E-Paper

তীব্র ভূমিকম্পে তাইওয়ানে মৃত্যু ৯ জনের, জখম ৯০০

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৪
ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে চলছে খোঁজ।

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে চলছে খোঁজ। ছবি: রয়টার্স।

সকাল ৮টাও বাজেনি। সদ্য ঘুম থেকে উঠে স্কুল, কলেজ আর অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল বাড়িতে বাড়িতে। আচমকাই শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ানের বিস্তীর্ণ এলাকা। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৪। আজ সকালের সেই তীব্র কম্পনে জেরে তাইওয়ানে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ জনের। আহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। রাতের দিকে প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়, ভূমিকম্পের পর থেকে ৫০ জন যাত্রী সমেত খোঁজ নেই একটা আস্ত মিনিবাসের। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দু’টি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্র এমনিতেই কম্পন-প্রবণ। তবে গত ২৫ বছরে এত ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি তাইওয়ান। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে এমনই জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তাইওয়ানের একটা বড় অংশ। এ দেশের ইতিহাসে সেটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। সে বার প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ২,৪০০ জন বাসিন্দা।

আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের তরফে জানানে হয়েছে, আজকের কম্পনের উৎসস্থল ছিল হুয়ালিয়েন শহরের ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৪.৮ কিলোমিটার গভীরে। আজকের কম্পনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাহাড়ে ঘেরা এই শহরটিই। ভূমিকম্পের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাইওয়ানে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। একই সতর্বার্তা জারি করা হয় জাপান আর ফিলিপিন্সে। তবে স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পরে এই তিন দেশের উপর থেকেই সুনামি সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। ‘প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার’-এর তরফে জানানো হয়, ‘সুনামির ঝুঁকি মোটামুটি কেটে গিয়েছে’।

কম্পন-প্রবণ দেশ বলেই এখানকার বহুতল এবং বিভিন্ন ভবনগুলি তৈরি করা হয় যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে, বিশেষজ্ঞদের নিয়ম-রীতি মেনে। সেই সঙ্গে চলে জনসচেতনতা প্রচারও। আর সে জন্যই আজ বিপুল পরিমাণ প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আজকের কম্পনের ফলে গোটা দেশের বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ধসে পড়েছে বিভিন্ন রেললাইন। ফলে কোথায় কত মানুষ আটকে পড়েছেন তার ঠিকঠাক হিসেব রাত পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি সরকার।

দেশের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ভাবী প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েই হুয়ালিয়েন শহর পরিদর্শনে যান। সাংবাদিকদের তিনি পরে বলেছেন, ‘‘কোথায় কত মানুষ আটকে রয়েছেন তার হিসেবটা আগে করা প্রয়োজন। কারণ যত দ্রুত সেটা সেটা জানা যাবে, তত তাড়াতাড়ি আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’’ টিভি চ্যানেল আর সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে হুয়ালিয়েনের একটি হেলে পড়া বহুতলের ছবি আর ভিডিয়ো সকাল থেকেই ভাইরাল। বহুতলটি বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়লেও সেখানকার সব মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে এনেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সেই বহুতলটিও দেখতে যান ভাইস প্রেসিডেন্ট। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করেন উদ্ধারকাজে। হুয়ালিয়েনের মতো না হলেও কম্পনে বিধ্বস্ত রাজধানী শহর তাইপেই-ও। সেখানকার একটি ছাপাখানার গুদামঘর বিপজ্জনক ভাবে ধসে পড়েছিল। তবে তার মধ্যে থাকা অন্তত ৫০ জনকে নিরাপদে বার করে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র।

তাইপেইয়ের বাসিন্দা, চাং পদবিধারী এক মহিলা এক বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা খুবই ভাগ্যবান ছিলাম। আমাদের বাড়ির বহু জিনিস ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমরা অক্ষত রয়েছি।’’

স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের থেকে জানা গিয়েছে, কম্পনের সময়ে পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল সাত জনের একটি দল। পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সেই দলের তিন সদস্যের। একটি খনিতে মৃত্যু হয়েছে এক শ্রমিকের। পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে একটি গাড়ি আর ট্রাকে ধাক্কা দিলে সেখানে মৃত্যু হয় দুই চালকের। বাকি হতাহতের নাম-পরিচয় জানায়নি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।

আজকের কম্পনের তীব্রটা এতটাই ছিল যে, তা টের পাওয়া গিয়েছে পূর্ব চিনের সিচুয়ান প্রদেশ থেকেও। কেঁপে উঠেছে পার্শ্ববর্তী হংকংয়ের কিছু এলাকাও। আজ সকালে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, এই বিপর্যয়ে তাইওয়ানকে যাবতীয় সহায়তা করতে তারা প্রস্তুত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Taiwan earthquake

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy