স্ত্রী নবরূপের সঙ্গে অভিনব চারি। ছবি: নবরূপ কে চারির ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত।
মনের মধ্যে কতটা ঘৃণা পুষে রাখলে এমন কাণ্ড ঘটানো সম্ভব? এখনও এই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন অভিনব চারি। শ্রীলঙ্কায় জঙ্গিহানা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে ফিরেছেন তিনি। এর আগে ২৬/১১ মুম্বই হামলার সাক্ষীও ছিলেন। দু’-দু’বার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখার সেই অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন প্রবাসী ভারতীয় অভিনব।
অভিনবের বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, কাজকর্ম— সবই দুবাইতে। তাঁর স্ত্রী নবরূপ কে চারিও দুবাইতে বড় হয়েছেন। ব্যবসার কাজে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা গিয়েছিলেন অভিনব। ইস্টার উপলক্ষে ছুটি থাকায় স্ত্রী নবরূপকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যে তাঁদের এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অভিনব জানান, শ্রীলঙ্কায় সিনেমন হোটেলে ছিলেন তাঁরা। ইস্টারের সকালে স্থানীয় একটি গির্জার প্রার্থনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থনা চলাকালীন মাঝপথেই তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলেন যাজক। কলম্বোর বেশ কিছু গির্জায় নাশকতামূলক হামলা হয়েছে, তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সকলকে চলে যেতে অনুরোধ করেন তিনি।
অভিনব চারি-র পোস্ট।ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে সংগৃহীত।
আরও পড়ুন: বাড়িতে ঢুকে অভিযান, শ্রীলঙ্কা বিস্ফোরণের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বাবা ও দুই ছেলে নিহত
কিন্তু তখনও পর্যন্ত হামলার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেননি বলে জানান অভিনব। তিনি লেখেন, ‘গির্জা থেকে বেরিয়ে খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তাই রেস্তরাঁর খোঁজ করছিলেন। কিন্তু, রাস্তায় কোনও একটা গোলমাল বেধেছে দেখে হোটেলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। হোটেলের রেস্তরাঁতেই ব্রেকফাস্ট সারবেন বলে স্থির করেন তাঁরা। কিন্তু, সেখানে পৌঁছে দেখেন, হোটেলের লনে জড়ো হয়েছেন বহু মানুষ। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে সকলকে রুমের বাইরে বার করে আনা হয়েছে বলে ভেবে বসেন তাঁরা। কিন্তু, কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভুল ভাঙে তাঁদের। জানতে পারেন, রেস্তরাঁর বাফের লাইনে সকলে যখন খাবার নিতে ব্যস্ত ছিল, সেইসময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এক জঙ্গি।
এর আগে ছাত্রাবস্থায় মুম্বইয়ে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন অভিনব। সেই সময় চোখের সামনে ২৬/১১ হামলা দেখেছিলেন বলে নিজের পোস্টে লিখেছেন তিনি। সেইসময় টানা চার-পাঁচদিন খুবই অসহায় বোধ করেছিলেন। দ্বিতীয়বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে তাই ধাক্কা খেয়েছিলেন। প্রথম বার চোখের সামনে মৃত্যুমিছিল দেখে একেবারে ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী নবরূপ। হোটেলের ঘরের জানলা দিয়ে একের পর এক দেহ বেরিয়ে যেতে দেখে তড়িঘড়ি ফ্লাইট বুক করেন তাঁরা। দেশে ফিরে আসেন। ওই জঙ্গিহানার পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও পুরোপুরি ধাতস্ত হতে পারেননি তাঁরা।
আরও পড়ুন: ভুল ধর্মশিক্ষা পেয়েছিল, মারা যাওয়ায় খুশি, বললেন শ্রীলঙ্কায় নাশকতার মূল চক্রীর বোন
অভিনব বলেন, ‘‘জীবনে দু’বার বিদেশ গিয়েছি, আর প্রতিবারই এরকম কিছু ঘটেছে। এখন দেশের বাইরে পা রাখতে ভয় হচ্ছে।’’ তবে জঙ্গিহানার ভয়াবহ রূপ দেখার পরই প্রতিশোধ নয়, এখনও শান্তিতেই আস্থা রয়েছে ওই দম্পতির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy