Advertisement
E-Paper

মেয়ে কোলে কলম বিক্রি, এল আশি হাজার ডলার

শহরের রাস্তায় কলম বিক্রি করে বেড়াচ্ছে লোকটা। গায়ে মলিন ফুলহাতা নীল-ধূসর টিশার্ট। আর কোলে একটি বছর চারেকের ফুটফুটে শিশুকন্যা। দেখেই বোঝা যায়, পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর ক্লান্তিতে লোকটার কাঁধেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট মেয়েটা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০০:২১
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে বাবা-মেয়ের এই ছবিটিই। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে বাবা-মেয়ের এই ছবিটিই। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

শহরের রাস্তায় কলম বিক্রি করে বেড়াচ্ছে লোকটা। গায়ে মলিন ফুলহাতা নীল-ধূসর টিশার্ট। আর কোলে একটি বছর চারেকের ফুটফুটে শিশুকন্যা। দেখেই বোঝা যায়, পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর ক্লান্তিতে লোকটার কাঁধেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট মেয়েটা। লোকটার চোখেমুখেও ক্লান্তির ছাপ। তার এক হাতে ধরা গুটিকয়েক কলম। অন্য হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ঘুমন্ত শিশুটিকে। আর কলমগুলির দিকে লোকটা এমন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে, যেন সেগুলিই তাঁর জীবনের শেষ সম্বল।

গত সপ্তাহে টুইটারে এমনই একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন অসলোর এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মচারী গিসুর সিমোনারসন। সঙ্গে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা ক্যাপশন— সিরিয়ার বাসিন্দা এক বাবা বেইরুটের রাস্তায় কলম বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। আর গিসুরের ওই পোস্টটি প্রায় ৩৫ হাজার বার রিটুইট করা হয়েছে। ছবিটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, অনেকেই ওই কলম বিক্রেতাকে সাহায্য করতে চান।

তবে ছবিটি কে বা কারা তুলেছিলেন, সে ব্যাপারে প্রায় কিছুই জানতেন না গিসুর। ফলে অনেকেই তাঁর কাছে ওই ছবির কলম বিক্রেতার পরিচয় জানতে চাওয়ায় মুশকিলে পড়েন তিনি। তাই এ বারও দ্বারস্থ হন সোশ্যাল মিডিয়ার। সঙ্গে সঙ্গেই গিসুরের মুশকিল আসানে এগিয়ে আসেন বেশ কয়েক জন মানবাধিকার কর্মীও। সব্বাই মিলে ওই পেন বিক্রেতাকে সাহায্য করার অভিযানে নেমে পড়েন।


এত মানুষের সাহায্যে অভিভূত আব্দুল।

শেষে দু’দিন পর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই খুঁজে পাওয়া যায় কলম বিক্রেতা ওই ‘বাবা’-র। আর যিনি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন, তিনি ক্যারোল মালৌফ।

কে এই কলম বিক্রেতা?

গিসুরই শোনালেন সেই গল্প। ছবিতে যাঁকে বেইরুটের রাস্তায় কলম ফেরি করে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে, তিনি দুই সন্তানের বাবা আব্দুল। আর কোলে ঘুমন্ত শিশু তাঁরই বছর চারেকের মেয়ে রিম। মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কলম বিক্রি করেই কোনও রকমে টেনেটুনে সংসার চালান।

তবে চার বছর আগেও ৩৫ বছর বয়সি আব্দুলের জীবনটা এ রকম ছিল না। সিরিয়ায় থাকতেন তিনি। কাজ করতেন একটি চকোলেট কারখানায়। স্ত্রী , মেয়ে রিম এবং ছেলে আবদেলিল্লাহকে নিয়ে সুখেই কাটছিল দিন। কিন্তু বাদ সাধল সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষ। বন্ধ হয়ে গেল সেই কারখানাও। পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করতে। ইচ্ছে ছিল, কোনও ভাবে মিশর পৌঁছনো। কিন্তু স্ত্রী জোরাজুরি করেছিলেন সিরিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য। আব্দুল রাজি না হওয়ায় স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এর পর আব্দুলের কয়েক জন বন্ধু মিলে তাঁকে লেবাননে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেই মতোই তিনি চলে আসেন বেইরুটে। সেখানেও চকোলেট কারখানায় কাজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনও কারখানায় তাঁকে কাজ দেওয়া হয়নি। ফলে কোনও উপায় না দেখেই তিনি রাস্তাঘাটে কলম ফেরি করে বেড়াতে শুরু করেন। এই ভাবেই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু ক্যামেরায় তাঁর এই জীবন যুদ্ধের ছবি ফ্রেমবন্দি হওয়ার পরই প্রচারের মুখে চলে আসেন তিনি।

গিসুর জানিয়েছেন, ক্যারোল যখন আব্দুলদের খোঁজ পেয়েছিলেন, তখন ক্যারোলের সঙ্গে গল্প জুড়েছিলেন ছটফটে স্বভাবের ছোট্ট রিম। ক্যারোলের কাছে নিজস্বী তোলার জন্য আব্দারও করে সে। সেই নিজস্বীও টুইটারে পোস্ট করেছিলেন ক্যারোল।

আর আব্দুলকে খুঁজে পাওয়ার পরই গিসুরদের অভিযান যেন অনেকটাই প্রাণ পায়। ৩০ মিনিটের মধ্যে তিন জনের ওই শরণার্থী পরিবারটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অনেকেই। গিসুরদের লক্ষ্য ছিল, পাঁচ হাজার ডলার তোলা। তিন ঘণ্টার মধ্যেই তা জমা পড়ে। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তহবিলে জমা পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার ডলার।

আর এই সাহায্যের কথা শুনে কী বলছেন আব্দুল?

সারা বিশ্বে তাঁর ছবি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে, এটা শুনেই অভিভূত হয়েছিলেন তিনি। আর ৮০ হাজার ডলারের কথা শুনে তো প্রায় শিশুর মতোই আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন ছোট্ট রিমের বাবা। এখন অত ডলার নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন তিনি। ছেলে-মেয়েকে ভাল স্কুলে পাঠানোর স্বপ্ন এ বার হয়তো সফল হতে চলেছে।

আর হ্যাঁ, আব্দুল কিন্তু ভোলেননি নিজের দেশের মানুষগুলির কথা। তাই ওই অর্থ দিয়ে আব্দুলও সাহায্য করতে চান সিরিয়ার শরণার্থীদের।

Social media Syrian refugee norway twitter abpnewsletters MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy