আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে গত কাল রাত থেকে ঢাকায় প্রতিবাদ-সমাবেশ করছে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা তথা এনসিপি-র সমর্থকেরা। আজ দুপুরে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, বিষয়টি তারা বিবেচনা করে দেখছে। এক্স হ্যান্ডলের একটি পোস্টে ইউনূস জানান, ‘বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। খুব শীঘ্র সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।’
ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকার ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছে। সকলের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন চালানোর অভিযোগে আওয়ামী ছাত্রলিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ যাত্রা নিয়েও মুখ খুলেছেন ইউনুস। তিনি বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও খুনের আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন নিয়ে জনমানসে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে সরকার অবগত। এর সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আজ বিকেলে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। গত কাল রাতেই ইউনূসের বাসভবন যমুনার কাছে, ফোয়ারার পাশে প্রতিবাদী মঞ্চ থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে স্লোগান ওঠে। হাসনাত বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অগ্রগতি সেই দিন থেকে শুরু হবে, যে দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-হীন হবে। আমাদের কথা অন্তর্বর্তী সরকারের কানে প্রবেশ করেনি। তাই এখন আমরা শাহবাগ অবরোধ করব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিজ্ঞপ্তি না আসা পর্যন্ত আমরা শাহবাগেই থাকব।’’ পরে রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাঁদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। এনসিপির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও রাতে বিক্ষোভে যোগ দেন। রাত একটার পর হেফাজতে ইসলাম, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও ওই বিক্ষোভে যোগ দেন। রাতভর বিক্ষোভ চলার পর আজ সকালে সেখানে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর অনুগামীরা। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসনাত ও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঘোষণা করেন, যমুনার পূর্ব পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত করা হবে। পাঁচটি পিকআপ ভ্যান একত্র করে জমায়েতের মঞ্চ তৈরি করা হয়। দুপুর ১২টা নাগাদ যমুনার সামনে থেকে সরে ফোয়ারার সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা বক্তৃতা দেন। সেখানেই হাসনাত শাহবাগ অবরোধ করার কথা ঘোষণা করেন।
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি-র নেতা তথা দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে আমরা তার বিপক্ষে যাব না। কিন্তু মানুষ কী চাইছে, তা না বুঝে বিএনপি এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না।’’ সংবাদ সংস্থা
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)