আফগানিস্তানের মাটিতে কোনও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর জায়গা নেই। ২০২১ সালের আগে যে চিত্র ছিল, তা পাল্টেছে। আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির দাবি, গত চার বছরে তালিবান সরকার তাদের দেশে সব জঙ্গিগোষ্ঠীকে নির্মূল করেছে। সেই পথ সব দেশকে অনুসরণ করার বার্তা দিয়েছেন মুত্তাকি।
ছ’দিনের ভারত সফরে শুক্রবারই নয়াদিল্লিতে পা রেখেছেন আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। তার পরেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তার পরে এক সাংবাদিক বৈঠকে লশকর-এ-ত্যায়বা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তান থেকে বিতাড়নের প্রসঙ্গ তোলেন মুত্তাকি। তাঁর দাবি, ‘‘২০২১ সালে যে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম, সেই আফগানিস্তান বদলে গিয়েছে।’’ মুত্তাকির পরামর্শ, ‘‘শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে আফগানিস্তান যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা অনুসরণ করা উচিত অন্য দেশগুলিরও।’’
সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে কোনও দেশের নাম করেননি মুত্তাকি। তবে অনেকের মতেই আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর নিশানায় রয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর তরফে আফগানিস্তান সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৩০ জন টিটিপি বিদ্রোহীকে হত্যা করার দাবি করেছে। জয়শঙ্করের পাশে বসে সেই হামলার প্রসঙ্গ তুলেছেন আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘আফগানিস্তানের সীমান্তের কাছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের এ ধরনের কাজকে আমরা ভুল বলে মনে করি। এ ভাবে সমস্যা সমাধান হয় না।। আমরা আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।’’
তার পরেই পাকিস্তানকে সরাসরি নিশানা করে মুত্তাকি বলেন, ‘‘ওদের নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করা উচিত। ৪০ বছর পর আফগানিস্তানে শান্তিপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। উন্নতির পথে হাঁটছে। কারও এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আফগানিস্তান এখন একটি স্বাধীন জাতি। আমাদের দেশে যদি শান্তি থাকে, তবে কেন মানুষ সমস্যায় পড়বেন?’’ তাঁর সতর্কতাবার্তা, ‘‘আফগানদের সাহস এবং ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া উচিত নয়। যদি কেউ এটা করতে চায়, তবে তাদের সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং নেটোকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। তারা ব্যাখ্যা করবে যে আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলা ভাল নয়।’’ মুত্তাকির দাবি, ‘‘কাবুলও চায় ইসলামাবাদের সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক গড়তে, কিন্তু তা কখনই একতরফা হতে পারে না।’’
ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির কথাও জানান মুত্তাকি। ভূমিকম্পের জেরে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের জন্য ভারত যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই জন্য নয়াদিল্লির প্রশংসা করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আফগানিস্তান ভারতকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে দেখে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বাণিজ্যের ভিত্তিতে সম্পর্কের উন্নতি চায়।’’ শুধু তা-ই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কথা উল্লেখ করেন মুত্তাকি। তিনি বলেন, ‘‘ভারত ও আফগানিস্তানের উচিত আমেরিকার সঙ্গে যৌথ আলোচনা করা।’’
আরও পড়ুন:
গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট কাবুলে ক্ষমতা দখলের পরে এই প্রথম কোনও প্রথম সারির তালিবান নেতা ভারতে এলেন। কাবুলের তালিবান শাসকের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর বার্তা গোড়া থেকেই দিয়ে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আফগানিস্তানের নানা বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারত। ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট তালিবান ফের ক্ষমতা দখল করলে আনুষ্ঠানিক ভাবে তেমনটা করা হয়নি। ভারতীয় কূটনীতিকদের ফেরত আনা হলেও কয়েক মাসের মধ্যে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ পাঠানো হয়েছিল। সেই দলই ভারতীয় দূতাবাসের দৈনন্দিন কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। ২০২৩ সালের গোড়া থেকে তালিবান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শুরু করেছিল ভারত।
শুক্রবার কাবুলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় দূতাবাস চালু করার কথা ঘোষণা করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘কাবুলে ভারতের কূটনৈতিক মিশনকে দূতাবাসের মর্যাদা দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে পারে আমি আনন্দিত।’’ শুধু তা-ই নয়, তিনি আরও জানান, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি ভারতে সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আফগানিস্তানের মাটি কোনও অবস্থাতেই ভারত বিরোধী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে শুক্রবার তালিবান বিদেশমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জয়শঙ্করকে।
অনেকের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে নতুন পন্থা অবলম্বন করতে চলেছে ভারত। ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’— এই পথে হেঁটে ইসলামাবাদকে ‘চাপে’ রাখতে চায় নয়াদিল্লি।