Advertisement
E-Paper

না-এর দলকে জিতিয়ে স্কটল্যান্ড ব্রিটেনেই

হ্যাঁ বনাম না-এর যুদ্ধ শেষ। স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিয়ে ব্রিটেনের ৩০৭ বছরের জোট টিকিয়ে রাখলেন স্কটল্যান্ডবাসীই। ব্রিটেন থেকে স্কটল্যান্ড আলাদা হয়ে যাবে কি না, তা ঠিক করতে গত কাল ভোট দিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দারা। আগের সমস্ত রেকর্ড ধুয়ে মুছে ভোট পড়ে প্রায় ৩৬ লক্ষ। যা মোট ভোটারের ৮৫ শতাংশ। হ্যাঁ-না এর পালাবদল অবশ্য চলেছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
দুই ছবি। উচ্ছ্বাস ‘না’-এর সমর্থকদের। (ডান দিকে) স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন এঁরা। গ্লাসগোয়।  ছবি: রয়টার্স ও এএফপি

দুই ছবি। উচ্ছ্বাস ‘না’-এর সমর্থকদের। (ডান দিকে) স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন এঁরা। গ্লাসগোয়। ছবি: রয়টার্স ও এএফপি

হ্যাঁ বনাম না-এর যুদ্ধ শেষ। স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিয়ে ব্রিটেনের ৩০৭ বছরের জোট টিকিয়ে রাখলেন স্কটল্যান্ডবাসীই।

ব্রিটেন থেকে স্কটল্যান্ড আলাদা হয়ে যাবে কি না, তা ঠিক করতে গত কাল ভোট দিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দারা। আগের সমস্ত রেকর্ড ধুয়ে মুছে ভোট পড়ে প্রায় ৩৬ লক্ষ। যা মোট ভোটারের ৮৫ শতাংশ। হ্যাঁ-না এর পালাবদল অবশ্য চলেছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এই হ্যাঁ পন্থীদের (আলাদা হওয়ার পক্ষে যাঁরা) পাল্লা ভারী তো, একটু পরেই মনে হচ্ছে না-এর দলই (ঐক্যবদ্ধ ব্রিটেনের পক্ষে যাঁরা) বোধ হয় শেষ হাসি হাসবেন।

কাল টানটান উত্তেজনার পর আজ ভোর থেকেই ছবিটা একটু একটু স্পষ্ট হতে শুরু করে। প্রথমেই ফল বেরোয় ছোট্ট কেন্দ্র ক্ল্যাকম্যাননশায়রের। দেখা যায় সেখানে সংযুক্ত ব্রিটেনের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৩.৮%। বাকি দিনটা কেমন কাটতে চলেছে, দিনের শুরুটাই যেন ঠিক করে দিয়েছিল। এডিনবরা, অ্যাবারডিনশায়র, অ্যাঙ্গাস থেকে একের পর এক খবর আসতে থাকে, জিতছে ‘না’-এর দল।

দিনের শেষে হিসেব বলছে, মোট ভোটারের ৫৫% আস্থা রেখেছেন ঐক্যবদ্ধ ব্রিটেনে। স্বাধীনতার পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৫%। রাজধানী এডিনবরায় না-পন্থীরা যে জিতবেন, তা স্পষ্টই ছিল। তেমনই ডান্ডি, গ্লাসগোয় স্বাধীনতার পক্ষেই যে বেশি ভোট পড়বে, তা-ও ছিল প্রত্যাশিত।

ফল বেরোনোর পর থেকেই যে প্রশ্নটা সব জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, একুশ শতকে এ ভাবে স্বাধীনতার সুযোগ কেন হাতছাড়া করলেন স্কটল্যান্ডবাসী? ভোটের হিসেব বলছে, এই ঐতিহাসিক গণভোটে গ্রাম-শহরের ভেদটাই প্রকট হয়ে উঠল আরও। শহুরে মধ্যবিত্ত, যাঁরা ইতিমধ্যেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত, কোনও রকম অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়াতে রাজি নন তাঁরা। স্কটিশ জনসংখ্যার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন বিদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা। রয়েছেন অসংখ্য ভারতীয়ও। স্বাধীনতার সঙ্গে একাত্মবোধ করার সুযোগ যেমন তাঁদের কম, তেমনই চেনা-পরিচিত কাঠামো ছেড়ে নতুনের সন্ধানে যাওয়াটাও বেশ ঝুঁকির। নতুন দেশ, তার অর্থনীতি কী রকম হবে, নতুন চাকরিচিন্তা সরিয়ে স্বস্তিতেই থাকতে চেয়েছেন এই ভারতীয়রা।

স্বাধীন স্কটল্যান্ডের স্বপ্ন যাঁরা দেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ প্রজন্মের অথবা দেশের প্রান্তিক মানুষজন, যেমন চাষি বা মৎস্যজীবী। নতুন রাষ্ট্র হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কিছু অতিরিক্ত সুবিধে পেতেন তাঁরা। আবেগপ্রবণ তরুণ প্রজন্মের কাছে আবার স্বাধীনতার স্বপ্নই সব চেয়ে দামি। কেউ আবার বলছেন, মাথা বনাম হৃদয়ের লড়াইয়ে প্রবীণদের হিসেবি পদক্ষেপই শেষ পর্যন্ত তফাতটা গড়ে দিল।

না-পন্থীদের সঙ্গেই আজ হাসছেন আরও এক জন। তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। স্কটল্যান্ড আলাদা হয়ে গেলে দায় ঘাড়ে নিয়ে হয়তো পদ ছাড়তে হতো তাঁকে। আজ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ক্যামেরন বলেন, “স্কটল্যান্ডবাসী রায় জানিয়েছেন। আমি খুশি। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আরও কাছাকাছি আসতে হবে আমাদের।” ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, স্কট পার্লামেন্টকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে। কথা রাখতে নিজেকে এক বছরেরও কম সময় দিয়েছেন ক্যামেরন। তিনি এ দিন জানান, “স্কটল্যান্ডবাসীর কথা শুনেছি। এ বার ইংল্যান্ডের বাসিন্দাদের কথা শোনার সময় এসেছে।” ভবিষ্যতে কর, উন্নয়ন, অর্থব্যয় কিছু কিছু প্রশ্নে স্কটল্যান্ডের হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সেখানকার পার্লামেন্ট। একই বিষয়ে এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকুক ইংল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসের পার্লামেন্টেরও, চান ক্যামেরন। এ বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

স্কটিশ স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করতে যাঁকে সব চেয়ে বেশি দেখা গিয়েছিল, সেই অ্যালেক্স স্যামন্ড হার স্বীকার করে নিয়েছেন এ দিন। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার (স্থানীয় সরকারের প্রধান) এই অ্যালেক্স স্যামন্ড। ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি জানিয়ে দেন, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিচ্ছে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, তাঁর দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা হিসেবেও পদত্যাগ করবেন তিনি। তাঁর কথায়, “স্বাধীন স্কটল্যান্ডের জন্য প্রচার শেষ হয়নি। স্বপ্নের কখনও মৃত্যু হতে পারে না।” সূত্রের খবর, আগামী নভেম্বরে দলের জন্য যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করবেন স্যামন্ড।

ব্রিটেনের অঙ্গহানি হচ্ছে না, এই খবর পাওয়া মাত্র তার প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। ইউরো আর ডলারের তুলনায় পাউন্ডের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। গত দু’বছরের মধ্যে পাউন্ডের দাম ইউরোর তুলনায় এতটা বেশি বাড়ল। জোট ভেঙে গেলে রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ড তাদের মূল দফতর সরিয়ে নিয়ে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু এ বার আর তার দরকার নেই, জানিয়ে দিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। স্কটল্যান্ডবাসীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কমিশনের সদস্যরা।

একটা স্বপ্ন মাঝপথেই থমকে গেল। কিন্তু এক লেবার নেতার কথায়, নতুন স্বপ্ন দেখা আটকাচ্ছে কে! “আমাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের গল্প করব আমরা শুধু দেশটাকে অখণ্ডই রাখিনি, এক সঙ্গে গড়েছি নতুন দেশ। এই বা কম কী!”

srabani basu london scotland britan Results uk vote independence international news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy