Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Mena Mangal

আফগানিস্তানে মহিলা সাংবাদিককে গুলি করে খুন

কে বা কারা মীনা মঙ্গলকে খুন করেছে তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে তাঁর মা স্থানীয় একটি সংগঠনের দিকে আঙুল তুলেছেন।

মীনা মঙ্গল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

মীনা মঙ্গল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ১৪:৩০
Share: Save:

আফগানিস্তানে প্রকাশ্য দিনের আলোয় গুলি করে খুন করা হল প্রখ্যাত সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী মীনা মঙ্গলকে। খুনের হুমকি পাচ্ছেন বলে কয়েক দিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন মীনা। তার পরই শনিবার সকালে দক্ষিণ-পূর্ব কাবুলের রাস্তায় তাঁকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা।

গত ৩ মে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জীবননাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মীনা। কেউ বা কারা তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। তার পরও তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হল না কেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন সে দেশের মানবাধিকার আইনজীবী তথা নারী অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে যুক্ত ওয়াজমা ফ্রোঘ। তিনি বলেন, “হুমকি পাচ্ছেন বলে জানানো সত্ত্বেও কেন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হল না? এর উত্তর চাই আমরা।পুরুষদের সঙ্গে একমত না হলেই প্রাণ হারানোর এই প্রথা আমাদের সমাজে আর কতদিন চলবে? ”

কে বা কারা মীনা মঙ্গলকে খুন করেছে তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে তাঁর মা স্থানীয় একটি সংগঠনের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর দাবি, পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে নারী শিক্ষার হয়ে সওয়াল করায় এর আগে মীনাকে অপহরণ করেছিল ওই সংগঠনের লোকজন। সেইসময় তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘুষ দিয়ে অল্পদিনের মধ্যেই জেল থেকে বেরিয়ে আসে তারা।

আরও পড়ুন: মেঘ থাকলে ধরতে পারবে না পাক রেডার, এগিয়ে যাও, বালাকোটে হামলার আগে বলেছিলেন মোদী​

এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও আফগান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র নসরত রহিমি জানান, মীনা মঙ্গলের হত্যাকারীদের এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে। আততায়ীদের খোঁজে গঠন করা হয়েছে বিশেষ পুলিশ ইউনিটও।

আফগানিস্তানের বৃহত্তম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোলো টিভির সঞ্চালক হিসাবে জনপ্রিয়তা পান মীনা মঙ্গল। পরবর্তীকালে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী শামশাদ টিভি-তেও কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়াও নারী অধিকার এবং নারী শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা হিসাবে আফগান সংসদের নিম্নকক্ষেও জায়গা পান। তাঁকে এ ভাবে খুন করায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলে।

দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশ জুড়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলাকালীন আফগানিস্তানে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত একাধিক মহিলার উপর হামলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এমনকি পড়ুয়াও। পর্দাপ্রথার বিরোধিতা করায় কখনও সরকার বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। তো কখনও আবার রক্ষণশীল আত্মীয়স্বজন এবং নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকেরাই হামলা চালিয়েছে তাঁদের উপর।

আরও পড়ুন: ভারতীকে ঘিরে বিক্ষোভ, কেশপুরে শূন্যে গুলি-লাঠিচার্জ কেন্দ্রীয় বাহিনীর, পরপর গাড়ি ভাঙচুর​

কিন্তু একদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী যখন পাততাড়ি গোটাচ্ছে, অন্য দিকে তালিবানদের সঙ্গে সমোঝতার চেষ্টা চলছে, এমন পরিস্থিতিতে মীনা মঙ্গলের হত্যায় উদ্বিগ্ন দেশের মহিলা সমাজকর্মীরা। তালিবানদের সঙ্গে সমঝোতায় তাঁদের ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি তুলে আসছেন ওই মহিলারা। তাঁদের যুক্তি, ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী তালিবান শাসনের উচ্ছেদ ঘটানোর আগে পর্যন্ত আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। বাধ্যতামূলক ছিল বোরখা পরা। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের কোনও জায়গা ছিল না। এত বছর ধরে সংগ্রামের পর সবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছিল। এই মুহূর্তে তাঁদের বাদ দিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, তা দেশের সমগ্র নারীজাতির পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।

তাঁদের আশঙ্কা যে একেবারেই অবান্তর নয়, কয়েক দিন আগেই তার প্রমাণ মিলেছে। গত ৮ মে কাবুলে একটি মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তালিবানরা। তাতে পাঁচ জন প্রাণ হারান। হামলার দায় স্বীকার করে তালিবান মুখপাত্র জাবিহুল্লা মুজাহিদ জানায়, পশ্চিমি সংস্কৃতির অনুকরণে কর্মক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষদের অবাধ মেলামেশার বিরোধিতা করতেই এই হামলা চালিয়েছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE