—ফাইল চিত্র।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করতে শুরু করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের হাতে থাকা ১৩০ থেকে ১৪০টি পরমাণু বোমাকে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে মোতায়েন করা শুরু হয়েছে। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত একটি মার্কিন রিপোর্ট এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে। পাকিস্তানের যে সব সামরিক ঘাঁটিতে পরমাণু অস্ত্র এবং তা প্রয়োগের পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলির অবস্থান এবং নকশাও বিশদে তুলে ধরেছে মার্কিন বিশেষজ্ঞ দল।
বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্র কাজে লাগিয়ে এবং সামরিক ঘাঁটিগুলির অন্য কিছু বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা যে রিপোর্টটি সম্প্রতি তৈরি করেছেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে এনেছে। সে রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পাকিস্তান অন্তত ৮-১০টি সামরিক ঘাঁটিতে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রগুলি মোতায়েন করেছে। এই ঘাঁটিগুলির অধিকাংশতেই পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের পরিকাঠামোও তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের দাবি। বাকিগুলিতে সেই পরিকাঠামো দ্রুত গড়ে তোলা হচ্ছে।
এই সামরিক ঘাঁটিগুলিতেই পরমাণু অস্ত্র মজুত করেছে পাকিস্তান। দাবি মার্কিন রিপোর্টে।
মার্কিন রিপোর্ট অনুযায়ী কোন কোন সামরিক ঘাঁটিতে পরমাণু অস্ত্র রেখেছে পাকিস্তান?
সিন্ধ প্রদেশের আকরো, পানো আকিল এবং মসরুর ঘাঁটিতে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করেছে এবং তা নিক্ষেপের পরিকাঠামোও তৈরি করে ফেলেছে বলে রিপোর্টটিতে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বালুচিস্তানের খুজদার, পঞ্জাবের গুজরানওয়ালা এবং দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের সরগোঢা সামরিক ঘাঁটিতেও পরমাণু অস্ত্র এবং তার প্রয়োগ পরিকাঠামো তৈরি। ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া আর এক পঞ্জাবি শহর ভাওয়ালপুর এবং আফগান সীমান্তের কাছাকাছি ডেরা গাজি খাঁ-তে পাকিস্তানের যে দু’টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেখানেও পরমাণু অস্ত্র পৌঁছে গিয়েছে বলে মার্কিন রিপোর্টটির ইঙ্গিত। তবে এই দুই সামরিক ঘাঁটিতে পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের পরিকাঠামো সম্ভবত পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তা দ্রুত তৈরি করা হচ্ছে।
কী দেখে পরমাণু অস্ত্রাগারের বিষয়ে নিশ্চিত হলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা?
পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের পরিকাঠামো চিহ্নিত করে অস্ত্রাগারের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। উপগ্রহ চিত্রে এই পাক সামরিক ঘাঁটিগুলিতে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ পরিকাঠামোর হদিশ মিলেছে। পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র সম্বলিত গাড়ি রাখা হয়েছে পাকিস্তানের এই সব সামরিক ঘাঁটিতে। ১০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্র (ভারতের অধিকাংশ এলাকাই যার পাল্লার মধ্যে)— দু’রকমই রয়েছে সেখানে। পরমাণু পরিকাঠামো সংক্রান্ত যে সব সরঞ্জাম পাকিস্তান চিনের কাছ থেকে আমদানি করেছে, সে সবের অস্তিত্বও এই সামরিক ঘাঁটিগুলিতে চিহ্নিত করা গিয়েছে।
পরমাণু হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তান মূলত ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উপর নির্ভরশীল ছিল। যুদ্ধবিমান থেকে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা পাকিস্তানের সে ভাবে ছিল না। কিন্তু আমেরিকার কাছ থেকে নেওয়া এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলিকে গোপনে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের উপযুক্ত করে তুলেছে বলে মার্কিন রিপোর্টে জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ কিন্তু পাক-মার্কিন চুক্তির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। যে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তান কিনেছিল, তার নকশা বদলে তাকে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের উপযুক্ত করে তোলার অনুমতি পাকিস্তানের কাছে নেই। অর্থাৎ পাকিস্তান চুক্তিভঙ্গ করেছে। ফরাসি ফাইটার জেট মিরাজকেও পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের কাজে ব্যবহারের উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে বলে খবর। মিরাজ ফাইটার জেট থেকে তারা রাড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ব্যবস্থা করেছে বলে মার্কিন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে।
পাক সামরিক ঘাঁটির উপগ্রহ চিত্র।
রিপোর্টটিতে করাচির পশ্চিমে অবস্থিত মসরুর বিমানঘাঁটির কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাক বিমানবাহিনীর যে অংশকে পরমাণু হামলার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, সেই যুদ্ধবিমানগুলিকে মসরুর বিমানঘাঁটিতে রাখা হয়েছে বলে খবর। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া মসরুর বিমানঘাঁটিতে সম্ভবত একটি ভূগর্ভস্থ অস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে। একটি ভূগর্ভস্থ কম্যান্ড সেন্টারও সেখানে রয়েছে বলে রিপোর্টটি ইঙ্গিত করছে।
আরও পড়ুন: চিন সফরে ভারতের সেনাপ্রধান, রক্তচাপ বাড়ছে ইসলামাবাদের?
মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাকিস্তান এখনও প্রচুর পরমাণু অস্ত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, তেমন নয়। কিন্তু যতগুলি পরমাণু অস্ত্র তাদের কাছে রয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলির সবক’টিকে প্রয়োগ করার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো পাকিস্তান তৈরি রাখতে চাইছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy