ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিশোধের রাজনীতি করবে না বিএনপি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার এ কথা ঘোষণা করে বলেন, ‘‘আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চাই না। আওয়ামী লীগের মতো মামলা করতে চাই না। যত মামলা আছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে—সব মামলা তুলে নেব।’’
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপর প্রভাব খাটিয়ে ‘প্রতিশোধের রাজনীতি’ করার জন্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)-কে নিশানা করেছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘‘জামায়াতে-সহ কয়েকটি দল জোর-জবরদস্তি করে তাদের দাবি মানাতে চায়। তারা পিআর-গণভোট চায়। এসব আমরা মেনে নেব না।’’ এ ক্ষেত্রে ‘কয়েকটি দল’ বলতে জামাতের সহযোগী সাতটি সংগঠন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একাংশের তৈরি ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) –কে তিনি ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে অবশ্য নিজের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে এসে ফখরুল বলেন, ‘‘আমার মন্তব্যকে সংবাদমাধ্যমের একাংশ ভুল ভাবে উপস্থাপিত করেছে। আমি বলতে চেয়েছিলাম, ‘আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করে প্রতিশোধের রাজনীতি করব না’।’’
আরও পড়ুন:
আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আওয়ামী লিগ নেত্রী শেখ হাসিনার মামলায় সাজা ঘোষণার দিন জানাবে। ট্রাইবুনালের বিচারপতি গোলাম মোর্তুজা মজুমদারের রায় ঘোষণার আগে বিএনপির এই ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মামলাগুলিকে ‘জালিয়াতি’ বলে চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে হাসিনার দল। পাশাপাশি আন্দোলন-মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউনূসের জমানায় ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। ফখরুল অবশ্য হাসিনার দলের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য— ‘‘আর পাগলামি করবেন না। জনগণের কাছে মাফ চান।’’
আরও পড়ুন:
গত বছরের অগস্টে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘিরে দানা বাঁধা প্রবল জনবিক্ষোভের জেরে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। তার পরে এই প্রথম আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিল সেই আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার বিএনপি। ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তান সেনার পক্ষে কাজ করেছিলেন। রাজাকার, আল বদর ঘাতকবাহিনীর সদস্য হিসাবে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে একাধিক জামাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। হাসিনার জমানায় কয়েক জনের সাজাও হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। অন্য দিকে, খালেদার স্বামী তথা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাক সেনার প্রথম বাঙালি অফিসার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই খালেদার স্বামী জিয়াও স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষণাকারী হিসেবে পরিচিত।