Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
International

ইসলামাবাদে দাঁড়িয়েই পাকিস্তানকে ঝাঁঝালো আক্রমণ রাজনাথ সিংহের

ইসলামাবাদে দাঁড়িয়েই সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। শুধু সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে নয়, যে সব দেশ তাদের সমর্থন করে, সেই দেশগুলির বিরুদ্ধেও কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এমনই মন্তব্য করলেন রাজনাথ।

সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদ গিয়ে বেনজির অসৌজন্যের মুখে পড়তে হল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ছবি: পিটিআই।

সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদ গিয়ে বেনজির অসৌজন্যের মুখে পড়তে হল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ১৭:০৭
Share: Save:

ইসলামাবাদে দাঁড়িয়েই সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। শুধু সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে নয়, যে সব দেশ তাদের সমর্থন করে, সেই দেশগুলির বিরুদ্ধেও কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এমনই মন্তব্য করলেন রাজনাথ। স্বাভবিক ভাবেই এতে আরও বেড়েচে পরিস্থিতির উত্তাপ। পাকিস্তান টেলিভিশন ইচ্ছাকৃত রাজনাথের ভাষণের সম্প্রচার আটকে দিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খবর আসে। তবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আর বাড়তে দিতে চায়নি। মন্ত্রকের তরফে বিকেলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সব কিছু প্রথা মেনেই হয়েছে। রাজনাথের ভাষণ পাকিস্তান ইচ্ছাকৃত সম্প্রচার করেনি, বিষয়টি এমন নয়।

সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ দিন রাজনাথ সিংহ প্রত্যাশিত ভাবেই সন্ত্রাস‌ের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘‘শুধু সন্ত্রাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই যথেষ্ট নয়, যে সব দেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ রাজনাথের এই মন্তব্যের লক্ষ্য যে প্রধানত পাকিস্তানই, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। ভারতে প্রায় সমস্ত জঙ্গি নাশকতার সঙ্গেই যে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে, তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। মুম্বই জঙ্গি হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদকে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও পাকিস্তানে এখনও তিনি বিনা বাধায় নিজের কার্যকলাপ চালিয়ে যান। কাশ্মীরে সন্ত্রাসের অন্যতম প্রধান কারিগর জৈশ প্রধান মাসুদ আজহার এবং হিজুবল প্রধান সালাউদ্দিনও পাকিস্তানের আশ্রয়ে থেকেই ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। পঠানকোটে জঙ্গি হামলার পর থেকেই এঁদের গ্রেফতারি চেয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ আরও বাড়িয়েছে ভারত। ইসলামাবাদ সে কথায় কান তো দেয়ইনি। উল্টে কাশ্মীরে সাম্প্রতিক অশান্তি বাড়িয়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও উস্কানিমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় রাজনাথ যে সার্ক সম্মেলনে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তা অস্বাভাবিক নয়। সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে যে সব রাষ্ট্র, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দেওয়ার সঙ্গে রাজনাথ বৃহস্পতিবার আরও বলেন, ‘‘জঙ্গিদের শহিদ আখ্যা দিয়ে মহিমান্বিত করা বন্ধ করতে হবে।’’ ৮ জুলাই কাশ্মীরে সেনা অভিযানে নিহত হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানিকে শহিদ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানে বিভিন্ন কট্টরবাদী সংগঠন শোরগোল শুরু করেছে। তার বিরোধিতা করতেই রাজনাথ এই মন্তব্য করেন।

ইসলামাবাদে রাজনাথের ভাষণ শেষ হওয়ার পর খবর আসে, পাকিস্তানের সরকারি টেলিভিশন পিটিভি চূড়ান্ত অসৌজন্য দেখিয়েছে। রাজনাথ সিংহের ভাষণের সময় সার্ক সম্মেলন কক্ষের লাইভ সম্প্রচার পিটিভি বন্ধ করে দিয়েছিল বলে জানা যায়। পাকিস্তানের অন্য কোনও টেলিভিশন চ্যানেল সম্মেলন কক্ষে ছিল না। শুধু সরকারি চ্যানেলকেই সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পিটিভি রাজনাথের ভাষণ না দেখানোয়, পাকিস্তানের কোথাও রাজনাথ সিংহের ভাষণ দেখা বা শোনা যায়নি। ভারতের নিজস্ব টেলিভিশন টিম সম্মেলন স্থলে ছিল। কিন্তু দুপুরে খবর আসে, ভারতীয় মিডিয়াকেও সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী সম্মেলন স্থলে ঢোকার মুখে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যখন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলি খানের সঙ্গে করমর্দন করেন, তখনও ভারতীয় মিডিয়াকে দূরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানা যায়। ভারতীয় আধিকারিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় নাকি পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ভারতীয় টিভি সম্প্রচার দলকে কিছুতেই রাজনাথের ভাষণের রেকর্ডিং-এর জন্য সার্ক সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে দেয়নি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।

সার্ক সম্মেলন স্থল থেকে যে ধরনের খবর আসছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে, তা বেশ নজিরবিহীন। শোনা যায়, এই ঘটনায় অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন রাজনাথ সিংহ। তাই সম্মেলন শেষে পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলি খানের আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে রাজনাথ সিংহ অংশ নেননি বলে খবর আসে। এর পরই সক্রিয় হয় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। টিভি সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে ভারত-পাক তিক্ততা আর বাড়তে দিতে চায়নি নয়াদিল্লি। তাই বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘‘আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ সম্প্রচারিত হতে দেওয়া হয়নি বলে যে খবর রটেছে, তা বিভ্রান্তিকর। সার্ক সম্মেলনে এটাই রীতি যে, আয়োজক দেশের তরফ থেকে যে উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়া হয়, সম্মেলনের সেই অংশটুকুই উন্মুক্ত এবং সংবাদমাধ্যমকে শুধু সেই সময়েই থাকতে দেওয়া হয়। সম্মেলনের বাকি অংশ প্রকাশ্য নয় এবং সে সময় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হয়।’’

রাজনাথ সিংহের ইসলামাবাদ সফরের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন কট্টরবাদী এবং জিহাদি সংগঠন বেশ কয়েক দিন ধরেই সরব ছিল। হাফিজ সইদ, সৈয়দ সালাউদ্দিনদের নেতৃত্বে বুধবারও পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছিল। তাই রাজনাথ সিংহকে ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে রাজনাথ যখন পাকিস্তানে যাবেন, তখন তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পাকিস্তানেরই। পাক সরকার তাই সড়কপথে রাজনাথকে নিয়ে য়াওয়ার ঝুঁকি নেয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE