মঙ্গলবারের ব্যস্ত সকাল। ওয়েস্টমিনস্টারের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছেন স্যুট পরা এক ব্যক্তি। কাঁধে তাঁর তিন বছরের মেয়ে। এক হাতে শক্ত করে তার গোড়ালি দু’টো ধরা। অন্য হাতে মেয়েরই বাইসাইকেল। গন্তব্য, ওই খুদেরই প্রাথমিক স্কুল। আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষ যে ভাবে তাঁদের মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যান, ঠিক সে ভাবেই সব হল। তাড়াহুড়ো করে মেয়েকে স্কুলে নামিয়েই বাবা ছুটলেন অফিসে। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে তাঁর অপেক্ষায় সকলে। তিনি এলেন আর বৈঠকটাও শুরু হল।
সোমবার এমন দৃশ্যই দেখা গিয়েছে লন্ডনের রাস্তায়। ওই খুদে আসলে ফ্লোরেন্স ক্যামেরন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ছোট মেয়ে। পায়ে হেঁটে হঠাৎ মেয়েকে স্কুলে ছাড়তে গেলেন কেন? ক্যামেরনের জবাব, “কখনও সপ্তাহে এক দিন, কখনও বা মাসে এক দিন। আমি চেষ্টা করি, নিজে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার। আসলে চেষ্টা করলে একই সঙ্গে ভাল স্বামী, ভাল বাবা ও দেশের কর্তব্যনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব।”
প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “কাল যখন ফ্লোরেন্স স্কুলে যাচ্ছিল, নানা ভাবে বাবাকে উত্যক্ত করছিল। কখনও বাবার চোখ দু’টো তাঁর ছোট্ট হাত দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিল। কখনও আবার বাবার গাল টিপে আদর করছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু তাতে একটুও বিরক্ত হননি। হাসিমুখে মেয়েকে নিয়ে হেঁটেছেন।”
আসলে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও ক্যামেরন চান সাধারণ বাড়ির ছেলে-মেয়ের মতো করেই মানুষ হোক তাঁর সন্তানেরা। আর তাই জন্যই নিজের বড় মেয়ে ন্যান্সিকে সরকারি স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্যামেরন। এই সিদ্ধান্তে একশো ভাগ সায় আছে ক্যামেরন-পত্নী সামান্থারও।
ন্যান্সি ক্যামেরনের বয়স এখন দশ। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বড় স্কুলে ঢোকার সময় এসেছে। আপাতত লন্ডনের একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ছে সে। ন্যান্সির ভাই এলওয়েনও ওই স্কুলেই পড়ে। ক্যামেরন দম্পতির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছেন, ক্যামেরন দম্পতি নাক উঁচু নন। তাঁরা চান, তাঁদের ছেলে-মেয়েরা আর পাঁচ জন ব্রিটিশ নাগরিকের মতোই বড় হোক। অভিজাতদের নামকরা স্কুলে সন্তানদের পাঠানোর পক্ষপাতী নন তাঁরা।
সামান্থা ক্যামেরন বহু বার বলেছেন, তিনি চান পরিচিত গণ্ডির বাইরে মেলামেশা করুক সন্তানরা। কে কোন স্কুলে পড়ছে, কার বাবা-মার কী পদ মর্যাদা, এ সব নিয়ে ভাবাটা একেবারেই নাপসন্দ তাঁর। ক্যামেরন নিজেও বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটনের মতো অভিজাত কলেজে পড়াশোনা করার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে, তাঁদের কথা বুঝতে তাঁর অসুবিধা হয়। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, “দেশ চালাতে গিয়ে দেশের মানুষের মন বোঝাটা খুব জরুরি।” তিনি সেখানেই ধাক্কা খান। সেই মতাদর্শ থেকেই মেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত।
সরকারি স্কুলে ন্যান্সির ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গত নভেম্বর থেকেই চর্চা চলছে ব্রিটেনে। সে যদি সত্যিই সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়, তা হলে ক্যামেরনই হবেন প্রথম ব্রিটিশ কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী, যিনি তাঁর সন্তানকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। সরকার পরিচালিত স্কুলের পঠনপাঠনে সম্পূর্ণ আস্থাও আছে প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর কথায়, “সরকারি স্কুলে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তা আমার মতে অসাধারণ।”
শেষ পর্যন্ত লন্ডনের কোন সরকারি স্কুলে ভর্তি হবে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের এই খুদে বাসিন্দা, তার দিকেই এখন নজর ব্রিটেনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy