Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হাত ছিল কি! ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে এল মার্কিন ভোটও

বেমক্কা প্রশ্ন ছুড়ে দিল নাছোড়বান্দা মিডিয়া। ঘুরেফিরে আবারও সেই মার্কিন ভোটে রুশ হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ। চূড়ান্ত অস্বস্তিকর! জবাবে তাই একটিও কথা না বলে তড়িঘড়ি চত্বর ছা়ড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাংবাদিকদের ‘ডজ’ করে বসলেন গিয়ে আলাদা একটা ঘরে। আলাদা টেবিলে। ও প্রান্তে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হলো একান্তে। জি-২০ বৈঠকে একজোট বিশ্বনেতারা তখনও জলবায়ু চিন্তায় তুফান তুলছেন অন্য টেবিলে।

সৌজন্য: বৈঠকে ট্রাম্প-পুতিন। হামবুর্গে শুক্রবার। ছবি: এএফপি।

সৌজন্য: বৈঠকে ট্রাম্প-পুতিন। হামবুর্গে শুক্রবার। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
হামবুর্গ শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৯
Share: Save:

গোড়াতেই বিপত্তি! বৈঠক তখনও শুরুই হয়নি। বেমক্কা প্রশ্ন ছুড়ে দিল নাছোড়বান্দা মিডিয়া। ঘুরেফিরে আবারও সেই মার্কিন ভোটে রুশ হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ। চূড়ান্ত অস্বস্তিকর! জবাবে তাই একটিও কথা না বলে তড়িঘড়ি চত্বর ছা়ড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাংবাদিকদের ‘ডজ’ করে বসলেন গিয়ে আলাদা একটা ঘরে। আলাদা টেবিলে। ও প্রান্তে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হলো একান্তে। জি-২০ বৈঠকে একজোট বিশ্বনেতারা তখনও জলবায়ু চিন্তায় তুফান তুলছেন অন্য টেবিলে।

জুনে সরে এসেছিলেন প্যারিস চুক্তি থেকে। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এ বার সেই অস্বস্তিটা এড়াতেই পুতিন-সাক্ষাতের জন্য জলবায়ু আলোচনা এড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে আসার পরে এই প্রথম বার তিনি বৈঠকে বসলেন রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে।

সূত্রের খবর, মোলাকাতের শুরুটা অত্যন্ত মোলায়েম ভাবেই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ঘরে ঢোকার মুখে পুতিনের চোখে চোখ রেখেই তিনি বলেন, ‘‘আপনার সঙ্গে দেখা করে আমি সত্যিই সম্মানিত।’’ পাল্টা সৌজন্য ফিরিয়ে দিয়েছেন রুশ রাষ্ট্রনেতাও। জানিয়েছেন, তিনিও ট্রাম্প-সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। বলেন, ‘‘সব কথা কি আর টেলিফোনে হয়!’’

মার্কিন ভোটে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে চাপানউতোর ছিলই। এর মধ্যে আবার সমস্যা বাড়িয়েছে সিরিয়া। ইতিউতি জটিলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে ইউক্রেন-ইরানে বিদেশ নীতি। সব মিলিয়ে আদৌ বরফ গলবে কি না, ধন্দে দু’পক্ষ। তবু ট্রাম্প-পুতিন একান্ত বৈঠকে কী কথা হয়—মুখিয়ে ছিল দুনিয়া। গত কাল থেকে জল্পনা-ট্রোল শুরু হয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতেও! জার্মানিতে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের বাইরে স্লোগান উঠছে ‘নরকে যাও’। একদফা করমর্দন সেরে আজ এরই মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন ট্রাম্প-পুতিন।

