বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মায়ানমারে সরকার গঠন করতে চলেছে আউং সান সু কি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। এখনও কিছু আসনের ফল ঘোষণা বাকি। তবে এর মধ্যেই পার্লামান্টের ৩৪৮টি আসনে জয়ী হয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এনএলডি। সামরিক সরকারের তৈরি সংবিধান অনুযায়ী সু কি’র সন্তানরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কিন্তু, এনএলডি ঘোষণা করেছে, প্রেসিডেন্টের মাথার উপর থাকবেন দলনেত্রী।
‘অ্যাবাভ দ্য প্রেসিডেন্ট’— এই একটি কথাই এখন ভেসে বেড়াচ্ছে মায়ানমারের আনাচে কানাচে। নির্বাচনে সামরিক সরকারের মদতপুষ্ট দল ইউএসডিপিকে ধরাশায়ী করেও সু কি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না সাংবিধানিক গেরোয়। তাই সাংবিধানিক পরিসরের বাইরেই সু কি-কে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে চাইছেন সাধারণ মানুষ। সেই বিপুল জনমতই জন্ম দিয়েছে ‘অ্যাবাভ দ্য প্রেসিডেন্ট’-এর। তিন দশক ধরে সামরিক সরকারে অধীনে মায়ানমার। এই দীর্ঘ সময়ের সিংহভাগটাই সু কি-কে কাটাতে হয়েছে গৃহবন্দি অবস্থায়। আন্তর্জাতিক মহলের চাপে অবশেষে অবাধ সাধারণ নির্বাচনের পথে হাঁটতে বাধ্য হয় প্রেসিডেন্ট থান শোয়ে-র নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার। তবে নির্বাচনের ফল বিপক্ষে গেলে সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। কিন্তু, সু কি’র দল এমন অবিশ্বাস্য গরিষ্ঠতা পেয়েছে যে আর ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উপায় নেই।
নির্বাচনের ফল বিপক্ষে যাচ্ছে বুঝতে পেরে মায়ানমারের সেনাবাহিনী এবং শাসক দল বৃহস্পতিবারই অভিনন্দন জানিয়ে রেখেছিল সু কি’কে। তবে সেনার মদতপুষ্ট ইউএসডিপি প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাবে, এমনটা তাঁরা আগে বুঝতে পারেননি। সু কি যাতে মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হতে না পারেন, সামরিক সরকার সংবিধানেই তার ব্যবস্থা করে রেখেছে। সু কি’র দুই সন্তানেরই জন্ম ব্রিটেনে। তাই মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তাই আপাতত প্রেসিডেন্ট পদে এনএলডি’র অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেই বসাবেন সু কি। কিন্তু সরকারের চাবাকাঠি যে সু কি’র হাতেই থাকছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। খুব শীঘ্রই মায়ানমারের সংবিধান সংশোধন করে সু কি’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম করবে এনএলডি সরকার। জানানো হয়েচে জয়ী দলের তরফেই। সু কি নিজে বলেছেন, সাংবিধান সংশোধনের জন্য এনএলডি’র অন্য কারও সমর্থনের প্রয়োজন নেই। কারণ দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে। তবে নির্বাচনে জয়ীরা যাতে কোনওবাবে পরাজিতদের ভাবাবেগে আঘাত না করেন, সে বিষযে মায়ানমারবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন নতুন ‘অ্যাবাভ দ্য প্রেসিডেন্ট’।