নির্বাচনী প্রচারে বারবারই বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। এ দিন নিজের এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে বসে একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। যুদ্ধ থামানো নিয়ে দু’পক্ষের সদর্থক আলোচনা হয়েছে। খানিক কাঁধ ঝাঁকিয়ে ট্রাম্প এ-ও বলেছেন, ‘‘আমাদের দু’জনের কত বার কথা হয়েছে, সে সব না হয় নাই বললাম।’’
২০২২ সাল থেকে পুতিনের সঙ্গে কথা হয়নি কোনও আমেরিকান প্রেসিডেন্টের। তাই এত দিন বাদে দুই রাষ্ট্রনেতার সরাসরি কথা হওয়া, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন কূটনীতিকরা। এ-ও শোনা যাচ্ছে, এর পর মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন তাঁরা। তবে কবে বা কোথায়, তা স্পষ্ট নয়। সৌদি আরব কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম বিষয় ছিল, যুদ্ধ বন্ধ। সে হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ হোক বা রাশিয়া-ইউক্রেন। ইতিমধ্যেই গাজ়ার যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। তবে এর পরেই বলেছেন, গাজ়ার দখল নেবে আমেরিকা। প্যালেস্টাইনিদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে সেখানে তিনি তৈরি করবেন ‘রিভিয়েরা অব দ্য মিডলইস্ট’। সেই বিতর্ক মধ্যগগণে থাকতেই ট্রাম্প নতুন করে আবেগঘন বক্তব্য রাখলেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। দুঃখপ্রকাশ করলেন যুদ্ধে নিহত তরুণ প্রাণগুলির জন্য। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘ওই সব নিহত মানুষ... তরুণ, একেবারে অল্পবয়স, সুন্দর মানুষ। তাঁরা আপনাদের সন্তানের মতোই, ২০ লক্ষ যুবা... কোনও কারণ নেই কিন্তু।’’
ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়ালৎজ়। তাঁকে পাশে রেখেই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘বৈঠক, আলোচনা চলছে চলুক। ওরা দেখা করতে চান। প্রতি দিন মানুষ মারা যাচ্ছে। অল্পবয়সি সুদর্শন সব যোদ্ধা খুন হচ্ছেন। একেবারে অল্পবয়সি যুবক, আমার ছেলের মতো। সীমান্তের দু’দিকেই। যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বত্র।’’
ট্রাম্প এ-ও দাবি করেন, পুতিন নিজেও চান ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে। কিছুটা নরম সুরেই তিনি বলেন, ‘‘পুতিন নিজেও এত মৃত্যু নিয়ে বিচলিত।’’ জানান, এই মৃত্যুমিছিল থামাতে চান পুতিনও।
ক্রেমলিনের তরফ থেকে ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে স্পষ্ট কোনও মন্তব্য করা হয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘‘নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন চ্যানেল বিভিন্ন কথা বলছে। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে হয়তো অনেক কথাই জানি না। কিছু হয়তো অজ্ঞাত রয়েছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে, আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না, খবরটি অস্বীকারও করব না।’’
আমেরিকান দৈনিকটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইজ়রায়েল ও ইরান নিয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, ইরানের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র-বর্জন চুক্তি করতে চান এবং যে কোনও ভাবে সমঝোতা করতে চান এ বিষয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা মরতে চায় না। কেউ মরতে চায় না।’’ ট্রাম্পের ব্যাখ্যা, ইরান যদি আমেরিকার সঙ্গে এই চুক্তিবদ্ধ হয়, তা হলে ইজ়রায়েল আর ওদের উপরে বোমা ফেলবে না। তবে ইরানের সঙ্গে ঠিক কী চুক্তি করতে চান তিনি, তাদের কী বলতে চান, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘এক কথায়, আমি ওদের কী বলব, সেটা বাইরে বলা পছন্দ করি না। ...এটা ঠিক নয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)