খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল কানাডা। যদিও সেই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি। তবে কানাডা কীসের ভিত্তিতে এই অভিযোগ তুলছিল, তা নিয়ে এ বার নতুন তথ্য উঠে এল। দাবি করা হচ্ছে, তৃতীয় এক দেশের থেকে সেই তথ্য পেয়েছিল কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রশাসন। যারা ‘খবর’ দিয়েছিল, তারা ভারতের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র বলেই পরিচিত।
খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করেছিল ভারত। তার তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়। এর পরেই নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তৎকালীন ট্রুডো সরকার। চিড় ধরেছিল ভারত-কানাডা সম্পর্কেও। বর্তমানে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নের আমলে আবার দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা কাটানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর একটি শাখা ‘ব্লুমবার্গ অরিজিনাল্স’ একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। ‘ইনসাইড দ্য ডেথ্স দ্যাট রক্ড ইন্ডিয়া’স রিলেশন্স উইথ দ্য ওয়েস্ট’ নামে ওই তথ্যচিত্রটিতে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও উল্লেখ রয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, ওই তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে, ব্রিটিশ গোয়েন্দারাই নিজ্জর হত্যকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য দিয়েছিল কানাডাকে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, এক ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে বেশ কয়েকটি ফোনকল। ওই ফোনকলগুলিতে তিনটি ‘টার্গেট’ নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল। কোন গোয়েন্দা সংস্থা, তা নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি ওই রিপোর্টে। তবে পিটিআই অনুসারে, ওই ফোনকলগুলি ব্রিটেনের সরকারি যোগাযোগব্যবস্থার সদর দফতরেরই নজরে এসেছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বস্তুত, আন্তর্জাতিক স্তরে গোয়েন্দা তথ্যের লেনদেনের জন্য ব্রিটেন এবং আরও চার দেশের মধ্যে ‘পঞ্চ চক্ষু’ (ফাইভ আইজ়) চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজ়িল্যান্ড প্রয়োজন মতো নিজেদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান করে। প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ‘পঞ্চ চক্ষু’ চুক্তির আওতায় নিজ্জর সংক্রান্ত তথ্য কানাডাকে পাঠানো হয়েছিল।
তথ্যচিত্রে দাবি করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে ব্রিটেন কিছু ‘প্রাসঙ্গিক তথ্য’ পায়। তার জেরেই নিজ্জর হত্যার তদন্তে ‘অগ্রগতি’ হয়। সেখানে আরও দাবি করা হচ্ছে, ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্য দেওয়ার সময়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কানাডার কর্তৃপক্ষকে হাতে হাতে এই সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল। এই তথ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ব্যবহার ছিল না। কানাডার লন্ডন-অনুমোদিত হাতে গোনা কয়েকজন কর্তাই এই গোয়ন্দা তথ্য জানতে পারতেন বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ওই তথ্যচিত্রেই দাবি করা হচ্ছে, “ফাইলটি (যেটি কানাডাকে দেওয়া হয়েছিল) ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসা কথোপকথনের সংক্ষিপ্তসার। সেখানে যাঁদের কথোপকথন শোনা গিয়েছে, তাঁরা ভারত সরকারের হয়ে কাজ করছিলেন বলে অনুমান করেন বিশ্লেষকেরা।” তবে এ ক্ষেত্রে কোন দেশের বিশ্লেষকেরা এটি অনুমান করেছেন, তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন:
সেখানে আরও দাবি করা হচ্ছে, “তাঁরা (যাঁদের কথোপকথন শোনা গিয়েছে) তিন জন সম্ভাব্য ‘টার্গেট’ নিয়ে আলোচনা করছিলেন: নিজ্জর, (অবতার সিংহ) খান্ডা এবং (গুরপতবন্ত সিংহ) পন্নুন। পরে নিজ্জরকে কী ভাবে সফল ভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।” বস্তুত, ব্রিটিশ খলিস্তানি নেতা খান্ডা ২০২৩ সালের জুন মাসে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। কিছু ব্রিটিশ গোষ্ঠী তাঁর মৃত্যু ঘিরেও প্রশ্ন তুলেছিল। যদিও পরে ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, খান্ডার মৃত্যুতে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি।