Advertisement
E-Paper

মুসলিম, খ্রিস্টান বৈরিতা তো নেই শ্রীলঙ্কায়! 

কাল তিনটে গির্জায় বিস্ফোরণের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার যোগসূত্র খুঁজছেন কেউ কেউ। কিন্তু এমন কোনও যোগসূত্র আদৌ নেই।

পি কে বালচন্দ্রন (সাংবাদিক)

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৫
সেন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চের সামনে শ্রদ্ধাঞ্জাপন।

সেন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চের সামনে শ্রদ্ধাঞ্জাপন।

এ শহর এখন চুপ। গত কালের বিপর্যয়ের পরে যাঁদের পক্ষে আজ বাড়িতে থাকা সম্ভব, তাঁরা ঝুঁকি এড়াতে বাড়িতেই রয়েছেন। গাড়িঘোড়া চলছে। স্কুল বন্ধ, অফিস খোলা। তবে অতীতের বিস্ফোরণের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, খুব তাড়াতাড়িই স্বাভাবিক হবে সব কিছু।

কাল তিনটে গির্জায় বিস্ফোরণের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার যোগসূত্র খুঁজছেন কেউ কেউ। কিন্তু এমন কোনও যোগসূত্র আদৌ নেই। শ্রীলঙ্কা সরকার বলে দিয়েছে, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে ‘ন্যাশনাল তৌহিত জামাত’ নামে একটা মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন। এর সঙ্গে শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টান ও শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টা জড়িত, এমন ভাবার সত্যিই কোনও কারণ নেই। শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টান এবং মুসলিমরা কখনও পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াননি, তাঁদের মধ্যে সম্পর্কটা শত্রুতারও নয়।

খ্রিস্টানদের সঙ্গে মনোমালিন্য রয়েছে শুধু বৌদ্ধদের। লোভ দেখিয়ে ধর্ম পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠায় অতীতে কোনও কোনও গির্জা আক্রান্ত হয়েছে। গত কালের হামলাটা যদি বৌদ্ধ মৌলবাদীরা চালাত, তা হলে বলা যেত, তার সঙ্গে স্থানীয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার বিষয়টার কোনও যোগ আছে। কিন্তু হামলা চালিয়েছে মুসলিমরা। এ দেশে যাদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের বিরোধই নেই।

এই হামলার ইন্ধন বা প্রভাব এসেছে বাইরে থেকে। ‘ন্যাশনাল তৌহিথ জামাথ’-কে ইসলামিক স্টেট বা আইএসেরই একটি শাখা সংগঠন বলে মনে করা হয়। সিঙ্গাপুরের ‘এস রাজারত্নম সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ়’-এর নিরাপত্তা চর্চা (সিকিওরিটি স্টাডিজ়) বিভাগের অধ্যাপক রোহন গুণরত্নের মতে, কলম্বোর ধারাবাহিক বিস্ফোরণটা আসলে আইএসের কাজ। নিজেদের ‘শ্রীলঙ্কা শাখা’র সঙ্গে হাত মিলিয়েই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা।

সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা বিশেষজ্ঞ গুণরত্নে ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘পশ্চিমী দেশ আর খ্রিস্টানদের গির্জাগুলো আইএসের নিশানা। ইরাক আর সিরিয়ার ঘাঁটি থেকে আইএস-কে উৎখাত করেছে পশ্চিমী দেশগুলোর একটা জোট। আইএস মনে করে, পশ্চিমী দুনিয়াকে আদর্শগত ভাবে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে খ্রিস্টধর্ম। শ্রীলঙ্কা-সহ সারা বিশ্বেই স্থানীয় শাখাগুলোকে ব্যবহার করে মুসলিমদের মৌলবাদের পথে চালিত করছে আইএস।’’

খ্রিস্টান-পশ্চিম আর ইসলামি মৌলবাদ— এই দুইয়ের একটা সংঘাত চলছে দুনিয়া জুড়ে। শ্রীলঙ্কার গির্জায় হামলা, নিউজ়িল্যান্ডে মসজিদে হানা— সবই এই সংঘাতের ফসল বলে মনে হয়। মনে হয়, ক্রাইস্টচার্চের এক খ্রিস্টান বন্দুকবাজের হত্যাকাণ্ডের বদলাই হয়তো কলম্বোর গির্জায় হামলা। কলম্বোর তিনটে পাঁচতারা হোটেলে হামলার ব্যাপারটাও নজর করার মতো। শাংগ্রি-লা, সিনামন গ্র্যান্ড, কিংসবেরি— সবই পশ্চিমী নাগরিকদের পছন্দের হোটেল। জঙ্গিরা জানত, বিশ্ববিখ্যাত এই হোটেলগুলোয় হামলা চালালে প্রচার যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই ত্রাস সৃষ্টি করা যাবে পশ্চিমী নাগরিকদের মধ্যে।

বিস্ফোরণের পরে এলটিটিই-র কথা উঠছে। ‘তামিল টাইগার’ নামে একটা চরমপন্থী গোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে শোনা যায়। কিন্তুএদের বা সামগ্রিক তামিল জাতিগোষ্ঠীকে খুব একটা সন্দেহের বৃত্তে রাখছে না সরকার ও পুলিশ সূত্র।

সরকার-এলটিটিই যুদ্ধের পরে তামিলরা এখন বিচার চান, মানবাধিকার চান। তার জন্য পশ্চিমী গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রপুঞ্জের সংগঠনগুলির দ্বারস্থ হতে চাইছেন ওঁরা। এই অবস্থায় এমন কাণ্ড ঘটিয়ে তামিলরা পশ্চিমী দুনিয়ার রোষের কারণ হবেন না।

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতারা তবু সাধারণ মানুষকে আর্জি জানিয়েছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য। ক’মাসের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ও পার্লামেন্টের নির্বাচন। দেশের জনসংখ্যার ৮ শতাংশ জুড়ে থাকা মুসলিম ভোট টানতে চাইবে সব দলই। ২০১৫ সালে মুসলিমরা দলে দলে বিপক্ষে ভোট দেওয়ায় হারতে হয়েছিল মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে। কাজেই মনে হয় না, ভোটের আগে কোনও দল ধর্মের আগুন জ্বালাতে চাইবে। ‘বোদু বালা সেনা’র মতো কিছু মুসলিম-বিরোধী গোষ্ঠী হয়তো নানা রকম প্রচার চালাতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে কান দেবেন বলে মনে হয় না।

Antagonism Sri Lanka Blast Death Hindu Muslim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy