Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অস্ট্রেলিয়া-ভোটেও প্রশ্নে আদানি গোষ্ঠী

কুইন্সল্যান্ডের রেস্তরাঁ-মালিক বেন হোলিহ্যানের মতো কেউ কেউ আবার এই দাবিকে বলছেন ‘নিছক পাগলামি’। হোলিহ্যানের যুক্তি, ‘‘আমাদের রোজগার প্রয়োজন, রয়্যালটি থেকে রাজস্বও দরকার। পরিবেশের জন্য খনি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলাটা মানুষের জীবিকা নিয়ে রাজনীতি করা!’’

আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কয়লা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি রয়টার্স।

আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কয়লা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪২
Share: Save:

উত্তর অস্ট্রেলিয়ার টাউন্সভিল শহরের প্রাণকেন্দ্রে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ক্রিসা অ্যালেক্সন। হাতে পোস্টার— ‘ফর লিজ়!’ কুইন্সল্যান্ডের গালিলি অববাহিকায় ৪০০ কোটি ডলারে যে কয়লা খনিটিকে ভারতের আদানিদের হাতে লিজ় দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করার দাবিতে প্রচার করছেন ক্রিসার মতো অনেকেই। আর অস্ট্রেলিয়ায় আগামী মাসে সাধারণ নির্বাচনের আগে এই দাবির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিরোধী লেবার পার্টি ও তার শরিকেরা।

কুইন্সল্যান্ডের রেস্তরাঁ-মালিক বেন হোলিহ্যানের মতো কেউ কেউ আবার এই দাবিকে বলছেন ‘নিছক পাগলামি’। হোলিহ্যানের যুক্তি, ‘‘আমাদের রোজগার প্রয়োজন, রয়্যালটি থেকে রাজস্বও দরকার। পরিবেশের জন্য খনি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলাটা মানুষের জীবিকা নিয়ে রাজনীতি করা!’’

সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভোটেও অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত আদানি শিল্পগোষ্ঠীর একটি প্রকল্প। অস্ট্রেলিয়ার ভোটে এ বার বিরোধী লেবার পার্টি আর তার শরিকেরা ক্ষমতায় আসতে চলেছে— এমন পূর্বাভাস দিচ্ছে একের পর এক জনমত সমীক্ষা। ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টির জোটের বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ হিসেবে উঠে এসেছে পরিবেশ দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতা। আর দু’নম্বর ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। আদানির প্রকল্পটিকে ছাড়পত্র দিলে পরিবেশ ধ্বংসে সহযোগিতার অভিযোগ উঠছে সরকারের বিরুদ্ধে। আবার না-দিলে কর্মসংস্থানের বড়সড় সুযোগ আটকে থাকার অভিযোগ।

কুইন্সল্যান্ডে বছরে ২৩০ কোটি টন ‘নিম্ন মানের কয়লা’ উৎপাদন ক্ষমতার খনিটি আদানি গোষ্ঠী লিজ় নিয়েছে ২০১০ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কয়লা খনি এটি। কিন্তু পরিবেশ, জল-সহ নানা রকম ছাড়পত্র না-মেলায় ৯ বছর পরেও সেখানে কাজ শুরু হতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার আদানি মাইনিংয়ের প্রধান লুকাস ডাও জানিয়েছেন, পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করার বিষয়ে সম্প্রতি তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে একটি ছাড়পত্র পেয়েছেন। তবে খনন কাজ শুরু করার ছাড়পত্র যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, সে বিষয়ে সরকারকে ফের চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। ডাও আশাপ্রকাশ করেন, কাজ শুরুর সরকারি ছাড়পত্র এক বার পাওয়া গেলে অন্য রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলেও তা খারিজ করা হবে না। তবে মাটির নীচের জল ব্যবহার সংক্রান্ত সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছাড়পত্রটিই এখনও হাতে পায়নি আদানি মাইনিং।

এই পরিস্থিতিতে কুইন্সল্যান্ডে প্রায় সব ক’টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সরকারের বিরুদ্ধে এখানে বিরোধীদের সব চেয়ে বড় অভিযোগ, বেরোজগারি। তরুণদের মধ্যে তো বটেই, সার্বিক ভাবে বেকারত্বের হার বেড়েছে। শাসক

কনজার্ভেটিভ নেতারা বলছেন, আদানিদের খনিটিতে কাজ শুরু হলে এই চিত্রটি বদলে যেত। বিরোধীদের জন্যই সেটা আটকে রয়েছে।

আবার বিরোধী লেবারেরা বলছেন, দেশের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ আর কোথায় বসবাস করবেন! আদানিদের ডেকে এনে সে ব্যবস্থা করেছে সরকার।

সব মিলিয়ে আদানিদের প্রকল্প নিয়ে ভোটের মুখে কুইন্সল্যান্ড সরগরম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Adani Group Coal Mine Queensland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE