতঙ্কে ক্লাসের জানলা দিয়ে নীচে ঝাঁপ মারে এক বন্ধু। আমরা আর ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখিনি।’’

তত ক্ষণে বিপদ টের পেয়ে গিয়েছেন হুসেনও। বার করে ফেলেছেন নিজের আগ্নেয়াস্ত্র। ‘‘উনি বন্দুক হাতে নিয়ে এগিয়ে যান। জঙ্গিরাও তেড়ে আসে ওঁর দিকে। আমি ছুটে একটা ক্লাসের ভিতরে ঢুকে যাই। এর পর কোনও মতে নীচে নেমে পিছনের দেওয়াল টপকে পালাই,’’ বলতে বলতে কেঁপে উঠছেন ভূ-তত্ত্ববিদ্যার জাহুর আহমেদ।

ক্লাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় হাজার তিনেক পড়ুয়ার অনেকেই ছিলেন হস্টেলে। জঙ্গিরা তাই চড়াও হয় মূলত সেখানেই। তখন সেখানে হাজির ছিলেন সমাজতত্ত্বের ছাত্র মহম্মদ দাউদ। চোখের সামনে হামিদকে লুটিয়ে পড়তে দেখেন তিনি। ‘‘জঙ্গিরা সরাসরি গুলি চালায় স্যারের দিকে,’’ তখনও আতঙ্ক দাউদের গলায়।

২০১৪ সালে পেশোয়ারের সেনা স্কুলে জঙ্গি হানার পর থেকে স্কুল-কলেজের ভিতরেও শিক্ষকদের আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে খাইবার পাখতুনখোওয়া প্রদেশে। কিন্তু তালিবানের একে-৪৭-এর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি সেই অস্ত্র।

প্রত্যক্ষদর্শী এক পড়ুয়া জানাচ্ছেন, হামলাকারীদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২০-র মধ্যে। তাঁর বর্ণনায় ‘‘আমাদেরই মতো বয়স হবে ওদের। হাতে একে-৪৭। গায়ে সাধারণ পোশাক।’’ ওই ছাত্র জানান, ক্লাস না থাকায় হস্টেলে ছিলেন তাঁরা। ঘরের ভিতর থেকেই বাইরে চলা গুলির আওয়াজ কানে আসছিল তাদের। তাঁর কথায়, ‘‘গুলি থামার পর সেনারা ঘরে কড়া নেড়ে জানিয়ে দেয় আমরা নিরাপদ।’’

তবে হামলা হয়েছে টের পাওয়া মাত্রই পাঁচিল টপকে পালাতে পেরেছিলেন কয়েক জন। পালানোর আগে দেখে এসেছিলেন হাড় হিম করা দৃশ্য। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘তখন ভয়াবহ লড়াই চলছে ভিতরে। এক জঙ্গি উঠে পড়েছে ছাদে, অন্য জন পাঁচিলের কাছে। বাকি দু’জন জড়ো হয়েছে এক কোনায়।’’ প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ভিতরে ঢুকে দু’টো দলে ভাগ হয়ে যায় জঙ্গিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা এবং তিন তলায় ছড়িয়ে পড়েছিল চার জন। গুলি চালানোর পাশাপাশি বেশ কয়েক বার বিস্ফোরণও ঘটায় জঙ্গিরা।

মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এলেও প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে শোকের ছায়া পড়ুয়াদের মধ্যে। সবাই বলছেন, হুসেন ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্ববান, ভাল মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন। বিভিন্ন মহল থেকে আসা শোকবার্তায় ভরে গিয়েছে টুইটার।

peshwar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy