বাংলাদেশের কুখ্যাত বন্দিশালা ‘আয়নাঘরে’র অন্দরে কী রয়েছে, তা নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা ছিল। বুধবার ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যান সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর দফতর আয়নাঘরের অন্দরের একাধিক ছবি প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনূসের দফতরের তরফে প্রকাশিত ছবি এবং ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ‘আয়নাঘরের’ ভিতরে রয়েছে বন্দিদের অত্যাচার করার জন্য ব্যবহৃত চেয়ার। কারও কারও মতে ওই চেয়ারে বসিয়েই বন্দিদের বৈদ্যুতিক ‘শক’ দেওয়া হত। তা ছাড়াও বন্দিশালাটিতে রয়েছে অসংখ্য খুপরি ঘর। সেই ঘরগুলির আয়তন এতই ছোট যে, সেখানে আলো-বাতাস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। বুধবার সকালে শেখ হাসিনার আমলে গুম হওয়া আট ব্যক্তি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টাকে নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে যান ইউনূস।
‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের পর ইউনূস বলেন, “একজন বলছিলেন খুপরির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর থেকে তো মুরগির খাঁচাও বড় হয়। বছরের পর বছর এ ভাবে রাখা হয়েছে।” ‘আয়নাঘরের’ অন্দরের ছবি প্রকাশ্যে আসার পর অনেক বন্দিই নিজেদের বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানান। কেউ কেউ ঘরগুলি দেখে শনাক্তও করতে পারেন। তবে বন্দিদের অনেকেই মনে করছেন, ৫ অগস্ট হাসিনার ক্ষমতাত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বেশ কিছু খুপরি ঘরের দেওয়াল ভেঙে পরে রং করে দেওয়া হয়। তবে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু দেওয়ালে এখনও রয়ে গিয়েছে বন্দিদের লেখা, আঁকা।
আয়নাঘর পরিদর্শনে ইউনূসের সঙ্গেই ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। ইউনূসের সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি নাহিদকে উদ্ধৃত করে জানান, নাহিদকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, তার একপাশে শৌচাগার হিসাবে একটি বেসিনের মতো ছিল।
গত ৫ অগস্ট আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসেন ভারতে। তার পর ৮ অগস্ট গঠিত হয় ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। হাসিনার সময়কালে বাংলাদেশের বহু সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে অন্তর্বর্তী সরকার। উঠে আসে ‘আয়নাঘর’-এর কথা।
আরও পড়ুন:
অভিযোগ, হাসিনার আমলে কেউ সরকার বা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলেই তাঁদের গ্রেফতার করা হত। সরকার এমন এক গোপন বন্দিশালা তৈরি করেছিল, যেখানে ধৃত ব্যক্তিদের বিনা বিচারে দিনের পর দিন আটকে রাখা হত। তাঁদের ‘গুম’ করে দেওয়া হত বলে অভিযোগ। ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে এই গুম সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়। গঠন করা হয় নতুন তদন্ত কমিশন।