নোটিস দিক, ফিরে মামলার মোকাবিলা করব, বার্তা হাসিনার

তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলির নোটিস তাঁকে দিলে তিনি দেশে ফিরে মোকাবিলা করবেন— সমাজমাধ্যমে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশের সামনে অডিয়ো বক্তৃতায় সোমবার এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। ওই বক্তৃতায় অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে রীতিমতো তুলোধোনা করেছেন তিনি। তাঁকে ‘অবৈধ দখলদার’ থেকে ‘প্রতারক’ পর্যন্ত বলেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী।

গত ৫ অগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের জেরে বাংলাদেশে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হয়েছিল হাসিনাকে। তার পর থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন। গত ১১ মাসে বহু বার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের অডিয়ো-বার্তা দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই আদালত অবমাননা মামলায় বাংলাদেশের আদালত তাঁকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আজ হাসিনা বলেছেন, ‘‘জঙ্গিদের দিয়ে ইউনূস ক্ষমতা দখল করেছে। আমরা তো বলি কোথায় আদালত! ওই বিচারের কোনও বৈধতা আছে নাকি। বেআইনি আদালতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মামলার নোটিস দিক আমি অবশ্যই আসব। এই সব মামলার মোকাবিলা করব। দেখব কত ধানে কত চাল। জনগণই আমার শক্তি, আমার তো আর বিদেশি প্রভু নেই।’’

ইউনূস বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের নেত্রী বলেন, ‘‘দেশে মেয়েদের কোনও সম্মান নেই, নিরাপত্তা নেই। দিনমজুর, রিকশওয়ালারা কাজ পান না। শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে। সর্বত্র এক অরাজক পরিস্থিতি।’’ ইউনূসের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ইউনূস তো নিজে একটা চোর। নিজের কোম্পানির শ্রমিকদের টাকা চুরি করেছে। শ্রমিকরা মামলা করেছিল, সেই মামলায় ছ’মাসের সাজা হয়েছিল। এখন ক্ষমতা দখল করে টাকা পাচার করছে।’’

দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজআলম সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধও ছিল পরিকল্পিত। এ দিন তার তীব্র সমালোচনা করে হাসিনা বলেন, ‘‘কে বলেছে মুক্তিযুদ্ধ পরিকল্পিত। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জঙ্গিদের নিয়ে ক্ষমতা দখলের তুলনা হয় না। মাত্রা জ্ঞান যেন থাকে। এক মাঘেশীত যায় না।’’

দেশের বাইরে থাকার জন্য তিনি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন, তা-ও জানিয়েছে মুজিবুর রহমানের কন্যা। বলেছেন, ‘‘দেশের বাইরে আছি বলে কথা বলতে পারছি। ২০০৭ সালে জোর করে দেশে ফিরেছিলাম, তার পরে বন্দি করে রেখেছিল, কথাও বলতে দেয়নি। এ বার সে জন্য বাইরে থেকে সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারছি।’’

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম নিষিদ্ধ করে এবং নির্বাচনের লড়ার বৈধতা বাতিল করে দিয়েছে ইউনূস প্রশাসন। কিন্তু ভোট নিয়ে সংশয় কাটছে না। আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জ়া ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, মা-মেয়েরা নিরাপত্তা হারাবেন, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। তাই একটা নির্বাচিত সরকার জরুরি। যে সরকার জনতার কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।’’ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র নেতারা বলছেন, আগে বিচার, সংস্কার তার পরে নির্বাচন। আজ সেই দাবি সপাটে উড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি-র আর এক নেতা আমীর খুসরু। তিনি বলেন, ‘‘বিচার, সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, তার মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ, মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তারা আইনতৈরি করবে।’’

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। যে হেতু আরও সময় আছে পাঁচ-ছয় মাসের মতো, আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছি।’’