আমেরিকার যুদ্ধ দফতরকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করার নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার সকালে সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ নিজেই সে কথা জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এই নির্দেশ আকস্মিক হলেও অনভিপ্রেত নয়। গত সপ্তাহেই রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে রাশিয়া। তার পরে পরমাণু শক্তিচালিত টর্পেডো ‘পোসাইডন’ও পরীক্ষায় সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো। এ অবস্থায় মার্কিন পরমাণু অস্ত্রকেও সমানে সমানে ঝালিয়ে নিতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টও।
ট্রাম্প বর্তমানে এশিয়া সফরে রয়েছেন। মালয়েশিয়া, জাপান হয়ে এখন তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়াতেই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। ওই বৈঠক শুরুর কিছু ক্ষণ আগেই সমাজমাধ্যমে পোস্টে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশের কথা জানান তিনি। সেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি চিনের প্রসঙ্গও উল্লেখ রয়েছে। ট্রাম্প ওই পোস্টে লেখেন, ‘‘আমেরিকার কাছে অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। (আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে) আমার প্রথম মেয়াদেই মজুত অস্ত্রের নবীকরণ এবং তার সংস্কারের মাধ্যমে এই সাফল্য এসেছে।’’
সমাজমাধ্যম পোস্টে ট্রাম্পের দাবি, পরমাণু অস্ত্রের মারাত্মক ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে তিনি এগুলিকে ঘৃণা করতেন। কিন্তু তাঁর কাছে কোনও বিকল্প ছিল না বলেই দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্য, বর্তমানে পরমাণু অস্ত্রের শক্তির দিক থেকে আমেরিকার পরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। তৃতীয় স্থানে রয়েছে চিন। তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাশিয়া এবং চিন— দুই দেশই পরমাণু অস্ত্রের নিরিখে আমেরিকার সমানে সমানে পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:
অনুমান করা হচ্ছে, পরমাণু শক্তি নিয়ে রাশিয়ার সাম্প্রতিক পরীক্ষানিরীক্ষার কারণেই আমেরিকার যুদ্ধ দফতরকে এই নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও পোস্টে সরাসরি তেমন কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, অন্য দেশগুলির পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের কারণেই তিনি যুদ্ধ দফতরকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু হবে বলেও দাবি ট্রাম্পের।
গত ২১ অক্টোবর পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম বুরেভেস্টনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার দাবি করেছিল মস্কো। পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিল। আকাশে ছিল ১৫ ঘণ্টা! ক্রেমলিনের দাবি, ৯এম৭৩০ বুরেভেস্টনিক (স্টর্ম পেট্রল) ক্ষেপণাস্ত্র বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ক্ষেপণাস্ত্র-রোধকারী বর্মকে ভেদ করতে পারবে। পুতিন জানিয়েছেন, আরও উন্নত সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।
একটি সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে গত মঙ্গলবার টিভি চ্যানেলের মুখোমুখি হয়ে পুতিন বলেন, ‘‘পরমাণু শক্তিচালিত স্বয়ংক্রিয় মনুষ্যবিহীন সাবমার্সিবল যান ‘পোসাইডন’ পরীক্ষায় সফল হয়েছে।’’ এই ড্রোন রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত সম্ভাব্য সারমাট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বলেও দাবি করেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘পোসাইডন ড্রোনটি একটি ডুবোজাহাজ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের ১০০ ভাগ ছোট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্বারা চালিত হয় এই ড্রোন।’’