Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিমান দুর্ঘটনা ভাবাত নিখোঁজ কর্মী অস্কারকে

মাত্র পাঁচ মাস আগে এক বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনে একটা দীর্ঘ টুইট করেছিলেন তিনি। নিজে বিমানকর্মী। তাই এক বছরের মধ্যে দু’দু’টো বিমান বিপর্যয় হয়তো ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁকেও। গত ১৭ জুলাই ইউক্রেনের ডনেৎস্কে জঙ্গিদের ক্ষেপণাস্ত্রে যখন ধ্বংস হয় মালয়েশীয় বিমান সংস্থার দ্বিতীয় বিমানটি, উৎকণ্ঠা আর চেপে রাখতে পারেননি তিনি। টুইটারে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছিলেন।

সংবাদ সংস্থা
জাকার্তা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

মাত্র পাঁচ মাস আগে এক বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনে একটা দীর্ঘ টুইট করেছিলেন তিনি। নিজে বিমানকর্মী। তাই এক বছরের মধ্যে দু’দু’টো বিমান বিপর্যয় হয়তো ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁকেও। গত ১৭ জুলাই ইউক্রেনের ডনেৎস্কে জঙ্গিদের ক্ষেপণাস্ত্রে যখন ধ্বংস হয় মালয়েশীয় বিমান সংস্থার দ্বিতীয় বিমানটি, উৎকণ্ঠা আর চেপে রাখতে পারেননি তিনি। টুইটারে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছিলেন। অস্কার দেসানো জানতেন না, বছর-শেষে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। এয়ার এশিয়ার যে বিমানটি ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছে, দেসানো সেই ‘কিউজেড-৮৫০১’-এর কর্মী।

প্রথমে মার্চে মালয়েশীয় বিমান সংস্থার উড়ান এমএইচ-৩৭০ কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি ওই বিমানের ২৩৯ জন যাত্রীর। তার পরে জুলাইয়ে ওই একই সংস্থার আর একটি বিমান ধ্বংস হয়ে যায় ইউক্রেনের আকাশে। মৃত্যু হয় ২৯৮ জনের। কয়েক মাসের ব্যবধানে পর পর দু’টি বিমান বিপর্যয়ে খানিক শঙ্কিত হয়েছিলেন কি অস্কার? টুইটার অ্যাকাউন্টে ১৭ জুলাইয়ের পোস্টে ওই তরুণ বিমানকর্মী লিখেছিলেন, “মালয়েশীয় সংস্থার বিমান ধ্বংসের খবর শুনে খুবই দুঃখ পেয়েছি। এক বছরের মধ্যে ওই সংস্থার বড়সড় দু’টো বিপর্যয় ঘটে গেল। যাত্রীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা রইল। মৃতদের আত্মা শান্তি পাক। মালয়েশীয় বিমান সংস্থাও যেন সব বিপত্তি পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।”

তার পরের কয়েক মাস অবশ্য সব ঠিকঠাকই চলছিল। বড়দিনের আগে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েও টুইট করেছিলেন অস্কার। লিখেছিলেন বন্ধুকে নিয়ে অবসর সময় কাটাচ্ছেন। ঘুণাক্ষরেও জানতেন না, তার তিন দিনের মাথায় এয়ার এশিয়ার কিউজেড-৮৫০১-এর ১৫৫ জন যাত্রীর সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যাবেন তিনিও। অস্কারের সঙ্গেই ওই বিমানে আরও ছয় কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে খাইরুনিসা হায়দার ফাউজির মা রোহানা বিমান নিখোঁজের খবর শোনার পর থেকে শোকে পাথর। তবে সংবাদমাধ্যমের হাতে নিজের মেয়ের ছবি তুলে দিয়েছেন তিনি। তাঁর এখন একটাই প্রার্থনা, যে করেই হোক, যেন খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর আদরের মেয়েকে। খাইরুনিসাদের দক্ষিণ সুমাত্রার বাড়িতে এখন পরিজনদের ভিড়। রোহানাকে যে সামলানো যাচ্ছে না!

শোকের বিপরীত স্রোতে আনন্দও আছে। সুরাবায়ার চন্দ্র সুশান্তের পরিবার এখন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। স্ত্রী আর তিন ছোট ছোট সন্তানকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে বর্ষশেষের ছুটি কাটাতে যাওয়ার কথা ছিল চন্দ্র সুশান্তের। কিন্তু হঠাৎ চন্দ্রের বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় গত কালই বিমানের টিকিট বাতিল করেন তাঁরা। আজ সকালে ঘুম ভাঙার পরে টিভি খুলে তাই চমকে গিয়েছিলেন চন্দ্র। টিভিতে খবর শুনে তাঁর বোনও সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন দাদাকে। চন্দ্র যে পরিবারের সঙ্গে বেরোননি, জেনে নিশ্চিন্ত হন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে চন্দ্র বলেছেন, “টিকিট বাতিলের খবর পেয়ে আমার ছেলে ক্রিস্টোফারের খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ওই একটা ছুটির জন্য মুখিয়ে ছিল ও। কিন্তু আমাদের সকলের জীবন আজ থেকে পাল্টে গিয়েছে। ঈশ্বরের কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।”

বেঁচে থাকার বাঁধ ভাঙা আনন্দে একটা জিনিস ভোলেননি সুশান্তরা। পরিবারের সকলেই এখন প্রার্থনা করছেন, দ্রুত যেন নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজ মেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE