গত দেড় মাসে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে যে, আর সেই সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা সম্ভব হচ্ছে না ভারতের পক্ষে। বুচার গণহত্যার পরে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের ভোটাভুটিতে রাশিয়ার পক্ষে ভোট না দেওয়ার ঘটনা সেটাই প্রমাণ করছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
অথচ গত দেড় মাস আমেরিকা এবং পশ্চিমের অন্য দেশগুলির শত অনুরোধেও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবে ভোট দেয়নি নয়াদিল্লি। যুদ্ধের মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে সস্তায় অশোধিত তেল কেনা নিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ভোটে ভারত এই প্রথম বার কড়া বার্তা দিল রাশিয়াকে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না সাউথ ব্লকের। রাশিয়া ভারতের বিশেষ কৌশলগত মিত্র এ কথা ঠিক। এটাও ঠিক যে, দেশের সত্তর শতাংশের বেশি যুদ্ধ সরঞ্জাম আমদানি হয় সে দেশ থেকেই। বিদেশ মন্ত্রক ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, সে কারণেই গত দেড় মাস ধরে রাশিয়ার পাশ থেকে সরে যায়নি ভারত। আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যখন সম্মিলিত ভাবে এমনকি ভারতে এসে বৈঠক করেও প্রবল চাপ তৈরি করেছে, তখনও বিদেশমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাশিয়া ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার রাষ্ট্র। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও স্থিতিশীল রাখা ভারতের অগ্রাধিকার।
কিন্তু হিংসা এখন এমন পর্যায়ে যে, বৃহস্পতিবারও যদি ভারত রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিত, তাহলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কার্যত একঘরে হতে হত নয়াদিল্লিকে। ইউক্রেনের বুচায় নিরীহ নাগরিকদের মেরে আধপোড়া অবস্থায় স্তূপাকারে রাস্তার দু’পাশে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জে এবং লোকসভায় বুচার গণহত্যার কড়া নিন্দা করে নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্তের দাবি করেছে ভারতও৷ এই হিংসার পক্ষে থাকা সম্ভব ছিল না ভারতের পক্ষে। এ কথাও ভারতকে বিবেচনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে যে, ভূকৌশলগত পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে, তাতে আজ না হলেও কাল জ্বালানি এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের জন্য বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে হবে নয়াদিল্লিকে।