ক্রেমলিন জানিয়েছিল, ৩০ মিনিট কথা হবে দু’জনের। অথচ এ দিন ট্রাম্প-পুতিনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। কী নিয়ে কথা হবে, তা আগাম স্পষ্ট করেনি কোনও পক্ষই। মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, ওবামা আমলের তিক্ততা মুছে ফেলে ট্রাম্প ফের রাশিয়াকে পাশে টানতে মরিয়া। এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসে আসার আগে থেকেই ট্রাম্পের পুতিন-প্রীতি মনে করিয়ে দিতে চাইছেন তাঁরা। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়েও পুতিনকে ‘বড় নেতা’ বলেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পকে ‘সোজাসাপ্টা, খোলা মনের মানুষ’ বলে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন পুতিনও।

ফস্কাল: ভরা হাটে ফের অপদস্থ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে ব্যাপারটা প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসি়ডেন্ট ইমানুয়েল মাক্‌রঁ। আর এ বার ট্রাম্পের বাড়ানো হাত ফিরিয়েই দিলেন পোলিশ ফার্স্ট লেডি আগাতা কর্নহাউসার দুদা। বৃহস্পতিবার পোলান্ডের রাজধানী ওয়ারশ থেকে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওয় স্পষ্ট দেখা গিয়েছে— ফার্স্ট লেডির ‘ফার্স্ট চয়েস’ ফার্স্ট লেডি-ই! তাই আগে মেলানিয়া। তার পরে ট্রাম্পের সঙ্গেও আগাতা হাত মেলালেন বটে, কিন্তু তত ক্ষণে বান ডেকেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেউ বলছেন— গত মার্চে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের করমর্দন প্রস্তাব ফিরিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। এটা তারই কর্মফল। ঘটনাস্থলেই ছিলেন পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দরেজ দুদা। তাঁর দাবি, খামোকাই এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। ট্রাম্প যথারীতি স্পিকটি নট! ছবি: টুইটার ও ফেসবুক।

কিন্তু আজকের বৈঠকে সেই উষ্ণতা আদৌ বজায় থাকবে কি না, জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছিল গত কাল পোলান্ডে ট্রাম্পের ভাষণ। পশ্চিমকে বাঁচানোর ডাক দিতেই পারেন মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট। কিন্তু গত কাল যে ভাবে তিনি ইউক্রেন এবং অন্য দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার পিছনে রাশিয়াকে কাঠগড়ায় তুলেছেন, তা মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি মস্কো।

বৈঠকে এ দিন ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন। আর পুতিনের সঙ্গে তাঁর বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লেভেরভ। দোভাষীর মাধ্যমেই আলোচনা হয় দু’পক্ষে। সূত্রের খবর, ৯ জুলাই থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে আমেরিকা-রাশিয়া। টিলারসনের দাবি, এতেই প্রমাণিত হয় যে সিরিয়া-সঙ্কট সমাধানে একজোট হয়েই এগোতে চাইছে আমেরিকা-রাশিয়া।

ট্রাম্প নিজে অবশ্য পরে শুধু বলেন, ‘‘কয়েকটি বিষয়ে বেশ ভালই কথা হয়েছে আমাদের। আমেরিকার পক্ষে এই আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই মনে করি আমি।’’ বরং পুতিন কিছুটা খোলসা করে জানান, সিরিয়া, ইউক্রেনের পাশাপাশি সন্ত্রাস দমন নিয়েও মার্কিন প্রেসি়ডেন্টের সঙ্গে সবিস্তার কথা হয়েছে তাঁর।

আর মার্কিন ভোটে মস্কোর কলকাঠি নাড়ার প্রসঙ্গ? টিলারসন জানান, বৈঠকের শুরুতেই এ নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। মাঝখানে আরও এক বার। প্রতি বারই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পাল্টা চাপ বাড়িয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের থেকেই প্রমাণ চেয়েছে মস্কো। তবে রুশ বিদেশমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, ট্রাম্প নাকি পুতিনের দাবি মেনে নিয়েছেন, টিলারসনের বিবৃতিতে তার কোনও উল্লেখ নেই।

ধোঁয়াশাটা তাই রয়েই গেল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা নিভৃতে কী কথা হল— স্পষ্ট হলো না তা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE