Advertisement
E-Paper

দেহগুলোকে চিনতে এখন জুতোই সম্বল

লাশকাটা ঘরের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলেন চিকিৎসক। পায়ে সাদা জুতো, গায়ে হাসপাতালের পোশাক আর মাথায় মিহি সুতোর তৈরি সাদা জালের টুপি। সামনের টেবিলে রাখা ল্যাপটপ খুলে বসলেন।

সংবাদ সংস্থা 

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২৯
ধারাবাহিক বিস্ফোরণে রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কা। ছবি: এএফপি।

ধারাবাহিক বিস্ফোরণে রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কা। ছবি: এএফপি।

লাশকাটা ঘরের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলেন চিকিৎসক। পায়ে সাদা জুতো, গায়ে হাসপাতালের পোশাক আর মাথায় মিহি সুতোর তৈরি সাদা জালের টুপি। সামনের টেবিলে রাখা ল্যাপটপ খুলে বসলেন। তাঁকে ঘিরে তখন ছোটখাটো একটা ভিড় জমে উঠেছে মর্গের সামনে। সকলের দৃষ্টি কম্পিউটারের পর্দায়। ডাক্তারের আঙুলের ছোঁয়ায় ল্যাপটপে এক একটা করে মুখ ভেসে উঠছে। তবে সেগুলো সব মুখ বললে ভুল হবে। দলা পাকানো দেহ, তাল তাল রক্ত মাখা মাংসপিণ্ডের মাঝে কে যে কার প্রিয়জন, তা চেনা দুষ্কর। ‘‘তবু হাল ছাড়া যায় না। কোনও ভাবে যদি ঘরে না-ফেরা মানুষটাকে শেষ বার চিনে নেওয়া যায়। অন্তত শেষকৃত্যটা যদি...’’ বলতে বলতে গলা বুজে আসছিল এমএন জেনসনের।

একটু সরে এসে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন। দু’বাহুর মাঝে চেপে ধরলেন মাথাটা। যন্ত্রণায় কুঁচকে যাওয়া দু’চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল গালে। রবিবার কলম্বোয় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর থেকে খোঁজ মিলছে না জেনসনের দাদুর। সে দিন সেন্ট অ্যান্টনিস চার্চে ইস্টারের প্রার্থনায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। বিস্ফোরণের খবর পাওয়া ইস্তক সরকারি হাসপাতালের দোরে দোরে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছুটেছেন জেনসন। হদিস মেলেনি। এ দিকে মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা তিনশো ছাড়িয়েছে। আজ তাই শেষ আশায় মর্গে এসেছেন মা ও ছেলে।

বিস্ফোরণে এখনও যাঁরা নিখোঁজ, তাঁদের স্বজনেরা ভিড় করেছেন কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালে। কারণ, শনাক্ত না-হওয়া দেহগুলি রয়েছে এই মর্গেই। বিস্ফোরণে হত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করতে সরকারের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে কলম্বোর ক্যাথলিক সংগঠনগুলিও। সোমবার রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলিতে ঘুরে দেখেছেন কলম্বোর আর্চবিশপ শেলটন ডায়াস। তিনি বললেন, ‘‘এক একটা দেহ এতটাই বিকৃত যে, চেনা যাচ্ছিল না। জুতোটুকু ছাড়া বাচ্চাগুলোর নরম শরীরের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সন্ত্রাস এমনই নির্মম।’’

জেনসনের দাদুর হদিস মেলেনি। তবে ন্যাশনাল হাসপাতালের মর্গে ছত্রিশের যুবক আর্শাদ ইয়াহেয়ার ছিন্নভিন্ন মৃতদেহটাকে চিনতে পেরেছেন পরিজনেরা। ‘দ্য সিনামন গ্র্যান্ড’ হোটেলের কর্মী আর্শাদের জন্মদিন ছিল রবিবারই। হোটেলের তরফে উপহার পাওয়া প্রাতরাশের ভোজে সপরিবার এসেছিলেন আর্শাদ। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। দুই মেয়ে ও স্ত্রী গুরুতর জখম। এ দিন মর্গে দাঁড়িয়েই আর্শাদের বৃদ্ধ কাকা জানতে পারলেন, হোটেলের তরফে ভাইপোকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। চোখের জল চেপে তিনি বললেন, ‘‘আমরা মুসলিম। আমাদের ধর্মে মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাহিত করতে হয়। আমরা আজই সেটা করতে দিতে চাই।’’

বিস্ফোরণ-কাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পরেও শ্রীলঙ্কা যেন থমকে রয়েছে। কলম্বো-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও জারি রয়েছে শর্তাধীন জরুরি অবস্থা। বন্ধ স্কুল-কলেজ, দোকান-বাজার। জায়গায় জায়গায় বিশেষ করে সরকারি ভবনগুলির বাইরে কড়া নিরাপত্তা, পোড়া বারুদের গন্ধ আর স্তব্ধ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশটা যেন আস্ত শ্মশানপুরী।

আর্চবিশপ ডায়াস জানালেন, বিস্ফোরণে একটা পুরো পরিবার শেষ হয়ে গিয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে তো বটেই, প্রিয়জনের শেষকৃত্যের আর্থিক সঙ্গতি যাঁদের নেই, সেই সব পরিবারগুলিকে যাবতীয় সাহায্যের চেষ্টা করছে তাঁদের সংগঠন। একটু থেমে বললেন, ‘‘ওঁরা এক পরিবারের মতো সে দিন ইস্টারের প্রার্থনায় বসেছিলেন। পরিবারের মতোই একসঙ্গে চলে গেলেন।’’

Sri Lanka Sri Lanka Blast Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy