Advertisement
E-Paper

‘অর্কেস্ট্রা’ হাউসে সেতু চাইলেন ট্রাম্প, প্রাচীরও

মাইকের সামনে স্যুট আর লাল টাই পরে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পিছনে স্পিকারের চেয়ারে বসে প্রায় তাঁর ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৫
সুর নরম রেখে এ দিন দেশের স্বার্থেই রাজনৈতিক ঐক্য চাইলেন ট্রাম্প। জবাবে জুটল হাততালি। ব্যঙ্গও— ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন হাউসের স্পিকার তথা বিরোধী নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি।

সুর নরম রেখে এ দিন দেশের স্বার্থেই রাজনৈতিক ঐক্য চাইলেন ট্রাম্প। জবাবে জুটল হাততালি। ব্যঙ্গও— ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন হাউসের স্পিকার তথা বিরোধী নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি।

#মিটু-র জেরে সে বার ছিল কালোয়-কালো। এ বার সাদার ঢেউ।

মাইকের সামনে স্যুট আর লাল টাই পরে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পিছনে স্পিকারের চেয়ারে বসে প্রায় তাঁর ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি। আপাদমস্তক সাদায়। বক্তার সামনে আরও প্রায় একশো জনের মহিলা ব্রিগেড— প্রত্যেকে সাদা পোশাকে।

গত কাল, প্রেসিডেন্টের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তৃতার দিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে চেহারাটা যে এমন হতে পারে, আন্দাজ করা যায়নি। ট্রাম্প যেন ঢেউটা একবার মাপলেন। তার পরেই বললেন, ‘‘দেশে যে আর্থিক উন্নতি হয়েছে, তাতে মেয়েরাই সব চেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে। এক বছরে যা চাকরি হয়েছে, তার ৫৮ শতাংশ পেয়েছেন মেয়েরা।’’ গত নভেম্বরে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের পরে মার্কিন কংগ্রেসে মহিলা সদস্যেও সংখ্যাও এখন রেকর্ড— ১২৭।

ট্রাম্প সবে বাক্যটা শেষ করেছেন। হঠাৎ দেখা গেল, আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন ডেমোক্র্যাট সেনেটর কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ড। হাউসে যেন অর্কেস্ট্রা হচ্ছে— সাদা গাউনে দিব্যি পায়ের পাতায় ভর দিয়ে ছন্দোবদ্ধ দু’হাত তুলে এক পাক ঘুরে নিলেন নেত্রী। গিলিব্র্যান্ডের মেজাজ মুহূর্তে ছড়াল হাউসে বাকিদের মধ্যে। কেউ সশব্দে হাসলেন, হাততালি দিলেন। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন, সাদা রংটা শুধু নারী অধিকার আন্দোলনের সমর্থনে নয়, প্রেসিডেন্টের প্রতি নীরব প্রতিবাদের। ব্যঙ্গেরও। ট্রাম্প বুঝলেন, ঢেউ প্রতিকূল। মুচকি হেসে বললেন, ‘‘হাউসে দাঁড়িয়ে এটা ঠিক নয়।’’

হাউস-চিত্র: ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই ফাঁকে হাসি-ঠাট্টায় মাতলেন ডেমোক্র্যাট আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেজ়দের সাদায় মোড়া প্রমীলা ব্রিগেড।

তা হলে কী করতে হবে? কাল হাউস-বক্তৃতায় ‘টুইটার প্রেসিডেন্ট’ ধরা দিলেন অন্য মেজাজে। সেতু চাইলেন। আবার দেওয়ালও। মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলার সিদ্ধান্ত থেকে তিনি যে নড়বেন না, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু দেশের স্বার্থে ‘পথের কাঁটা’ ডেমোক্র্যাটদেরও যে ভাবে তিনি কাঁধ মিলিয়ে চলার ডাক দিলেন, অনেকেই বলছেন— ‘এটা একেবারেই ট্রাম্পসুলভ নয়।’ প্রায় দেড় ঘণ্টা বললেন প্রেসিডেন্ট। যার মুখবন্ধটা ছিল রাজনৈতিক ঐক্য চেয়ে। আর মলাটে সেই ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ স্লোগান। ট্রাম্প বললেন, ‘‘যে কর্মসূচি পেশ করছি, সেটা রিপাবলিকানদের নয়, ডেমোক্র্যাটদেরও নয়। সমগ্র দেশবাসীর স্বার্থে বলছি, এ বার আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।’’

প্রেসিডেন্ট মেয়াদের দ্বিতীয়ার্ধে এসে ট্রাম্প দাবি করলেন, এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি অভাবনীয় গতিতে এগোচ্ছে। তাই রাজনীতির নামে বোকা যুদ্ধ বন্ধ হোক। একতরফা তদন্ত বন্ধের দাবি তুলে প্রেসিডেন্ট বুঝিয়ে দিলেন, তাঁকে হোয়াইট হাউসে আনার ক্ষেত্রে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তও তিনি আর ভাল চোখে দেখছেন না।

ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প অবশ্য আগাগোড়া সব মন দিয়ে শুনলেন। মনোযোগী শ্রোতা ক্যানসার-জয়ী অতিথি, ছোট্ট গ্রেস এলিনও। হোয়াইট হাউসের আর এক অতিথি, খুদে ট্রাম্প যদিও ঘুমিয়ে কাদা। জশুয়া ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের সমনামী হওয়ায় সবাই যাকে স্কুলে খেপায়।

এ দিনও সীমান্ত-প্রাচীরে অনড় রইলেন প্রেসিডেন্ট। বললেন, ‘‘প্রাচীর তোলা ছাড়া আমাদের রক্ষা নেই। অবৈধ অভিবাসীর আড়ালে দেশে ঢুকতে চাওয়া পাচারকারী, দৃষ্কৃতীদের আটকাতে সীমান্তে দেওয়াল তুলতেই হবে।’’ তা হলে কি কোষাগার থেকে অর্থ আদায় করেই ছাড়বেন ট্রাম্প? ডেমোক্র্যাটরাও এ দিন ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, সহজে রশি আলগা করতে নারাজ তাঁরা। অভিযোগ, ট্রাম্পের কড়া অভিবাসন নীতির জেরেই গত বছর গুয়াতেমালা থেকে আসা সাত বছরের মেয়ে জ্যাকেলিন কালের মৃত্যু হয়েছিল মার্কিন হেফাজতে। কাল তার স্মরণে আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-র মতো বহু ডেমোক্র্যাট নেত্রী সাদা পোশাকে জ্যাকেলিনের ছবি দেওয়া ব্যাজ সেঁটে এসেছিলেন।

সবটাই দেখলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মেজাজ হারালেন না। শুধু যা করতে চান, বলে গেলেন। ইরানকে শত্রু বললেন, ভেনেজুয়েলার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন। আফগানিস্তান, সিরিয়া থেকে সেনা সরানোয় জোর দিলেন। বক্তৃতার শেষ ধাপে এসে প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দেন, তিনি গর্ভপাত করার প্রবণতা বন্ধে আইন আনতে পারেন।

অবস্থানে অনড় বিরোধীরাও। প্রেসিডেন্ট দাবি করলেন, দুরন্ত গতি এসেছে অর্থনীতিতে। যা সপাটে উড়িয়ে বর্ষীয়ান ডেমোক্র্যাট সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বললেন, ‘‘যেখানে দেশের ৪৩ শতাংশ পরিবার বাড়িভাড়া জোগাতে অক্ষম, এমনকি ধার না করে একটা ফোনও কিনতে পারে না, সেখানে এই দাবি হাস্যকর।’’ পেলোসির অভিযোগ, দেওয়াল তোলার কথা বলে অকারণে ভীতি ছড়াচ্ছেন ট্রাম্প। আর ক্যালিফর্নিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেনেটর কমলা হ্যারিস তো গর্ভপাত প্রসঙ্গে বলেই দিলেন, ‘‘মহিলারা নিজেদের শরীর নিয়ে কী করবেন, তা নিয়ে অন্তত রাজনীতিকদের মুখ খোলা উচিত নয়।’’ কমলা বোঝালেন, প্রেসিডেন্টের দৌড়ে নামতে তিনি ভালই তৈরি।

ছবি: রয়টার্স এবং এএফপি।

Donald Trump Nancy Pelosi State Of The Union Speech
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy