বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় ঘোষণার দিন জানানো হবে আগামী সপ্তাহেই। আগামী বৃহস্পতিবার হাসিনা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী’ মামলার রায়ের দিন জানানো হবে। ওই দিনই ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। তার আগে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে পুলিশও। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। বাংলাদেশের কিছু সংবাদপত্রেও এমনটা জানানো হয়েছে। যদিও এই প্রস্তুতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা সরকারি ভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
পিটিআই অনুসারে বাংলাদেশের কিছু সংবাদপত্র ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে পুলিশের। শনিবার প্রায় ৭০০০ পুলিশকর্মীকে নিয়ে ঢাকার ১৪২টি এলাকার মহড়া চলেছে। মহড়া চলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবনের সামনেও। প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী সপ্তাহে কোনও গোলমালের পরিস্থিতি তৈরি হলে, তা প্রতিহত করতেই এই প্রস্তুতি চলছে ঢাকা মহানগর পুলিশের।
ওই প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশি উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জেরে আগামী ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে ঢাকাবাসীর একাংশের। বস্তুত, বর্তমানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আগামী বছর বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন রয়েছে। সেখানেও যে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না, তারও আভাস মিলেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনও দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকার অর্থ সব কিছুই স্থগিত থাকবে।
এ অবস্থায় আগামী বৃহস্পতিবার হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের দিন ঘোষণার সময়ে একই দিনে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দল। কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গির কবির নানক। পিটিআই অনুসারে, হাসিনার দলের ওই নেতা এখন ভারতে রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ঝটিকা কর্মসূচি হতে দেখা গিয়েছে। একই সঙ্গে চলেছে ধরপাকড়ও। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, রবিবারও ঢাকা পুলিশ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের ২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
তবে ঢাকায় এই পুলিশি প্রস্তুতির সঙ্গে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার দিন বা আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচির কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা সরকারি ভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে স্টিলের হেলমেট এবং বিশেষ বর্ম গায়ে চাপিয়ে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নজরদারি চালাতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের দাবি, এটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মিত প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। পুলিশের এক মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের কথায়, “যে কোনও ধরনের জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য মহড়া দেওয়া আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যেই পড়ে।” শনিবারের মহড়ায় বিভিন্ন পদমর্যাদার আধিকারিকেরা অংশগ্রহণ করেছিলেন বলেও জানান তিনি। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, শুধু পুলিশি সমন্বয় বা প্রস্তুতির জন্যই এই মহড়া নয়। আগামী ১৩ নভেম্বরের আগে ঢাকায় কোনও অশান্তির সম্ভাবনা দূর করার জন্যও এই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘মানবজমিন’কে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম জানান, ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মী কোনও ধরনের কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তারা আগেও অনেক ধরনের হুমকি দিয়েছে, এখনও দিয়ে যাচ্ছে। ১৩ই নভেম্বর ঘিরে তারা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে আলোচনায় আসতে যাচ্ছে। আমরা কোনও ভাবেই তাদের এসব হুমকি-ধমকি ভয় পাই না। তবে আমরা সতর্ক আছি। কোনও ধরনের কিছু করতে চাইলে পুলিশ কঠোর হাতে তাদের প্রতিহত করবে।”