Advertisement
E-Paper

বেঁচে উঠব ১০০ বছর পর! কিশোরীর দেহ সংরক্ষণের অনুমতি দিল কোর্ট

পুনরুজ্জীবনের আশাকে মর্যাদা দিয়ে, ১০০ বছর ধরে এক কিশোরীর মৃতদেহ সংরক্ষণ করার অনুমতি দিল লন্ডন হাইকোর্ট। রীতিমতো বিরল এই রায়ের পর তরল নাইট্রোজেনে তার মৃতদেহ সংরক্ষিত থাকবে আমেরিকার মিশিগান ক্রায়োনিকস‌্ ইনস্টিটিউটে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ১৩:৫৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পুনরুজ্জীবনের আশাকে মর্যাদা দিয়ে, ১০০ বছর ধরে এক কিশোরীর মৃতদেহ সংরক্ষণ করার অনুমতি দিল লন্ডন হাইকোর্ট। রীতিমতো বিরল এই রায়ের পর তরল নাইট্রোজেনে তার মৃতদেহ সংরক্ষিত থাকবে আমেরিকার মিশিগান ক্রায়োনিকস‌্ ইনস্টিটিউটে।

লন্ডনের বাসিন্দা ১৪ বছরের ওই কিশোরীর ক্যানসার ধরা পড়ে গত বছরের অগস্টে। হাজার ডাক্তার-বদ্যিতেও তাকে বাঁচানো যায়নি। গত সেপ্টেম্বরেই মারণরোগ কেড়ে নেয় তার প্রাণ। জীবন থমকে যায় ১৪ বছরেই।

মৃত্যু যে ঘনিয়ে আসছে তা বুঝতেই পারছিল ওই কিশোরী। কিন্তু ভাবতে ভয় করছিল, তাকে মাটির তলায় চাপা দেওয়া হবে। ঠিক তখনই এক ওয়েবসাইটে ক্রায়োপ্রিসারভেশনের কথা জানতে পারে। মাটির তলায় চাপা পড়ার থেকে তরল নাইট্রোজেনে ভেসে থাকাটা তার কাছে অনেক কম ভয়ের মনে হয়। মনে ইচ্ছে জাগে, আহা, নিজেও যদি ওই ভাবে সংরক্ষিত হওয়া যায়! পাশাপাশি আশা, কোনও এক কালে তো বিজ্ঞান আরও উন্নত হবে! তখন তার শরীরে বাসা বাঁধা ক্যানসারকে প্রতিহত করে দেবে! হোক না জীবনের অনেকটা বছর পার, আবার বেঁচে উঠব নতুন করে।

কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? নিজের এই ইচ্ছার কথা সে মাকে জানায়। শেষে মায়ের পরামর্শে হাইকোর্টের বিচারপতির কাছে নিজের শেষ ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখে ফেলে। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘‘আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। আমি মরতে চলেছি। কিন্তু আমি মরতে চাই না। মাটির তলায় চাপা পড়তেও চাই না। ১০০ বছর পরে হলেও ক্রায়োপ্রিজারভেশন আমাকে এক নতুন জীবন দিতে পারে। আমি অনেক বছর বাঁচতে চাই। এই সুযোগটা আমাকে দেওয়া হোক। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।’’

মেয়েকে বাঁচানো তাঁর সাধ্যি ছিল না। কিন্তু মেয়ের শেষ ইচ্ছাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। মৃত্যুশয্যায় মেয়েকে ফেলে রেখেই তার চিঠি নিয়ে আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেন মা। বিরোধিতাও ছিল। স্বয়ং তাঁর স্বামীই এই সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেন। পাল্টা মামলাও করেন। সংশয় প্রকাশ করেন এই প্রক্রিয়ার খরচ বহন করা নিয়ে। এমনকী এও জানান, এতগুলো বছর পর যদি ধরেও নেওয়া হয় যে সে নবজন্ম পাবে, তা হলেও তার আশেপাশে কোনও পরিচিত কেউই তখন থাকবেন না। আগের কোনও ঘটনাই তার মনে থাকবে না। তা হলে এই সংরক্ষণের কী মানে? কিন্তু জিত হয় মা, মেয়েরই। বিচারপতি পিটার জ্যাকসন মরণোত্তর দেহ সংরক্ষের নির্দেশ দেন। বিচারপতি জ্যাকসন জানান, দ্রুত তার মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করা হোক। তার মৃতদেহের উপর একমাত্র তার মায়েরই অধিকার থাকবে। তিনি যখন মনে করবেন মৃতদেহের সৎকার করতে পারবেন। এই খুশির খবরটা অবশ্য জেনে যেতে পারেনি ওই কিশোরী। আদালতের এই রায়ের আগেই মারা যায় সে। মায়ের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দেখাটাও হয়নি। কারণ মা তখন আইন-আদালত নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

আপাতত তরল নাইট্রোজেনে ডুবে আছে তার দেহ। নাইট্রোজেন গ্যাসকে তরল নাইট্রোজেনে নিয়ে যেতে লাগে -১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অর্থাত্ জলের হিমাঙ্কের থেকে যদি ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে নিয়ে যায় তাপমাত্রাকে তবেই তরল নাইট্রোজেন পাওয়া যায়। নাইট্রোজেনের হিমাঙ্ক -২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় ১০০ বছর কেন, শতকের পর শতক অবিকৃত থেকে যেতে পারে জীবদেহ।

আরও পড়ুন: ক্যান্সারের নতুন সাত বাহকের হদিশ মিলল

cryopreservation cryonics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy