E-Paper

বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্কে গ্রেফতার হাজারেরও বেশি

ইস্তানবুলের মেয়র তথা তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি বা সিএইচপি-র নেতা একরেম ইমামোগুলকে প্রথমে মেয়র পদ থেকে অপসারিত করা হয় বুধবার।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৭
বিক্ষোভকরীদের উপরে পিপার স্প্রে ব্যবহার পুলিশের।

বিক্ষোভকরীদের উপরে পিপার স্প্রে ব্যবহার পুলিশের। সোমবার ইস্তানবুলে। ছবি রয়টার্স।

ইস্তানবুল, ২৪ মার্চ: গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছিল অশান্তি। প্রতিবাদ- বিক্ষোভে এখনও উত্তাল তুরস্ক। গত পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ-জমায়েতে শামিল হওয়া এবং অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মোট ১১৩৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আজ জানিয়েছে এর্ডোয়ান সরকার। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন দেশ-বিদেশের অন্তত ৯ জন সাংবাদিকও। তাঁদের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা যদিও স্পষ্ট নয়।

ইস্তানবুলের মেয়র তথা তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি বা সিএইচপি-র নেতা একরেম ইমামোগুলকে প্রথমে মেয়র পদ থেকে অপসারিত করা হয় বুধবার। এর পরে তাঁকে আটক এবং তারও পরে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই গত কাল তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে আদালত। একরেমের গ্রেফতারির পর থেকেই ফুঁসছিলেন তুরস্কের মানুষ। কাল তিনি জেলে ঢোকার পর থেকে অশান্তি আরও বেড়েছে। আঙ্কারা, ইস্তানবুলের মতো শহরের রাস্তা উপচে পড়ছে প্রতিবাদীদের ভিড়ে। প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ান আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, প্রতিবাদের নামে অগণতান্ত্রিক বা নাশকতামূলক কাজ করা যাবে না তুরস্কের রাস্তায়। ফলে এক দিকে তুরস্কের রাস্তায় গত কয়েক দিন ধরে যেমন প্রতিবাদী মানুষের ঢল নেমেছে, তেমনই কড়া হাতে সেই বিক্ষোভ দমনে নেমেছে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিই জানাচ্ছে, ২০১৩ সালের পর থেকে এত বড় আকারের কোনও বিক্ষোভ দেখেনি তুরস্ক।

দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঢের দেরি। সেই ২০২৮ সালে। তবু সেই নির্বাচনকে ঘিরেই এই অশান্তি শুরু হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। একরেম তাঁর বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আগেই দাবি করেছিলেন। কারণ এর্ডোয়ানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট মুখের একমাত্র দাবিদার ছিলেন তিনিই। কিন্তু এর্ডোয়ান প্রশাসন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পাল্টা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়েছেন, দেশের আদালত দীর্ঘদিন ধরেই সম্পূর্ণ নিরেপক্ষ ভাবে কাজ করে আসছে। ফলে প্রতিহিংসার তত্ত্ব সেখানে খাটে না। তবে আজ এত অশান্তির মধ্যেও পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি জানিয়ে দিয়েছে, একরেমই পরবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। জেল হলেও নির্বাচনে লড়তে পারবেন কি তিনি? আইনি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, জেলে থাকলেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়তে পারবেন একরেম। তবে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তা আর সম্ভব হবে না।

আজ রাজধানী আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসেছিলেন এর্ডোয়ান। তার পরে টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক বক্তৃতায় ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বিক্ষোভের নামে তুরস্কের রাস্তায় হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি বা পুলিশকর্মীদের জখম হওয়ার দায় বিরোধী দলের উপরেই চাপিয়েছেন তিনি। বেশ কিছু পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের অবশ্য দাবি, এই ক’দিনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শান্তই ছিল। কোথাও কোনও হিংসা ছড়াননি প্রতিবাদকারীরা। তবে এর্ডোয়ান সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তুরস্কের সাধারণ মানুষ। একরেমের জনপ্রিয়তা আগেই ইস্তানবুল থেকে দেশের অন্য শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ২৫ বছরের এক তরুণী প্রথম সারির এক ব্রিটিশ সংবাদ চ্যানেলকে আজ জানিয়েছেন, পুলিশি অত্যাচারে আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা করতে পথে নেমেছেন ডাক্তারি পড়ুয়ারাও। ওই তরুণী বললেন, ‘‘এক জন মহিলা হিসেবে আর এ দেশের এক জন নাগরিক হিসেবে কোনও অধিকারই আমার নেই। প্রথম দিকে আমার ভয় হচ্ছিল তবে এখন আমি রীতিমতো ক্ষুব্ধ। কালকের মতো আজও পথে নামব।’’

সংবাদ সংস্থা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Turkey Istanbul

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy