ছ’দিন হল আমাদের ঠিকানা নেপালের কাঠমান্ডু। ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ইটস এফেক্ট’— নামে আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি নেপালের বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ ভাবে আয়োজন করেছিল। সেখানে যোগ দিতেই কাঠমান্ডু আসা। অনুষ্ঠানটি ৬ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুর সেন্ট্রাল কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গে রয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পিএইচ ডি স্কলার এবং সেন্ট্রাল এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, ইম্ফলের এক পিএইচ ডি স্কলার।
নেপালে আসার পরে, প্রথম ক’দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হযয় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার। তখন ‘গুগল মিট’ ব্যবহার করে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি আচমকা জটিল হয়। আমরা তখন কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়ারে ছিলাম। হঠাৎ করেই একটা ভিড় ধেয়ে আসতে শুরু করে। আমরা পালিয়ে পাশের একটি খাবারের দোকানে আশ্রয় নিই। নামিয়েদেওয়া হয় শাটার। তখন বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিল গুলি চলার আওয়াজ। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি একটু ঠিক হয়। রাত ৯টার সময় সমাজমাধ্যম আবার কাজ করতে শুরু করে। তার আগে পর্যন্ত এটিএমথেকে টাকা তোলা যাচ্ছিল না, তবে এখন যাচ্ছে।
৯ সেপ্টেম্বর কাঁকরভিটা হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য বাসে রওনা দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু হোটেল থেকে বেরোনোর সময়ে ফের ক্ষিপ্ত জনতার আক্রমণ শুরু হয়। আর হোটেল থেকে বেরোতে পারিনি। বিমানবন্দর, নিউ বাসস্ট্যান্ড, পার্লামেন্ট, প্রেসিডেন্ট হাউস, প্রাইম মিনিস্টার হাউস— সব জ্বলছিল। সব হোটেলের শাটার বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের দোকান বন্ধ। বন্ধ হয় ইন্টারনেট পরিষেবা, মোবাইল পরিষেবা। আমরা এখন পশুপতিনাথ মন্দিরের কাছে একটি হোটেলে আছি। প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে একটি হোটেল আছে, যেটা এখানকার এক মন্ত্রীর। সেটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে বড় কোনও ঘটনা ছাড়া কেটেছে মঙ্গলবার রাত। বুধবার সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ভারতীয় দূতাবাস থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে আছি সেখানেই থাকতে। রাস্তায় না বেরোতে। প্রয়োজনে, দূতাবাস বা নেপাল আর্মির হেল্পলাইনে ফোন করতে বলা হয়েছে। আমাদের হোটেলের সামনে নেপাল সেনাবাহিনীর এক কোম্পানি জওয়ান মোতায়েন রয়েছেন। যদি নতুন করে কোনও হিংসা, অশান্তি না ছড়ায়, তা হলে আগামী দু’দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা। তবে কখন কী হয়ে যায়, এই ভেবে জলপাইগুড়িতে আমার পরিবার-পরিজনেরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
লেখক: গবেষক ছাত্র, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন: সুদেব দাস
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)