Advertisement
E-Paper

বেশ করেছি মেরেছি, ধরা পড়ে বলল কান্দিল বালোচের খুনি ভাই

কান্দিল বালোচ হত্যাকাণ্ডে তাঁর ভাই মহম্মদ ওয়াসিম আজিমকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হল কান্দিলের বাবার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ১৩:২১

কান্দিল বালোচ হত্যাকাণ্ডে তাঁর ভাই মহম্মদ ওয়াসিম আজিমকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হল কান্দিলের বাবার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে। তবে পাক পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, দিদিকে খুনের কথা কবুল করেছে ওয়াসিম। এবং তাঁর দাবি, পারিবারিক ‘সম্মান’ রক্ষার জন্যই তিনি এই খুন করেছেন।

শুক্রবার মুলতানের বাড়িতে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় বিতর্কিত পাক মডেল কান্দিল বালোচের মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ হয়, তাঁকে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সকদের মতে, সম্ভবত শ্বাসরোধের আগে তাঁকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল।

পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজ বা পরিবারের মধ্যে থেকেও খুবই খোলামেলা এবং তোয়াক্কা না করা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন কান্দিল। নিজের নগ্নতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করতেও পিছ পা ছিলেন না। যৌনতা বা নগ্নতা নিয়ে তাঁর খোলামেলা কথাবার্তা নিয়ে বিতর্কেও পড়েছেন বারবার। কিন্তু নিজের অবস্থানে অটল থেকে গোটা ব্যাপারটাকে রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে এক জন মেয়ে হিসাবে নিজের লড়াই বলেই দেখাতে চেয়েছেন।

শুক্রবার, খুন হওয়ার দিনেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের একটি ছবি পোস্ট করে কান্দিল লিখেছিলেন, “কত বার আমাকে টেনে নামানো হবে তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না, আমি কিন্তু একজন যোদ্ধা এবং আমি উঠে দাঁড়াবোই”।

গত ১৪ জুলাই কান্দিল পোস্ট করেছিলেন, “একজন মেয়ে হিসেবে আমাদের নিজেদের হয়েই উঠে দাঁড়াতে হবে... মেয়ে হিসেবে আমাদের একজনের পাশে অন্যজনকে দাঁড়াতে হবে... মেয়ে হিসেবে আমাদের সুবিচারের জন্য লড়াই করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আমি একজন আধুনিক সময়ের নারীবাদী। আমি সমান অধিকারে বিশ্বাস করি। মেয়েদের কেমন হওয়া উচিত এটা আমরা ঠিক করে দিতে পারি না। শুধু সমাজের কথা ভেবে নিজেদের পরিচয়ে তকমা লাগানোর কোনও প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করি না। আমি শুধুমাত্র একজন মুক্ত চিন্তা এবং মুক্ত মনের নারী এবং আমি যেমন আমি তেমন থাকতেই ভালবাসি”।

বলা বাহুল্য, যে কোনও রক্ষণশীল সমাজই একজন মেয়ের লেখা এই সব কথাকে ভাল ভাবে নেয় না। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার এক দিকে যেমন বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি (তাঁর টুইটার ফলোয়ার ৪০ হাজার, ফেসবুক ফলোয়ার সাত লক্ষের বেশি) তেমনই বিতর্ক, নিন্দা, সমালোচনা পিছু পিছু চলেছে তাঁর।

অতি সম্প্রতি পাকিস্তানের এক প্রথম সারির ধর্মগুরু মুফতি আবদুল কাভির সঙ্গে সেলফি পোস্ট করে হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছিলেন কান্দিল। রমজান চলাকালীন করাচির এক হোটেলের ঘরে তোলা এই ছবি পোস্ট হতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। একটি ছবিতে ওই ধর্মীয় নেতার টুপিও মাথায় দিয়ে ছিলেন কান্দিল। তুমুল বিতর্কের জেরে ওই ধর্মীয় নেতাকে ইদের চাঁদ দেখার কমিটি থেকে বরখাস্ত করে পাকিস্তান সরকার। কাভি সাফাই দেন, ইসলাম নিয়ে আলোচনা করতেই তিনি কান্দিলের কাছে গিয়েছিলেন।

কিন্তু কান্দিল এখানেও থেমে থাকেননি। সোশ্যাল সাইটে লেখেন, ‘‘মুফতি কী করে নিজেকে ইসলামের অভিভাবক বলেন? উনি তো ইসলামের নামে কলঙ্ক। উনি অনুরাগীদের সামনে এক রকম, আলাদা থাকলে আর এক রকম। একটি টিভি শোয়ের প্যানেলে আমাদের আলাপ হয়েছিল। সেখানে আমার ফোন নম্বর আলাদা করে চেয়েছিলেন। আমার সঙ্গে একেবারেই সম্মানজনক ব্যবহার করেননি। ফলে এই লোকটাকে আমি এক্সপোজ করতেই চেয়েছিলাম।’’

এই ছিলেন কান্দিল। কখনও প্রিয় ক্রিকেটারকে খোলা পোস্টে প্রেম নিবেদন করে তাঁর জন্য নগ্ন নাচ দেখানোর ঘোষণা করেন। কখনও বিখ্যাত ধর্মগুরুর ‘চরিত্র এক্সপোজ’ করেন। এ হেন চরিত্র সমাজে, পরিবারে অনেকেরই অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে সন্দেহ নেই। খুন হতে পারেন বলে আশঙ্কাও করেছিলেন তিনি। পুলিশকেও জানিয়েছিলেন সে কথা। নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের বাড়িতে, নিজের ভাইয়ের হাতেই খুন হতে হল শেষ পর্যন্ত।

কান্দিলের ভাই দাবি করেছেন, পরিবারের ‘সম্মান রক্ষা’র জন্যই তিনি খুন করেছেন দিদিকে। কিন্তু পাক পুলিশ এখনও এ নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত নয়। কান্দিলের বাবার অভিযোগ টাকার জন্যই তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। এ ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে আরও কিছু, আরও কেউ আছে কিনা তা কে বলতে পারে!!

আরও খবর...

কান্দিল বালোচের সঙ্গে সেলফি, সাসপেন্ড হলেন মুসলিম ধর্মগুরু

Qandeel Baloch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy