যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হলে আদতে ‘ইউক্রেনের ভূখণ্ড’ হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ক্রাইমিয়ার রুশ দখলদারিকে মেনে নিতে পারে আমেরিকা। শুক্রবার এই ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। তিনি বলেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে ক্রাইমিয়ার উপর রাশিয়ার দাবির বিষয়টির সমাধান হতে পারে।’’
কিন্তু সেই সঙ্গেই মার্কিন বিদেশসচিবের হুঁশিয়ারি, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না হলে ওয়াশিংটন পুরো প্রক্রিয়া থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে। প্যারিসে ইউক্রেন এবং ইউরোপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে রুবিয়ো বলেন, ‘‘যুদ্ধবিরতি আদৌ সম্ভব কি না, আমাদের খুব দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কয়েক দিন বা সপ্তাহখানেক দেখব, যদি শান্তিচুক্তিতে কোনও অগ্রগতি না হয়, তবে আর আমরা এর মধ্যে থাকব না। অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দেব।’’ সেই সঙ্গে মার্কিন বিদেশসচিবের মন্তব্য, ‘‘আমরা চাই যুদ্ধটা শেষ হোক। কিন্তু এটা আমাদের যুদ্ধ না।’’
২০১৪ সালে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সামান্য সংঘর্ষের পরে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করেছিল রুশ সেনা। পরে গণভোট করিয়ে ওই অংশকে রুশ ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। সামরিক দৃষ্টিতে ক্রাইমিয়ার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার কৃষ্ণসাগর উপকূলের সেবাস্তিপোল বন্দর শীতের সময়ও সচল থাকে। মূল রুশ ভূখণ্ডের কোনও বন্দরে সে সুবিধা নেই। সমুদ্র ভেসে আসা বরফের চাঁইয়ের কারণে বছরভর সেগুলি সচল রাখা সম্ভব নয়। সেই সামরিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে এ বারের যুদ্ধের গোড়া থেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কির বাহিনী বারে বারে নিশানা করেছে ক্রাইমিয়াকে। ২০২৩ সালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ক্রাইমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দরে রুশ বাহিনীর মজুত তেলের ভান্ডার ধ্বংস করে দিয়েছিল ইউক্রেন সেনা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সেনা অভিযান শুরুর পরে দক্ষিণ ইউক্রেনের আর এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর খেরসনের দখল নিয়েছিল পুতিন-বাহিনী। কিন্তু গত নভেম্বরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির অনুগত সেনাদের প্রত্যাঘাতে পিছু হটতে হয় তাদের। যদিও ক্রাইমিয়ার মতোই খেরসনকেও গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিলেন পুতিন। খেরসনের পাশাপাশি বুচা, ইজ়িয়ুম, বোরোডিয়াঙ্কা, চেরনিহিভের মতো শহরও রাশিয়ার হাত থেকে ইতিমধ্যেই ছিনিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন। মূল রুশ ভূখণ্ডের কুর্স্কের বিস্তীর্ণ অংশও তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ বার ট্রাম্পের ‘সৌজন্যে’ বৈধতা পেতে চলেছে ক্রাইমিয়ায় দখলদারি।