Advertisement
E-Paper

‘দেশদ্রোহী’র গল্প বলে কিমকে বিঁধলেন ট্রাম্প

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দর্শকদের গ্যালারিতে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন বিশেষ অতিথি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৪
বার্তা: প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন বক্তৃতায় উত্তর কোরিয়ার প্রতিবন্ধী যুবক জি সেয়ং হো-র গল্প শুনিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরেই ক্রাচ তুলে শ্রোতাদের অভিবাদন জি-র। ছবি: এএফপি

বার্তা: প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন বক্তৃতায় উত্তর কোরিয়ার প্রতিবন্ধী যুবক জি সেয়ং হো-র গল্প শুনিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরেই ক্রাচ তুলে শ্রোতাদের অভিবাদন জি-র। ছবি: এএফপি

‘লিটল রকেট ম্যান’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন এত দিন। লাগাতার হুমকি দিয়েছেন। এ বার গল্পের ছলে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনকে আক্রমণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবারের সন্ধেয়, নিজের প্রথম ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তৃতায়।

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দর্শকদের গ্যালারিতে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন বিশেষ অতিথি। যেমন আমেরিকায় নিহত ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস কুচিভোটলার স্ত্রী সুনয়না দুমলা। তেমনই ছিলেন জি সেয়ং হো। হাতে একজোড়া কাঠের ক্রাচ নিয়ে।

বছর ছত্রিশের জি জন্মসূত্রে উত্তর কোরিয়ার। ওই ক্রাচে ভর দিয়েই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এখন থাকেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। নিজের বক্তৃতায় জি-র জীবনের গল্পই টেনে আনলেন ট্রাম্প। বোঝাতে চাইলেন, কী ভাবে দেশবাসীকে অত্যাচার করে কিম প্রশাসন। কী ভাবে ‘দেশদ্রোহী’ বলে দাগিয়ে দেয় তাঁদের।

সালটা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি। জি তখন সদ্য কিশোর। প্রবল দুর্ভিক্ষ চলছে উত্তর কোরিয়ায়। খাবার নেই, জল নেই, ওষুধ নেই। রেলের ওয়াগন থেকে কয়লা চুরি করতে বেরিয়েছিলেন জি। যদি সেই কয়লার বদলে কিছু খাবার জোটে। কিন্তু কয়েক দিনের না-খাওয়া শরীরে সেই ধকল সহ্য হয়নি। দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াগনের উপর থেকে আচমকা গড়িয়ে রেললাইনে পড়ে জ্ঞান হারান তিনি। হুঁশ ফেরে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায়। দেখেন, রেলের চাকায় পিষে যাচ্ছে তাঁর বাঁ হাত আর বাঁ পা।

যন্ত্রণার আরও বাকি ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা জানান, প্রাণ বাঁচাতে গেলে হাত-পা কেটে বাদ দিতে হবে। এর পর জি-কে অজ্ঞান না করেই প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলে সেই অস্ত্রোপচার। কেন এমন ‘সাজা’, স্পষ্ট নয়। এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি জি বলেছিলেন, ‘‘আমার চিৎকার সে দিন হার মানাতে পারত হলিউডের যে কোনও দুরন্ত অ্যাকশন ছবিকেও!’’

ট্রাম্পের মুখ থেকেই শ্রোতারা শোনেন তার পরের গল্প। কী ভাবে ভাইবোনেরা নিজেরা অভুক্ত থেকে খাবার তুলে দিয়েছিল জি-এর মুখে। কী ভাবে একটা সুস্থ জীবন পেতে, দু’বেলা ভরপেট খাবারের আশায় ক্রাচে ভর করেই উত্তর কোরিয়া ছেড়ে চিনে পালিয়ে যান জি। কী ভাবে ফের দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন এবং ধরা পড়ে অত্যাচারিত হন পুলিশের হাতে। শেষ পর্যন্ত পাকাপাকি ভাবে দেশ ছেড়ে দক্ষিণ কোরিয়া পাড়ি। তবে নিজে বাঁচলেও বাবাকে বাঁচাতে পারেননি জি। পালানোর চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গিয়েছিলেন বাবা। পুলিশের অত্যাচারে জেলের ভিতরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এ দিনের সভায় যখন জি–এর কথা বলছিলেন ট্রাম্প, আবেগাপ্লুত যুবক তখন হাত তুলে প্রাণপণে ক্রাচ দু’টো নাড়ছিলেন। নকল হাত আর পায়ের জোরে আজকাল আর ক্রাচের প্রয়োজন পড়ে না তাঁর। কিন্তু সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের দগদগে চিহ্ন হিসেবেই ক্রাচগুলো রেখে দিয়েছেন জি।

সভায় ছিলেন উত্তর কোরিয়ায় বন্দিদশার পরে মৃত মার্কিন পড়ুয়া অটো ওয়ার্মবিয়ারের বাবা-মা ফ্রেড এবং সিন্ডি। ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ায় বেড়াতে যাওয়া ওই যুবককে আটকে রাখা হয় চুরির অভিযোগে। ১৭ মাস বন্দি থাকার পরে দেশে ফেরার চার দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ, বন্দিদশায় অত্যাচারের জেরেই সেই মৃত্যু।

অটোর বাবা-মায়ের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ট্রাম্প বললেন, উত্তর কোরিয়া এমন একটা দেশ, যাদের কোনও নৈতিক দায়িত্ববোধ নেই। তার পরেই ফের পুরনো হুঁশিয়ারি। কিম প্রশাসনের লাগামছাড়া পরমাণু অস্ত্রের আস্ফালন রুখতে বাকি বিশ্বকে একজোট হওয়ার ডাক দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

North Korea Donald Trump Kim Jong Un কিম জং উন ডোনাল্ড ট্রাম্প
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy