এস কে সিনহা।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিদেশ যাওয়ার সময়ে বলা মৌখিক ও লিখিত বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বিবৃতি দিয়ে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে। শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওহাব মিয়া আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন।
সেই সভা শেষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে- বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলন-সহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এমন বিবৃতি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
বিদেশে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সংবাদমাধ্যমের কাছে যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে বিভ্রান্তিমূলক বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা।
আরও পড়ুন: বিতর্কের মধ্যেই দীর্ঘ ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়লেন প্রধান বিচারপতি
বাংলদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ‘১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ তুলে ধরেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলন-সহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।’ দায়িত্বশীল সূত্র আনন্দবাজারকে নিশ্চিত করেছে- প্রধান বিচারপতির সহকর্মীরা এই অভিযোগ নিয়ে সিনহার কাছে ব্যাখ্যা চান। কিন্তু গ্রহণ করার মত কোনও ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি।
শনিবারের বৈঠকে আপিল বিভাগের চার বিচারক বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ছিলেন। বিচারপতি ইমান আলি সে দিন ঢাকায় ছিলেন না। বঙ্গভবনের বৈঠক থেকে ফিরে পর দিন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা নিজেরা বৈঠক করে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন।
সুপ্রিম কোর্টের সেই বিবৃতি।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সহ-বিচারপতিরা সিদ্ধান্ত নেন- গুরুতর অভিযোগগুলো প্রধান বিচারপতিকে জানানো হবে। তিনি যদি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন, তা হলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভব নয়। সে দিনই পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির বাড়িতে যান। তাঁর সঙ্গে অভিযোগগুলো নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন তাঁরা।
বিবৃতিতে অনুযায়ী, “তার কাছ থেকে কোনও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ও সুদত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এই অবস্থায় অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভবপর হবে না। এই পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে ২/১০/২০১৭ তারিখে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান।”
কিন্তু এর পর বিচারপতি সিনহা সহ-বিচারপতিদের কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান বলে বিবৃতিতে বলা হয়। বিচারপতি এস কে সিনহার দেওয়া চিঠির কারণেই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেন রাষ্ট্রপতি।
এদিকে বাংলাদেশের শীর্ষ আইন কর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন- বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি আছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সহকর্মীরা বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে কাজ করতে না চাওয়ায় তাঁর প্রধান বিচারপতির পদে ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।
এ দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতি ইস্যুতে দলের নেতাদের কথা বলতে বারণ করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামি লিগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি। তার বক্তব্য, ‘ইস্যুটি বিচার বিভাগের। তারাই দেখছে। তাই রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়াই ভাল।’ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত দায়িত্বশীল সূত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy