Advertisement
E-Paper

হ্যাঁ বা না, জানা যাবে প্রাতরাশের টেবিলেই

ফের কুয়াশায় ঢেকে গেল স্কট মনুমেন্টের চুড়ো। স্কটল্যান্ডের আবহাওয়াটাই এ রকম। এই কুয়াশা আর বৃষ্টি, আবার আধ ঘণ্টা পরেই রোদ ঝকমকে আকাশ। ঠিক যে অবস্থা প্রাক্ ভোট সমীক্ষার। এক বার এ-দিক, তো কয়েক ঘণ্টা পরেই অন্য দিক! কয়েক মাস আগেই যে ‘হ্যাঁ’-এর কোনও হদিসই ছিল না, জোরদার রাজনৈতিক প্রচারের জেরে সেই ‘হ্যাঁ, আমরা এক নতুন রাষ্ট্র গড়তে চাই’ আজ ‘না, চাই না’-কে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে।

সায়ন্তন দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:১৭
ওয়াল্টার স্কটের মূর্তি মাথায় স্কটল্যান্ডের পতাকা। এডিনবরায়।  ছবি: এএফপি।

ওয়াল্টার স্কটের মূর্তি মাথায় স্কটল্যান্ডের পতাকা। এডিনবরায়। ছবি: এএফপি।

ফের কুয়াশায় ঢেকে গেল স্কট মনুমেন্টের চুড়ো। স্কটল্যান্ডের আবহাওয়াটাই এ রকম। এই কুয়াশা আর বৃষ্টি, আবার আধ ঘণ্টা পরেই রোদ ঝকমকে আকাশ।

ঠিক যে অবস্থা প্রাক্ ভোট সমীক্ষার। এক বার এ-দিক, তো কয়েক ঘণ্টা পরেই অন্য দিক! কয়েক মাস আগেই যে ‘হ্যাঁ’-এর কোনও হদিসই ছিল না, জোরদার রাজনৈতিক প্রচারের জেরে সেই ‘হ্যাঁ, আমরা এক নতুন রাষ্ট্র গড়তে চাই’ আজ ‘না, চাই না’-কে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। কাল রাতেও অনেকের মুখে শুনছিলাম, একদম হাড্ডহাড্ডি লড়াই চলছে দু’পক্ষের ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ৪৯ শতাংশ আর ‘না’-এর পক্ষে মাত্র দু’শতাংশ বেশি, মানে ৫১ শতাংশ। ‘গেল গেল’ রব তুলেছিলেন ‘না’-বাদীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তো কাল নৈশভোজের টেবিলে বলেই ফেললেন “এটা হলে কিন্তু চূড়ান্ত নির্বুদ্ধিতা হবে!” আজ সকালে আবার তাঁর মুখেই স্বস্তির হাল্কা হাসি। সমীক্ষকেরা বলছেন, ভোট-বুথে গিয়ে ‘হ্যাঁ’-বাদীরা আর অত ‘সাহস’ দেখাতে পারবেন না!

গত সপ্তাহে স্কটল্যান্ডে পা দিয়েই দেখতে পাচ্ছি, সর্বত্র নীলে ছোপানো ‘হ্যাঁ’ আর লালে রাঙা ‘না’ পোস্টার। দোকান, বাড়ি, কিছুই বাদ নেই। রাজধানী এডিনবরা থেকে ট্রেনে এক ঘণ্টা দূরেই সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়। হ্যাঁ, এখানকারই দুই পড়ুয়া রাজকুমার উইলিয়াম ও কেট মিডলটন। এখানকার শিক্ষক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, তাঁরা ‘না’-এর দিকেই। “হবেই না-ই বা কেন”, প্রশ্ন গবেষক-ছাত্রী আইলিন ক্যাম্পবেলের। “যাঁরা প্রতিষ্ঠিত, তাঁরা চাইছেন না যে এই অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটুক। তাই তাঁরা বলছেন না আমরা বিচ্ছিন্ন হতে চাই না।” সেন্ট অ্যান্ড্রুজে বহু বিদেশি ছেলেমেয়ে পড়তে আসে। এ দেশের নিয়ম, কয়েক বছর থেকে এখানে একটা স্থায়ী ঠিকানা হলেই ভোট দেওয়ার অধিকার পাওয়া যায়। তাই স্নাতকোত্তর স্তরের (আমাদের দেশে এমফিল বা পিএইচডি) বেশির ভাগ পড়ুয়াই আজ ভোট দিয়েছেন। ‘না’-এর পক্ষেই। “আমিও”, মুচকি হেসে বললেন আইলিন। পোল্যান্ড থেকে সাত বছর আগে স্কটল্যান্ডে এসেছিলেন। এমন এক স্কটল্যান্ডেই থেকে যেতে চান, যা গ্রেট ব্রিটেনের অংশ, কোনও বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র নয়।

একই কথা বলছেন এ দেশের বহু ভারতীয়। কেউ অধ্যাপক, কেউ চিকিৎসক, কেউ বা কোনও বহুজাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় কর্মরত। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসক সৌম্য সেনগুপ্ত স্পষ্ট বললেন, “কর্মসূত্রে ব্রিটেনের বহু হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হয়। সেই সংযোগ-সূত্র ছিঁড়ে গেলে খুবই অসুবিধে হবে।” তাঁর পরিচিত বেশির ভাগ ভারতীয়ই ‘না’-এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানালেন সৌম্য।

শহরের অন্যতম জনপ্রিয় ক্যানন গেট এলাকায় ‘দ্য ওয়ার্লড্স এন্ড’ বলে একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। দুপুরে ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ খেতে সেখানে ভিড় জমান পর্যটক ও স্থানীয়, দু’ধরনের মানুষই। আজ সেখানে সকলের মুখেই একই কথা কী হবে? জন্মসূত্রে আইরিশ, কিন্তু বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে এডিনবরায় রয়েছে এরিক ট্রেভিসের পরিবার। এরিকের আশা, “আমিও এক স্বাধীনতাকামী দেশের ছেলে। আশা করি, দিনবদল হচ্ছেই। সন্ধের দিকে এডিনবরা প্রাসাদের কাছে কাফে ত্রুভায় গিয়েছিলাম। যে মেয়েটি টেবিলে কফি এনে রাখলেন, তাঁর বাড়ি ভূমধ্যসাগরের তিরে। বললেন, “বেশ মজা লাগছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন। ভাগ্যিস আমার ভোট নেই।”

‘না’-এর পক্ষে যাঁরা, তাঁরা কিন্তু নিজেদের স্বাধীনতা-পরিপন্থী বলতে চান না। প্রথমে তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘না, আমরা স্বাধীন হতে চাই না।’ কিন্তু সেটা যেন শুনতে কেমন লাগে! তাই তাঁরা নিজেদের বুলিটা একটু পাল্টে নিয়ে বলতে শুরু করলেন ‘গর্বিত স্কট, সহাবস্থানের পক্ষে’। এ রকমই এক ‘না’-বাদী ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। আজ নর্থ কুইনস্ফেরির একটি বুথ থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, ‘না’-এর পক্ষেই সায় দিয়েছেন। গত কয়েক দিনের সুরেই দেশবাসীকে আজ ফের অনুরোধ করেন, ব্রিটেনের মধ্যেই থাকুন। এক সঙ্গে থাকুন।


লন্ডনের রাস্তায় স্কটিশ বাদক। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।

আর ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে যারা? হ্যাঁ-এর হয়ে গত দু’মাস ধরে গলা ফাটাচ্ছেন হাইস্কুল পড়ুয়া টড বেটসন। ‘ইয়েস’ লেখা নীল পোস্টার হাতে বললেন, “স্বাধীনতা চাই না, এ কথাটা কী করে যে কেউ বলতে পারে, সেটাই আমাদের মাথায় ঢুকছে না।” এ বারের এই রেফারেন্ডামে ভোট দিতে পেরেছেন ১৬-১৭ বছর বয়সীরাও।

শহরের কেন্দ্রস্থলে ওয়েস্ট পার্লামেন্ট স্কোয়ার। অনেকটা কলকাতার গড়ের মাঠের মতো। মোড়বদলের দিনে সেই ময়দানও ভিড়ে ঠাসা। পর্যটকের সঙ্গেই স্থানীয় মানুষের ভিড়, আর নীল-লাল পোস্টারে চার দিক ছয়লাপ। ময়দানের মাঝখানে ঔপন্যাসিক ওয়াল্টার স্কটের এক মূর্তি। মাথায় কে একটা স্কটিশ নীল পতাকা চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে। মূর্তির নীচের দিকে কেউ চক দিয়ে লিখে গিয়েছিল ‘ফ্রিডম ফ্রম দ্য টিরানি অব ওয়েস্টমিনস্টার’ ওয়েস্টমিনস্টারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাই! লেখাটা আবার কেউ মোছার চেষ্টা করেছিল। ঝাপসা হলেও তবু সেটা পড়া যাচ্ছে।

আজ সকাল সাতটা থেকেই ভোট দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাত ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশ। ব্যালট গোনা হবে ৩২টি কেন্দ্রে। প্রত্যেক কাউন্টিং অফিসার ভোটের ফলাফল জানিয়ে দেবেন চিফ কাউন্টিং অফিসার মেরি পিটক্যাথলিকে। তিনি জানিয়েছেন, আগামিকাল সকালে, প্রাতরাশের সময়ে, এডিনবরার রয়্যাল হাইল্যান্ড সেন্টারের বাইরে ফল ঘোষণা করবেন তিনি। জানিয়ে দেবেন, ‘স্বাধীন’ হলেন কি না স্কটল্যান্ডের বাসিন্দারা।

Scotland vote international news online news latest news breakfast table uk
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy