Advertisement
E-Paper

মানুষ বাঁচাতে খাঁচাতেই গুলি পশুরাজ দম্পতিকে

ছুটির সকাল। বাচ্চাদের নিয়ে তাই অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন আফ্রিকান সিংহ-সিংহীর খাঁচার সামনে। কখন ভিড় ঠেলে গুটিগুটি পায়ে পরিখা পেরিয়ে বছর কুড়ির যুবক এগিয়ে গিয়েছেন, খেয়াল করেননি কেউই। যত ক্ষণে সবার চোখে পড়ল, অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। খাঁচার ভিতরে তখন সিংহ-মানুষে টানাটানি। শনিবারের ঘটনাস্থল চিলের সান্তিয়াগোর মেট্রোপলিটান চিড়িয়াখানা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:৩৮
আত্মহত্যা করতে চেয়ে সিংহের ডেরায়। সান্তিয়াগো চিড়িয়াখানায়। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

আত্মহত্যা করতে চেয়ে সিংহের ডেরায়। সান্তিয়াগো চিড়িয়াখানায়। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

ছুটির সকাল। বাচ্চাদের নিয়ে তাই অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন আফ্রিকান সিংহ-সিংহীর খাঁচার সামনে। কখন ভিড় ঠেলে গুটিগুটি পায়ে পরিখা পেরিয়ে বছর কুড়ির যুবক এগিয়ে গিয়েছেন, খেয়াল করেননি কেউই। যত ক্ষণে সবার চোখে পড়ল, অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।

খাঁচার ভিতরে তখন সিংহ-মানুষে টানাটানি। শনিবারের ঘটনাস্থল চিলের সান্তিয়াগোর মেট্রোপলিটান চিড়িয়াখানা। সেই বীভৎস দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছেন সবাই। বাচ্চাদের চোখ ঢেকে দিয়েছেন বাবা-মায়েরা। তাঁরা দেখছেন, ফ্রাঙ্কো লুই ফেরাদা রোমান নামে যুবকটি নগ্ন অবস্থায় সিংহের গলা জড়িয়ে কার্যত ঝুলছেন। দেখে মনে হচ্ছে, সিংহকে যেন আদর করছেন! কিন্তু সেকেন্ডের তফাতে ভুল ভাঙে। সিংহ-সিংহী তাকে শুইয়ে ফেলে এক রকম খুবলে খাচ্ছে বলা চলে। পরিখার বাইরে সে দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করছে লোকজন।

সিংহের খাঁচায় মানুষ ঢুকে পড়ার খবর পেতেই নড়েচ়ড়ে বসেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে লোকটির প্রাণরক্ষার দিকেই। তাঁকে বাঁচাতে পর পর দু’টি গুলি করা হয় সিংহ-সিংহীকে লক্ষ্য করে। তার পরে হুঙ্কার দিয়ে স্থির হয়ে যায় তারা। ভয়ঙ্কর জখম যুবক ফ্রাঙ্কোকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। প্রথমে চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন বাঁচানোই যাবে না। তাঁর হৃৎপিণ্ড কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল বলে চিকিৎসকদের দাবি। তিনি এখনও বিপন্মুক্ত নন।

কিন্তু ওই যুবক কেন জেনেশুনে ঢুকেছিলেন সিংহের খাঁচায়? কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ফ্রাঙ্কো অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। টিকিট কেটে সোজা চলে যান সিংহের খাঁচার দিকে। তার পরে জামাকাপড় খুলে রেখে নগ্ন অবস্থায় সোজা ঝাঁপ দেন সিংহের খাঁচায়। যিশুখ্রিস্টের নাম নিয়ে চেঁচাচ্ছিলেন তিনি। পরে তাঁর পোশাকের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় এক টুকরো কাগজ। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই সিংহের কাছে চলে যান ওই যুবক। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আলেজান্দ্রা মন্তালাভা বলছেন, সিংহ-সিংহীকে মেরে ফেলার জন্য অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের কাছে ঘুমপাড়ানি গুলি ছিল না। চিড়িয়াখানার নিয়ম অনুযায়ী, মানুষের জীবনই সব চেয়ে দামি। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ পশুপ্রেমীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘ওই লোকটি নিয়ম না মেনে সিংহের খাঁচায় ঢুকে পড়ল, আর নিয়মের দোহাই দিয়ে সিংহদেরই মেরে ফেলা হবে?’’

বস্তুত যাঁরা এই দৃশ্য দেখেছেন, তাঁদের অনেকেও এই প্রশ্ন তুলেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী সিন্থিয়া ভাস্কেজ বলেছেন, ‘‘নিরাপত্তা কর্মীরা অনেক দেরিতে সক্রিয় হন। খাঁচায় ঢোকামাত্র কিন্তু সিংহ লোকটির উপরে চড়াও হয়নি। রক্ষীরা প্রথমে জল ছোড়েন। ভিড় সরিয়ে পরে গুলি ছোড়া হয়।’’ অনেকে সিংহ-মানুষে লড়াইয়ের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে ছড়িয়ে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সান্তিয়াগোর চিড়িয়াখানার এই ঘটনা উস্কে দিচ্ছে ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারির স্মৃতি। ওই দিন কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিবার গলায় মালা পরাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন জয়প্রকাশ তিওয়ারি নামে বছর পঁচিশের এক যুবক। মাত্র দু’বছর আগে দিল্লির ন্যাশনাল জুলজিক্যাল পার্কে বিজয় নামে একটি সাদা বাঘের মুখে পড়ে প্রাণ হারান মকসুদ বলে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। সে বারও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের কাছে ঘুমপাড়ানি গুলি ছিল না। কিন্তু এক জনকে বাঁচাতে গিয়ে আরও দু’টো প্রাণ কেড়ে নেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত, প্রশ্নটা রয়েই গেল।

Santiago Zoo Santiago lions Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy