Advertisement
E-Paper

শিহরণ জাগাচ্ছে বঙ্গ সম্মেলন, নিউ ইয়র্কে নয়া ইতিহাস টলিউডেরও

আক্ষরিক অর্থেই বহুজাতিক! বাঙালি ‘জাতি’ যে সব অর্থেই বিশ্বজনীন, ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে বঙ্গ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হতেই সে কথা আরও এক বার মনে পড়ে গেল। বাঙালির একান্ত নিজের বলতে যে দু’টো দেশ রয়েছে এই পৃথিবীতে, সেই ভারত আর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজল ম্যাডিসনে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ১৯:১০
বঙ্গ সম্মেলন উপলক্ষে বাঙালির চাঁদের হাট নিউ ইয়র্কে। ছবি: টুইটার।

বঙ্গ সম্মেলন উপলক্ষে বাঙালির চাঁদের হাট নিউ ইয়র্কে। ছবি: টুইটার।

আক্ষরিক অর্থেই বহুজাতিক!

বাঙালি ‘জাতি’ যে সব অর্থেই বিশ্বজনীন, ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে বঙ্গ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হতেই সে কথা আরও এক বার মনে পড়ে গেল। বাঙালির একান্ত নিজের বলতে যে দু’টো দেশ রয়েছে এই পৃথিবীতে, সেই ভারত আর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজল ম্যাডিসনে। আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত বাজল। বাজল কানাডার জাতীয় সঙ্গীতও। কারণ এই বঙ্গ সম্মলনের আয়োজক সংগঠন এনএবিসির অধিকাংশ সদস্যই এই দুই দেশের বাসিন্দা এখন। অনাবাসী বাঙালির কাছে আমেরিকা, কানাডাও এখন নিজেরই দেশ। তবে তাতে বাঙালিয়ানায় খাদ মেশেনি এতটুকুও। বলা যেতে পারে, বছরভরের উপবাস ভেঙে আন্তর্জাতিক বাঙালি বঙ্গ সংস্কৃতির বিশ্বজনীন উদযাপনে মত্ত নিউ ইয়র্কে।

মার্কিন মুলুকে এই প্রথম বার আসিনি। বঙ্গ সম্মেলনও এই প্রথম শরিক হচ্ছি না। কিন্তু নিউ ইয়র্কে এ বার যে আয়োজন, তা বাঙালিকে শিহরিত করবেই। বাঙালি হিসেবে নিজের প্রতিই সমীহ বেড়ে যাবে।

নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটান। সেই ম্যানহাটানের সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকায় অবস্থান ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের। শুক্রবার বিকেল থেকে এ হেন ম্যাডিসন স্কোয়ারকে ঘিরে ধুতি-পাঞ্জাবি আর শাড়ির যে সমারোহ জমে উঠল, তা দেখে পথচলতি মার্কিনিদেরও একটু থমকে তাকাতে হচ্ছে। বঙ্গীয় কলকাকলিও চলছে দেদার। কলকাতার শিলাদিত্য গঙ্গোপাধ্যায় আমেরিকার শর্বরী চৌধুরীকে হেঁকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘আচ্ছা, ওটা হয়ে গেছে তো?’’ অথবা ক্যালিফোর্নিয়ার ড. কে পি চৌধুরী হঠাৎ এক গাল হাসি নিয়ে সমবয়সী এক ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলছেন, ‘‘আরে..., আজ কত বছর পর পর দেখা হল!’’ এ সবের মধ্যেই পাশ দিয়ে আচমকা হেঁটে গেলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। রাস্তার মোড়ে সেভেন্থ অ্যাভিনিউয়ের উপর নিউ জার্সির এক বঙ্গকন্যা অপরিচিত সাংবাদিককে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আচ্ছা, প্রসেনজিতের সঙ্গে কী ভাবে দেখা করা যায় বলতে পারেন? একটা সেল্‌ফি তুলতে চাই। এত সিকিওরিটি! ওরা ঢুকতে দিল না।’’

উৎসাহ, উদ্দীপনা, সমারোহ আর অমেয় জৌলুসের মধ্যে ৩৬তম বঙ্গ সম্মেলন শুরু হয়ে গেল নিউ ইয়র্কে। যে ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন মেতে উঠতে অভ্যস্ত ব্রিটনি স্পিয়ার্স বা জেনিফার লোপেজের সঙ্গে, যে ম্যাডিসন স্কোয়ারকে কাঁপিয়েছে মাইকেল জ্যাকসন বা বিটল্‌সের বিট্‌স, সেই ম্যাডিসন স্কোয়ারের মঞ্চে বাংলা গানের সুরে যখন নাচলেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি, তখন কোথাও একটা ইতিহাস তৈরি হল বই কি?

বাংলার নক্ষত্রের সমাবেশ নিউ ইয়র্কের হোটেলে। ছবি: টুইটার।

ইন্টারন্যাশনাল বেঙ্গলি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বা আইবিএফএ চালু হল ম্যানহাটান থেকে। সেও এক ইতিহাস! ইন্দ্রাণী হালদার এভারগ্রিন নায়িকা হিসেবে সম্মান পেলেন কি না, অথবা অপরাজিতা আঢ্য ‘অন্ধকারের তারা’ অ্যাওয়ার্ড জিতলেন কি না, অথবা ‘সেরা ভিলেন’ হিসেবে যিশু সেনগুপ্তকে বেছে নেওয়া হল কি না, অথবা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ‘দিশারী’ পুরস্কারে সম্মানিত হলেন কি না, অথবা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হল কি না, অথবা শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে আবির চট্টেপাধ্যায়ের নাম উঠে এল কি না, অথবা ঋতুপর্ণ ঘোষের নামে কোনও আন্তর্জাতিক পুরস্কার চালু হল কি না, সে সব অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল শুক্রবারের সান্ধ্য নিউ ইয়র্কে। এনএবিসির হাত ধরে টালিগঞ্জ যে নতুন এবং আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু করল, ভবিষ্যৎ ইতিহাসের পাতায় সেটাই সর্বাগ্রে ঠাঁই পেয়ে গেল।

শুধু ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনই অবশ্য নয়। বঙ্গ সম্মেলন মঞ্চ বেঁধেছে পেনসিলভানিয়া হোটেল এবং নিউ ইয়র্কার হোটেলেও। ফিল্ম উৎসব চলছে প্রথমটিতে। অন্যান্য মঞ্চে চলছে আরও নানা অনুষ্ঠান। কোনও মঞ্চে অনুপম-অনিন্দ্য এক সঙ্গে অনুষ্ঠান করছেন। কোথাও গাইছেন রাঘব। কোনও মঞ্চে রয়েছেন সাহেব। ঠাসা অনুষ্ঠান আর কর্মসূচি বঙ্গ সম্মেলনের তিন দিনের জন্য। তার ফাঁকেই দুপুর থেকে হোটেলে চলছে রিহার্সাল। টালিগঞ্জের চাঁদের হাটটা পুরোপুরি উঠে এসেছে এখানে। সবাই রিহার্সালে খুব সিরিয়াস। লাঞ্চটাও রিহার্সালের মাঝেই। খাবার নিয়ে এসে সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়া-দাওয়া। লিটেরারি মিট চলছে যেখানে, সেই মঞ্চে সাহিত্য নিয়ে শ্রীজাত-তিলোত্তমার পাশাপাশি বক্তার তালিকায় নাম নিউ জার্সির আলোলিকা মুখোপাধ্যায়েরও।

আরও পড়ুন: বঙ্গ আবেগের জোয়ারে নিউ ইয়র্ক এখন মিনি কলকাতা

বঙ্গীয় স্রোতের সব ধারা এসে যেন এখন নিউ ইয়র্কে মিশেছে। বঙ্গ সংস্কৃতির এমন আন্তর্জাতিক উদযাপনের উদ্বোধনী মঞ্চে বিরজু মহারাজকে পাওয়া গেলে, তার চেয়ে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে? অতএব, বিরজু মহারাজ ও তাঁর গ্রুপের অসামান্য একটা অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হল এ বারের বঙ্গ সম্মেলন। শ্রীকান্ত মোহতা, ফিরদৌসুল হাসান বা শ্যামসুন্দর দে’র মতো প্রযোজকরা যেমন হাজির, তেমনই রয়েছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় হার্টথ্রবরা। উপস্থিত অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সুমন ঘোষ সহ দুই বাংলার নামী পরিচালকরাও। রয়েছেন টালিগঞ্জের অনেক নেপথ্য কলাকুশলীও।

মোট ১৮টি পুরস্কার দেওয়া হল আইবিএফএ-র মঞ্চ থেকে। তবে এই বিপুল সমারোহকে কিন্তু ছুঁয়ে গেল ঢাকা ট্র্যাজেডি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার হাতে নিয়ে বললেন, ‘‘বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তা আমাদের ভারাক্রান্ত করে রেখেছে।’’

Bengali Conference New York IBFA Tollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy