Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিনা বিচারে বন্দি স্বামী, মাথা কামিয়ে পথে স্ত্রী

অপরাধ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তাঁরা। এটুকুই জানানো হয়েছিল পরিবারকে। কত দিনের সাজা, কবে মুক্তি পাবেন, আইনের কোন ধারাতেই বা তাঁদের বন্দি করা হয়েছে, কিছুই জানানো হয়নি।

প্রতিবাদী: স্বামীদের মুক্তি চেয়ে চার স্ত্রী। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

প্রতিবাদী: স্বামীদের মুক্তি চেয়ে চার স্ত্রী। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

অপরাধ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তাঁরা। এটুকুই জানানো হয়েছিল পরিবারকে। কত দিনের সাজা, কবে মুক্তি পাবেন, আইনের কোন ধারাতেই বা তাঁদের বন্দি করা হয়েছে, কিছুই জানানো হয়নি। গত তিন বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। মুখে কুলুপ প্রশাসনের। সম্প্রতি প্রতিবাদের ভাষা স্বরূপ নিজেদের মাথা কামিয়ে স্বামীদের মুক্তির দাবিতে পথে নেমেছেন চিনের চার তরুণী।

‘ওয়াউফা’। চিনা শব্দটির দু’টি অর্থ। একটি হল— সম্পূর্ণ মাথা কামানো। দ্বিতীয়টি, দেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়া। ওই শব্দটিকেই প্রতীকী হাতিয়ার করেছেন চার নারী। মাথা ন্যাড়া করে নীরব প্রতিবাদে নেমেছেন তাঁরা। সোমবার রাষ্ট্রের কাছে সুবিচার চেয়ে দক্ষিণ বেজিংয়ের ‘হঙ্গসেকান পিপল’স হাই কোর্ট’-এর সামনে বিক্ষোভ দেখান।

২০১৫ সালের ৯ জুলাই থেকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের ধরপাকড় শুরু হয়। অ্যাটর্নি ওয়াং কোয়ানঝাং কিছু মানবাধিকার কর্মীদের সমর্থন করেছিলেন। জমি মাফিয়াদের হাতে আক্রান্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আরও অন্তত ২০০ আইনজীবীর সঙ্গে ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা নাশ করার চেষ্টা’র অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ওয়াংকে। ‘‘কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই গ্রেফতারির কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি,’’ বললেন ওয়াংয়ের স্ত্রী লি ওয়েনজু। তাঁর দাবি, ‘‘কেন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিচার প্রক্রিয়া চলছে না, আমি তার উত্তর চাই। কেনই বা বাড়ির লোককে ওয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না?’’

লি জানান, গত তিন বছরে স্বামীর মুক্তি চেয়ে প্রশাসনের কাছে ৩০টির বেশি চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও চিঠির জবাব মেলেনি। গত এপ্রিল মাসে তিয়ানজিনে পুলিশের সদর দফতর পর্যন্ত, ১০০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু পুলিশ আটকে দেয়। এ দিন চিনের ‘সুপ্রিম পিপল’স কোর্ট’কে বিষয়টি দেখার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছেন ওয়াংয়ের স্ত্রী।

মানবাধিকার ঝাই ইয়ানমিনের স্ত্রী লিউ ইরমিন সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে তাঁর স্বামীর উপরে চরম অত্যাচার চালানো হচ্ছে। লিউয়ের কথায়, ‘‘ক্রমশ শরীর ভেঙে যাচ্ছে ঝাইয়ের। আর আমরা সবাই বাড়ি-বাইরে সর্বত্র নজরবন্দি।’’

এই আন্দোলনের তৃতীয় ও চতুর্থ নারী-মুখ ইয়ান শানশান এবং ওয়াং ছিয়াওলিং। দু’জনের স্বামীই পেশায় আইনজীবী ছিলেন। এঁদেরও ‘অপরাধ’ ছিল আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানো। এ রকম সরকারি বন্দির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে চিনে, জানালেন চার তরুণী। কারও কারও ঘটনা বিশ্বের নজরে এসেছে, কেউ একেবারেই আড়ালে। বিনা বিচারে জেলের অন্ধকারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wife China Activist Justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE