লোকসভা নির্বাচনের মুখে তামিল আবেগের কিছুটা বিরুদ্ধে গিয়েই আজ রাষ্ট্রপুঞ্জে শ্রীলঙ্কা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকল মনমোহন সরকার।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে আনা ওই প্রস্তাবটি ছিল অন্য বারের চেয়ে আলাদা। তাঁর কথায়, “এই প্রস্তাবে শ্রীলঙ্কার উপর আন্তর্জাতিক তদন্ত মেকানিজম চাপিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা এক ধরনের খবরদারি করার মানসিকতা যা, যে কোনও দেশেরই সার্বভৌমত্বকে খাটো করে।”
এক কথায় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দিয়ে বিরত থাকার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা সরকারের কার্যত পাশেই দাঁড়াল ভারত। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘২০০৯ সালের গৃহযুদ্ধে অসহায়
এবং নিরপরাধী তামিলদের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল।’ রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে সেই যুদ্ধপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংক্রান্ত
তদন্ত শুরু করার প্রস্তাব এনেছিল আমেরিকা। এই প্রস্তাবটি স্বাভাবিক ভাবেই তামিল আবেগকে তুলে ধরেছিল। জয়ললিতার এডিএমকে, করুণানিধির ডিএমকে-সহ তামিলনাড়ুর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ তামিল মানুষের চাপ ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার যাতে প্রস্তাবটি সমর্থন করে তামিল আবেগকে গুরুত্ব দেয়।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, শ্রীলঙ্কা সরকারের পাশে দাঁড়ানোরই সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লি। সূত্রের বক্তব্য, একাধিক রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক কারণে ভোটদানে বিরত থাকার পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। প্রথমত, এই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় দেশের একটিমাত্র রাজ্যে, সেটি হল তামিলনাড়ু। বর্তমান পরিস্থিতি এখন এমনই যে, তামিলনাড়ুর মোট ৩৯টি আসনের একটিতেও কংগ্রেসের ভাল ফল করার কোনও আশা নেই। এমনকী বিদায়ী সরকারের অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের পুত্র কার্তি চিদম্বরমেরও জয়ের আশা দেখছেন না খোদ কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই একটি মাত্র রাজ্যকে বাদ দিলে গোটা দেশে তামিল আবেগ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। এটি কোনও রাজ্যের নির্বাচনের বিষয়ও নয়। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক লোকসানের কোনও আশঙ্কা করছেন না সনিয়া গাঁধী।
দ্বিতীয়ত, কোনও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যদি আন্তর্জাতিক তদন্তে সায় দেয় ভারত, তা হলে কাশ্মীর প্রসঙ্গ ভবিষ্যতে অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে সাউথ ব্লককে। পাকিস্তান ধারাবাহিক ভাবে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে চাপে ফেলার চেষ্টা করে চলেছে ভারতকে। তৃতীয়ত, শ্রীলঙ্কার রাজাপক্ষে সরকার আগাগোড়া সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে ভারতের সঙ্গে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জিতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। কূটনীতিকদের বক্তব্য, আজকের ভোটাভুটি থেকে সরে থাকার মাধ্যমে রাজাপক্ষে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে অনেকটাই এগিয়ে রইল ভারত।
তাই দিল্লি বলেছে ‘ভারত মনে করে প্রত্যেকটি দেশেরই বলিষ্ঠ জাতীয় মেকানিজম থাকা উচিত, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশ নিজস্ব ভূখণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy