Advertisement
E-Paper

পরমাণুকেন্দ্র কি ধ্বংস করতে পারলেন ট্রাম্প? ইরানি হুঙ্কার অব্যাহত, পরমাণু-অস্ত্রেই আমেরিকাকে চাপ রাশিয়ার

ইরানের পরমাণু প্রকল্পের জন্য আবশ্যিক ফোরডো, নাতান্‌জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্র। রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) এই তিন পরমাণুকেন্দ্রেই হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। পরে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ওই তিন পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ২৩:০৯

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গোটা বিশ্বকে চমকেই দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষমেশ ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধে জড়িয়েই ফেললেন আমেরিকাকে! প্রেসিডেন্টের নির্দেশে রাতের অন্ধকারে ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলে দিয়ে এল মার্কিন বোমারু বিমান।

ইরানের পরমাণু প্রকল্পের জন্য আবশ্যিক ফোরডো, নাতান্‌জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্র। রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) এই তিন পরমাণুকেন্দ্রেই হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। পরে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ওই তিন পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফোরডোতে ছ’টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ ফেলা হয়েছে। জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) নামেও পরিচিত এই বোমা। তা ফেলার জন্য বি ২ স্পিরিট বোমারু বিমানকে ব্যবহার করেছে আমেরিকা, যে বিমান ১৫ টন ওজনের বোমা বহনে সক্ষম। শুধু ‘বাঙ্কার বাস্টার’ই নয়, আমেরিকার নৌবাহিনীও ‘টোমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েও নাতান্‌জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।

হামলার পরে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিন কেন্দ্রই ধ্বংস ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গিয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই দাবি সপক্ষে সে রকম কোনও তথ্যপ্রমাণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। পরে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের আধিকারিকেরা রবিবার সকালে (আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী) জানিয়েছেন, তিন পরমাণুকেন্দ্রেরই বড় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা বুঝতে আরও সময় লাগবে। মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এক আধিকারিক স্বীকার করে নিয়েছেন, পাহাড়ে ঘেরা মাটির প্রায় ৩০০ ফুট নীচে থাকা ফোরডোর পরমাণুকেন্দ্রটি তাঁরা ধ্বংস করতে পারেননি। তবে ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে।

‘প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি’-ও একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে সংবাদসংস্থা এপি দাবি করেছে, এই উপগ্রহচিত্রটি ফোরডোর। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একসময়ের বাদামি রঙের পাহাড়ের কিছু অংশ ধূসর হয়ে গিয়েছে। বাতাসেও হালকা ধূসর ধোঁয়া। হামলার আগের উপগ্রহচিত্রের থেকে যা কিছুটা আলাদা। সেই ছবি থেকে মনে করা হচ্ছে, ওই পরমাণুকেন্দ্রের একাধিক প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!

ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলার একটি ভিডিয়ো এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেছেন মাইকেল উলরিচ নামে এক ব্যবহারকারী। মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পরে জানিয়েছে, তারা ভিডিয়োটি যাচাই করেছে। ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিয়োটিতে ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রের চত্বরে বিস্ফোরণের রক্তিম ঝলকানি দেখা গিয়েছে। ‘জিয়োলোকেটর’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ উল্লেখ করে উলরিচের দাবি, বিস্ফোরণটি পরমাণুকেন্দ্রের সুড়ঙ্গপথের ঠিক মুখেই হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরণে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

ইরান অবশ্য জানিয়েছে, আমেরিকা হামলা চালালেও তিন পরমাণুকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ফলে নাগরিকদের চিন্তার কোনও কারণ নেই।

ঘটনাচক্রে, আমেরিকার হামলার ঠিক আগেই কিছু তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছিল ইরানের ফোরডোর ওই পরমাণুকেন্দ্রে। রবিবার তারই উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ম্যাকসার’-এর এক বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, আমেরিকার হামলার দু’দিন আগেই কিছু অস্বাভাবিক তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছিল ফোরডোর পরমাণুকেন্দ্রে। পরমাণুকেন্দ্রটির যে জায়গায় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেই রাস্তায় ১৬টি মালবাহী ট্রাক দেখা গিয়েছিল গত ১৯ জুন। পরের দিনের উপগ্রহচিত্রে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি ট্রাক উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও এক কিলোমিটার মতো সরে গিয়েছে। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি ট্রাক এবং বুলডোজ়ার দেখা গিয়েছে পরমাণুকেন্দ্রে ঢোকার মুখে।

উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, আমেরিকা হামলা চালাতে পারে ভেবেই কি পরমাণু প্রকল্পের জন্য জরুরি সরঞ্জাম সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইরান? কেউ কেউ মনে করছেন, ইরান তাদের পরমাণু প্রকল্পের সরঞ্জাম যাতে কোনও অজ্ঞাত জায়গায় সরিয়ে ফেলতে না পারে, তাই দু’সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেই আচমকা ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালালেন ট্রাম্প। যদিও এই দাবির আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি আমেরিকা বা ইরানের পক্ষ থেকে।

আমেরিকার হামলায় ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, ট্রাম্প একে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের জন্য ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন। এ-ও বলে রেখেছেন, এর পরেও যদি ইরান আলোচনার টেবিলে না বসে, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হামলা চালানো হবে। ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বলেছেন, ‘‘শক্তির মাধ্যমেই শান্তি আসে! ঈশ্বর, আমাদের (ইজ়রায়েল ও আমেরিকা) জোটকে অটুট রাখুক।’’

ট্রাম্পেরও হুঁশিয়ারির পরেও ইরান জানিয়ে দিয়েছে, তারা দমে যাবে না। প্রতিশোধ তারা নেবেই। বিবৃতি প্রকাশ করে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড জানিয়েছে, আমেরিকার পালানোর পথ নেই। তেহরানেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। এমন জবাব দেওয়া হবে যে অনুশোচনায় ভুগবে আমেরিকা! ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘‘গত সপ্তাহে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার আগে ইজ়রায়েল হামলা চালিয়েছিল। এ বার আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাঝে হামলা চালাল আমেরিকা। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়?’’

রাশিয়ার কড়া বিবৃতি

মার্কিন হামলার কড়া নিন্দা করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে সে দেশে গিয়েছেন আরাগচি। পরে পুতিন ঘনিষ্ঠ দিমিত্রি মেদভেদেভ আমেরিকার হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘‘ইরানে পারমাণবিক পদার্থের সমৃদ্ধকরণ এবং ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতেও প্রস্তুত।’’ সমালোচনা করেছে চিনও। আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে বলে বিবৃতি তারাও।

মোদীর ফোন, পাকিস্তানের নিন্দা

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার দুপুর ৩টে নাগাদ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে মোদী জানিয়েছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ফোন কথোপকথনে পশ্চিম এশিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন মোদী। একই সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টকে উত্তেজনা প্রশমনেরও আর্জি জানিয়েছেন। আমেরিকার হামলার নিন্দা করেছে পাকিস্তানও। ঘটনাচক্রে, দু’দিন আগেই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। সেই বৈঠকের পরেই ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার জন্য সুপারিশ করার কথা ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। এ বার ট্রাম্পের পদক্ষেপের নিন্দা করে তাদের বিবৃতি, ‘‘এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের সব নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী, ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে এই হিংসা অস্বস্তিকর। অবিলম্বে এই সংঘাত প্রশমনের দাবি জানাচ্ছি। সকলের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত।’’

হানাহানি অব্যাহত

আমেরিকার হামলার পর ইজ়রায়েলের উপর পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। সাইরেন বেজেছে তেল আভিভে। জেরুসালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। ইজ়রায়েলও পশ্চিম ইরানের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেগুলি প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। রাতেও ইজ়রায়েলি হামলা চলেছে ইরানে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আইডিএফ-এর দাবি, রবিবার ইরানের ইয়াজ়দ, বুশেহর, ইসফাহান এবং আহভাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। ওই এলাকায় ইরানের স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল কমান্ড সেন্টার রয়েছে, যেখানে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করে রাখা হয়। এ ছাড়াও, বুশেহর-এ ইরানের একমাত্র বাণিজ্যিক পরমাণু শক্তিকেন্দ্র রয়েছে। যদিও ইরানের এক আঞ্চলিক কর্তার দাবি, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইজ়রায়েলি ড্রোনগুলিকে মাঝ আকাশেই ধবংস করে দিয়েছে।

ট্রাম্পের ‘ছলনা’?

ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা ইরানে হামলা চালাবে কি না, সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দু’সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই মন্তব্যের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে চালিয়ে দিল আমেরিকা। তার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ট্রাম্প কি দু’সপ্তাহের কথা বলে আসলে ‘ছলনা’ই করেছিলেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের এক আধিকারিক মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-কে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে একটি বৈঠকেই ইরানের হামলার বার্তা দিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সেই সময় তিনি চূড়ান্ত অনুমতি দেননি। ট্রাম্পের বার্তাতেই সকলে বুঝে গিয়েছিলেন, আমেরিকা হামলা করতে চলেছে ইরানে। সেইমতো বৈঠকের পরেই হামলার নীলনকশা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মার্কিন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প সেই সময় হামলার চূড়ান্ত অনুমোদন দেননি, কারণ তিনি চাইছিলেন, যদি কোনও ভাবে ইরানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যায়। আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। ব্রিটেন, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সঙ্গে ইরানের পরমাণু বৈঠকও ব্যর্থ হয়েছে। ইরান সেখানে বলেছে, তারা সমঝোতায় প্রস্তুত নয়। আর ইজ়রায়েল যে ভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। এর পর আর কূটনৈতিক আলোচনার কথা না ভেবেই হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের মত, গোটা বিষয়টি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি করাই লক্ষ্য ছিল ট্রাম্পের। তাই তিনি দু’সপ্তাহের কথা বলেছিলেন। কিন্তু হামলায় ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের চূড়ান্ত অনুমতি মেলে। ট্রাম্প প্রশাসনের আধিকারিক বলেছেন, ‘‘উদ্দেশ্যটা ছিল— এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা, যা কারও মাথাতেই আসবে না।’’

ইরানের প্রত্যাঘাত?

তিন পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে আমেরিকার হামলার পর কি ‘নতিস্বীকার’ করবে ইরান? না কি প্রত্যাঘাত হিসাবে আরও বড় কোনও হামলার ছক কষতে পারে তারা? আমেরিকা, ইজ়রায়েলকে ‘জবাব’ দিতে কোন কোন পথ নিতে পারে তেহরান, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। প্রত্যাঘাতের অন্তত চারটি সম্ভাব্য পথ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে চলছে চর্চা। এক, হরমুজ প্রণালীতে নিশানার সম্ভাবনা। ওমান ও ইরানের মধ্যে সরু সমুদ্রপ্রণালী হল হরমুজ়। এই প্রণালী ৪০ কিমি চওড়া। যখন দুই জাহাজ পাশাপাশি যায়, তখন তাদের মধ্যে দু’কিমির ফাঁক থাকে। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের অধিকাংশ তেল আমদানি-রফতানি হয়। সংঘাতের আবহে ইরান হরমুজ় প্রণালীতে অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে। তার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ইরান তার নৌশক্তিকে ব্যবহার করে হরমুজ় প্রণালী সাময়িক আটকে রাখতে পারে বলে আশঙ্কা। পারস্য উপসাগরীয় উপকূল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। দুই, পশ্চিম এশিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার সম্ভাবনা। পশ্চিম এশিয়ার এই উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় আমেরিকার কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েতের মতো জায়গায় স্থায়ী ঘাঁটিও রয়েছে আমেরিকার। আশঙ্কা, এই সব ঘাঁটি ইরানের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে! এ ছাড়াও, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার বন্ধু দেশগুলির তেল এবং গ্যাসভান্ডারে আক্রমণ করতে পারে ইরান। তিন, আঞ্চলিক মিত্রদের সক্রিয় করতে পারে ইরান। পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের সমর্থিত বেশ কয়েকটি সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হুথি। আশঙ্কা করা হচ্ছ, লোহিত সাগরে মার্কিনঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে তারা। শুধু হুথি নয়, হিজ়বুল্লার মতো সংগঠনও হামলার ছক কষতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। চার, পরমাণু অস্ত্রভান্ডারে জোর। ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি আবার নতুন করে শুরু করতে পারে। এই কর্মসূচি নিয়েই আপত্তি আমেরিকা, ইজ়রায়েলের মতো দেশগুলি। ইরানের পরমাণুঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিতে চায় তারা। তবে ইরানও তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারে। ইরানের অধিকাংশ পরমাণুঘাঁটিই মাটির গভীরে। সেখানেই নিজেদের পরমাণুভান্ডার আরও মজবুত করার কৌশল নিতে পারে ইরান, এমনই মনে করছেন অনেকে।

শঙ্কিত রাষ্ট্রপুঞ্জ

ইরানে আমেরিকার হামলার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। জানিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার বলপ্রয়োগ দেখে তিনি শঙ্কিত। অবিলম্বে রাষ্ট্রপুঞ্জের সমস্ত সদস্যকে উত্তেজনা প্রশমন এবং শান্তিস্থাপনের বার্তা দিয়েছেন তিনি। গুতেরেসের আশঙ্কা, এ বার পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। পরিস্থিতি চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে! রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমেরিকা যে ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে আজ বলপ্রয়োগ করেছে, আমি তা দেখে অত্যন্ত শঙ্কিত। যে অঞ্চল এমনিতেই খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে, আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য যে অঞ্চল আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে একটা ভয়ানক উত্তেজনা তৈরি করা হল। এই সংঘাত এ বার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। পশ্চিম এশিয়া এবং সারা বিশ্বের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।’’

Iran-Israel Conflict Iran israel USA Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy