Advertisement
E-Paper

আমেরিকার চাপ কাটানোই চাপ দিল্লির

‘টু প্লাস টু’ মডেলের এই আলোচনার পর মতপার্থক্যের বিরাট ক্ষেত্রটি কতটা কমে আসবে, তার দিকেই তাকিয়ে কূটনীতিকরা। এটা ঠিকই যে আমেরিকা আসন্ন বৈঠকটিতে ঝাঁপাবে দু’দেশের মধ্যে ‘কমিউনিকেশন কমপ্যাটেবিলিটি অ্যান্ড সিকিওরিটি’ (কমকাসা) সংক্রান্ত চুক্তিটি করার জন্য। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এখনই পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে সই করবে না ভারত।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৭
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

বারবার ধাক্কা খাওয়ার পরে অবশেষে আগামী বৃহস্পতিবার ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা এবং বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের জন্য তৈরি হচ্ছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার থেকেও এ বারের আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পেতে চলেছে আঞ্চলিক (দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার রণনীতি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) ও আন্তর্জাতিক (বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অস্ত্র ও শক্তি সম্পর্ক) বিষয়গুলি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর অধিকাংশ বিষয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মোদী সরকারের বিরোধ গত কয়েক মাসে প্রকট হয়ে উঠেছে।

‘টু প্লাস টু’ মডেলের এই আলোচনার পর মতপার্থক্যের বিরাট ক্ষেত্রটি কতটা কমে আসবে, তার দিকেই তাকিয়ে কূটনীতিকরা। এটা ঠিকই যে আমেরিকা আসন্ন বৈঠকটিতে ঝাঁপাবে দু’দেশের মধ্যে ‘কমিউনিকেশন কমপ্যাটেবিলিটি অ্যান্ড সিকিওরিটি’ (কমকাসা) সংক্রান্ত চুক্তিটি করার জন্য। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এখনই পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে সই করবে না ভারত। আপাতত সম্মতিপত্রে সই করা হবে।

দু’দেশের সামরিক বাহিনীর গোপন তথ্য (এনক্রিপটেড) আদানপ্রদান সংক্রান্ত ‘কমকাসা’ চুক্তিতে সই করার প্রশ্নে ভারত গোড়া থেকেই নিমরাজি। সরকারের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল, দেশের নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে না তো? প্রবল মার্কিন চাপের কাছে কিছুটা হলেও নতি স্বীকার করেছে মোদী সরকার। তবে এখনই হাতের শেষ তাস দেখাতে চাইছে না তারা। বরং অর্ধেক সম্মতি দিয়ে ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে তাকে ব্যবহারের কৌশল নিচ্ছে।

‘অন্যান্য ক্ষেত্রের’ মধ্যে মূল হচ্ছে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে লঘু করা। নভেম্বর মাসে মস্কোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জোরালো ভাবে তুলে ধরতে চাইছে সাউথ ব্লক। প্রথমত বলা হবে, মস্কো-নয়াদিল্লি এই চুক্তি আমেরিকার রাশিয়া সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনেক আগেই করা হয়েছিল। দুই, আমেরিকাও ভারতের কৌশলগত মিত্র। ফলে শেষ পর্যন্ত যদি রাশিয়ার থেকে অস্ত্র কেনার ‘অপরাধে’ ভারতকে বয়কট করে ওয়াশিংটন, তা হলে তাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।

আরও পড়ুন: যুদ্ধ থামুক, চায় ইয়েমেনের নোরানরা

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, যে ভাবে ভারতের উপর চাপ তৈরি করছে আমেরিকা, তা অনেকটাই কানাডা এবং জাপানের উপর তাদের তৈরি করা চাপের মতো। কানাডাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, আমেরিকার শর্ত না মানলে ‘ন্যাফটা’ (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) থেকে তাদের বের করে দেওয়া হবে। একই ভাবে চাপ দিয়ে জাপানকে ২১০ কোটি ডলারের মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে আমেরিকা।

ইরান থেকে তেল আমদানির প্রশ্নে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা মানা হোক বা না হোক, বাস্তবে তা ক্রমশই কঠিন হয়ে যাবে। এ কথা ক্রমশ বুঝতে পারছে শক্তিক্ষেত্রে ভারত-সহ অন্যান্য ইরান নির্ভর রাষ্ট্রগুলি (দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, জাপান ইত্যাদি) রাষ্ট্রগুলি। মার্কিন সরকার সূত্রের খবর, ভারত-সহ এই রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনাও সেরে নিয়েছে ওয়াশিংটন। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে বলে জানা গিয়েছে। উনিশের নির্বাচনের আগে মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকার করার মত কোনও অবস্থান অবশ্য প্রকাশ্যে নিতে চাইছে না মোদী সরকার। আজ সাউথ ব্লক সূত্রে বলা হয়েছে, ভারত কার কাছ থেকে কতটা তেল আমদানি কিনবে তা অন্য কোনও দেশ স্থির করে দিতে পারে না।

জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে ভারত কতটা নিজেদের শর্তে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে অগ্রগতি ঘটাতে পারে, এখন সেটাই দেখার।

India US Narendra Modi Donald Trump James N. Mattis Mike Pompeo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy