একই সময়ে আমেরিকায় উপস্থিত ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল। ভারতের দলটির নেতৃত্বে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। আর পাকিস্তানের দলটির নেতৃত্বে সে দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যরাই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার উদ্দেশ্যে সে দেশে গিয়েছেন। সে দিক থেকে দেখলে দু’টি প্রতিনিধিদল একে অপরের মুখোমুখি না হলেও দুই দলনেতা তারুর আর বিলাবলের বাগ্যুদ্ধ কিংবা বিবৃতিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বার্তা দিতে বিভিন্ন দেশে যাবে সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল। স্থির হয় তারুরের নেতৃত্বাধীন দলটি যাবে আমেরিকায়। ভারতের মতো দেশে দেশে প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করে পাকিস্তানও। আন্তর্জাতিক মহলের সামনে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবলকে এই বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলেন।
গত ২৪ মে নিউ ইয়র্কে গিয়েছিলেন তারুরেরা। কিন্তু সেই সময় মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যেরা ছুটিতে ছিলেন। ফলে তাঁদের কারও সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেনি ভারতের প্রতিনিধিদল। তার পর তারুরেরা আমেরিকা থেকে ফিরে যান গায়ানা, পানামা, কলম্বিয়া এবং ব্রাজিলে। ব্রাজিল থেকেই আবার আমেরিকায় যায় ভারতের প্রতিনিধিদলটি। অন্য দিকে, রবিবার আমেরিকায় পৌঁছোয় পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল।
কেন্দ্রের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তারুরেরা ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে তো বটেই, মার্কিন আইনসভার প্রভাবশালী কমিটিগুলির সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক সারবেন। অন্য দিকে, পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’ জানিয়েছে, বিলাবলের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটি আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের সঙ্গে দেখা করবেন। অবশ্য দুই প্রতিনিধিদল একই সময়ে আমেরিকার একই শহরে উপস্থিত থাকবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন:
-
নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইরান থেকে ভারতে গ্যাস আমদানি আদানির? তদন্তে আমেরিকা? অভিযোগ উড়িয়ে দিল গৌতমের সংস্থা
-
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হল হাই কোর্টে, বিধি নিয়েও তোলা হল প্রশ্ন
-
দিল্লিতে পাক হাইকমিশনের বহিষ্কৃত অফিসার দানিশই ছিলেন আইএসআই-এর চর? জ্যোতি-তদন্তে নয়া মোড়
কয়েক দিন আগে নিউ ইয়র্কে গিয়ে তারুর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রশংসা করেন। মনে করিয়ে দেন যে, তিনি শাসকদলের নন, বিরোধী দলের সদস্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে করেন, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করার সময় এসেছে। বলেন, “ও দেশে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকেই গিয়েছে। তাই কড়া আঘাত জরুরি ছিল।” অন্য দিকে, আমেরিকায় ভারত-পাক সাম্প্রতিক সংঘাত এবং নয়াদিল্লির ‘একপাক্ষিক দাবি’র পাল্টা ‘সত্য’ তুলে ধরা হবে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাক প্রতিনিধিদলের এক সদস্যের কথায়, “প্ররোচনা সত্ত্বেও আমরা পরিণতমনস্কতার সঙ্গে জবাব দিয়েছি। আমরা এই সত্যিটা জানাতেই এখানে এসেছি, স্লোগান দিতে নয়।”
ভারতের প্রতিনিধিদলে তারুর ছাড়াও রয়েছেন বিজেপি সাংসদ ভুবনেশ্বর কলিতা, শিবসেনা সাংসদ মিলিন্দ দেওরা, প্রাক্তন কূটনীতিবিদ তরণজিৎ সিংহ সান্ধু। পক্ষান্তরে পাক প্রতিনিধিদলে বিলাবল ছাড়াও রয়েছেন সে দেশের আর এক প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। রয়েছেন প্রাক্তন দুই বিদেশসচিব, আমেরিকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের প্রাক্তন দুই রাষ্ট্রদূত এবং প্রাদেশিক সরকারের এক মন্ত্রীও। আমেরিকা থেকে দুই প্রতিনিধিদলের তাল ঠোকাঠুকির শব্দ শোনা যায় কি না, শোনা গেলেও তা কতটা উচ্চগ্রামে ওঠে, তা ঘিরেই এখন যাবতীয় কৌতূহল।