হংকঙে সাতটি বহুতল আবাসনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত খোঁজ নেই অন্তত ৩০০ জনের। বুধবারের ওই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পর এ বার বহুতলের নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকেই দুষল পুলিশ। জানানো হল, সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার চরম গাফিলতিতেই প্রাণ গিয়েছে এত মানুষের।
বুধবার রাতে হংকং পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট আইলিন চুং সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘বহুতলের নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা চরম অবহেলা করেছিলেন। তার ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের এমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। তাঁদের গাফিলতিতেই আগুন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে এত বড় ঘটনা ঘটে যায়।’’ ইতিমধ্যে ওই সংস্থার তিন আধিকারিককে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে দু’জন সংস্থার ডিরেক্টর। তৃতীয় জন সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার। তবে ঠিক কী থেকে ওই আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্ত চলছে।
তদন্তে নেমে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যাবতীয় উপকরণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেগুলির মধ্যে কোন কোন পদার্থ দাহ্য, কোনটি থেকে আগুন ছড়ায়, সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আর এক নির্মাণকারী সংস্থার চেয়ারম্যান জেসন পুন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বহুতলের বাইরে যে সবুজ জালি ছিল, সেগুলি ভাল মানের হলে আগুনের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারত। সম্ভবত নিম্নমানের জালির কারণেই আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’’ অনেকের দাবি, নির্মাণস্থলে ইতস্তত ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা কার্ডবোর্ডের টুকরো, স্টাইরোফোম বোর্ড, থিনার এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থও আগুনের ছড়িয়ে পড়ায় সহায়ক হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
বুধবার দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ হংকঙের ‘ওয়াং ফুক কোর্ট’ নামের ওই আবাসনে আগুন ধরে যায়। গত ১৭ বছরে হংকংয়ে এত বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি। আটটি ব্লক নিয়ে তৈরি ওই আবাসনে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৮০০ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তারই এক দিকে চলছিল নির্মাণকাজ। ‘ওয়াং ফুক কোর্ট’-এর আটটি ব্লকের সাতটি আবাসন মিলিয়ে প্রায় ২০০০টি আবাসন রয়েছে। প্রতিটি বহুতল আবাসনে রয়েছে ৩৫টি করে তলা। তার মধ্যেই কোনও একটিতে আগুন ধরে। যে দিকে নির্মাণকাজ চলছিল, সে দিকে বাঁশের ভাড়া বাঁধা ছিল। সেগুলি ঢাকা ছিল সবুজ জালি দিয়ে। সেগুলি দাহ্য হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে এক টাওয়ার থেকে আগুন ছড়ায় অন্য টাওয়ারগুলিতেও। দমকলের শতাধিক ইঞ্জিনের দীর্ঘ ক্ষণের চেষ্টাতেও ভোর পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেবানো যায়নি বলে খবর।
বুধবারের অগ্নিকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নিখোঁজ অন্তত ৩০০। আবাসনগুলির ভিতরে এখনও অনেকে আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা হংকয়ের দমকল কর্তৃপক্ষের।