জঙ্গিহানার পর ঘটনাস্থলে তদন্ত করছেন ভারতীয় সৈন্যরা।—ছবি রয়টার্স।
জম্মু-কাশ্মীরে বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকেই প্রধান মদতদাতা বলছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা। আনন্দবাজারের কাছে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির অংশ জঙ্গীবাদকে পালন, এমন মন্তব্য বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদের।
অন্য দিকে, নিহতদের পরিবারের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মনে করছেন আওয়ামি লিগের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ জমির। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার মতে, এই হামলা শুধু ভারতের উপরে নয়, দক্ষিণ স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ. জিয়া রহমান বললেন, ‘‘পাকিস্তান দেশটিই হয়ে উঠছে সন্ত্রাসের প্রতীক।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাস সিংহ রায়ের মতে, এই হামলা নৃশংস, ঘৃণার। যার দায় পাকিস্তানের।
বাংলাদেশে টানা তিন দফা সরকারে থাকা দল আওয়ামি লিগের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ জমির আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘এই হামলার ঘটনার নিন্দা জানাই। এই হামলাতে নিহতের পরিবারগুলোর কাছে এবং ভারতের কাছে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ সব ঘটনার সহায়তা দিয়ে সব সময়ই পাকিস্তান এই অঞ্চলের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সন্ত্রাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর কারণে এই উপঅঞ্চলে শান্তির পরিস্থিতি বিঘ্নিত হচ্ছে।’’ মোহম্মদ জমির আরও বলেন, এই দেশটির এমন ভূমিকার কারণে সার্কও কার্যকর হতে পারছে না, অথবা বলা যায় পাকিস্তান চায় না সার্ক কার্যকর হোক, সে কারনেই তারা জঙ্গিদের অন্য দেশে অনুপ্রবেশের জন্য আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে।’’
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করুন! পাকিস্তানকে আরও কড়া বার্তা আমেরিকার
বাংলাদেশের মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মোহম্মদ আব্দুর রশিদ আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘পাকিস্তান দেশটির পররাষ্ট্র নীতির অংশ হয়ে উঠেছে জঙ্গিবাদকে মদত দেওয়া। এই কারণে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ এমনকি আফগানিস্তানও পাকিস্তানের এই ছকের শিকার হচ্ছে। এই মদতের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়ছে সন্ত্রাস হামলা, আতঙ্ক বাড়ছে প্রতি নিয়ত। মেজর জেনারেল রশিদ বললেন, ‘‘বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়টিও বারবার আলোচনায় এসেছে।’’ তাঁর মতে, সার্ক অকার্যকর হয়ে রয়েছে পাকিস্তানের কারণেই। যে দেশটির জঙ্গি মদতের বিষয়টি প্রকাশ্য, তাদের সঙ্গে বসে কি ভাবে অন্য দেশগুলো আলোচনা করবে?
আরও পড়ুন: ‘প্রতিশোধ চাই’! পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে অগ্নিগর্ভ জম্মু, জারি কার্ফু
বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আনন্দবাজারকে এই বিষয়ে বললেন, ‘‘এই হামলা শুধু ভারত নয়-এই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত করতে করা হয়েছে। মাসুদ আজহার বা লাদেনের আশ্রয়দাতা পাকিস্তান চায় না কোনও শান্তির পরিবেশ থাকুক। সে কারনেই উরি থেকে পুলওয়ামায় এই ধরনের একের পর এক সন্ত্রাস হামলার পেছনে তারা মদত দিয়ে চলেছে। হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করা জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদকে পাকিস্তানই লালন করে। এটি গ্রহনযোগ্য নয়। পাকিস্তান এখন এই উপমহাদেশের জন্যই এখন দানবিক একটি দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশেও এর আগে পাকিস্তানি জঙ্গি আটক হওয়ার ঘটনা রয়েছে। একুশে অগস্টে শেখ হাসিনার হত্যার প্রচেষ্টার অপরাধী পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা আমরা জানি।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘পাকিস্তান উপমহাদেশের একটি বিষফোঁড়া। তার কাজই, উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে জঙ্গিবাদকে উস্কে দেওয়া। বাংলাদেশ কিংবা ভারত যেখানেই হোক না কেন পাকিস্তান সব সময়ই উগ্রপন্থাকে মদত দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে। এমনকি ৯/১১ এর টুইন টাওয়ার হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহম্মদকে পাকিস্তান থেকেই আটক করে যুক্তরাষ্ট্র। আর ওসামা বিন লাদেন ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত ছিলেন পাকিস্তানেই। তাই পাকিস্তানকে একঘরে করতে পারলেই, দক্ষিণ এশিয়া সহ অন্যান্য জায়গায় জঙ্গিবাদের প্রকোপ কমবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পাকিস্তান উপমহাদেশ সহ সারা বিশ্বেই জঙ্গিবাদকে মদত দিয়ে আসছে। এই দেশটি তার প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে সব সময়ই চেষ্টা করে। এই মুহূর্তে ভারতের উচিত প্রতিবেশী অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চাপে রেখে জঙ্গিবাদ বিরোধী ফ্রন্টে নিয়ে আসা। বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সামনের আসনে ভারতের অবস্থান। ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করাই ছিল এই হামলার উদ্দেশ্য। এখনই উচিত উপমহাদেশের এই বিষফোঁড়ার মতো দেশটিকে নিয়ন্ত্রণ করা।’’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাস সিংহ রায় আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এই উপমহাদেশে জঙ্গিবাদের প্রধান ও প্রথম মদতদাতা, নিজের দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনার জন্য যে দেশটি বারবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে উঠছে, সেই পাকিস্তান নিজেই প্রশ্রয় দিয়ে এমন ধরনের ঘৃন্য ঘটনা ঘটাল কাশ্মীরে। এখন সময় এসেছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তানের এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। একটি দেশ যখন একটি অঞ্চলের অনেকগুলো দেশের শান্তি বিঘ্নিত করে, তখন সম্মিলিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ প্রয়োজন। বাংলাদেশে যখন যুদ্ধপরাধীদের বিচার এবং দণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে, আমরা তখনও দেখছি পাকিস্তানের সংসদে এই ঘাতকদের পক্ষে প্রস্তাব তোলা ও শোক প্রকাশের ঘটনা। যা প্রমান করে পাকিস্তান তার দানবিক দর্শন থেকে একটুও সরে আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy