সংখ্যায় স্বস্তির আবরণ সরলেই উঁকি জমাট উদ্বেগের।
দেশজোড়া লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল যে মাসের শেষ দিকে, সেই মার্চে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭৫%। ঘরবন্দি দশার এপ্রিল ও মে-তেও প্রায় প্রতি চার জনের এক জন ছিলেন কর্মহীন। সেখান থেকে নেমে সেপ্টেম্বরে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৬.৬৭% (বিশদ সঙ্গের সারণিতে)। কিন্তু শুধু এই পর্যন্ত শুনলে যে আশার ছবি উঁকি মারে, তা অনেকটাই উধাও হওয়ার জোগাড় কাজের বাজারের সামগ্রিক ছবিতে। কারণ, তার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বিধ্বস্ত অর্থনীতিতেও বেকারত্ব এতটা নীচে নেমেছে অনেকে এই মুহূর্তে কাজ খোঁজাই ছেড়ে দেওয়ায়!
উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই বলছে, সেপ্টেম্বরে নতুন করে কাজে যোগ দিয়েছেন ৫১ লক্ষ জন। অথচ ‘ঘোষিত কর্মহীনের’ সংখ্যা কমেছে ৭৩ লক্ষ। কর্মহীনের সংখ্যা কমতে পারে দু’ভাবে। এক, যদি কেউ কাজের সুযোগ পান। আর দুই, যদি কেউ আপাতত নিজেকে সরিয়ে নেন কাজের বাজার থেকেই। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে যদি জীবিকার খোঁজ না-করেন তিনি। সেপ্টেম্বরে যত জন কাজে যোগ দিয়েছেন, তার তুলনায় নিজেকে আর কর্মহীন বলে দাবি না-করা লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে ‘মনের মতো’ কাজ না-পেয়ে জীবিকার সন্ধানে ক্ষান্ত দিচ্ছেন অনেকেই। সে দিক থেকে দেখলে, অর্থনীতির মতোই সঙ্কুচিত হচ্ছে শ্রমের বাজার।
কিন্তু অর্থনীতিতে কাজ যেখানে এমনিই বাড়ন্ত, সেখানে নিজেদের কাজের বাজার থেকে সরানোর কারণ? তথ্য বলছে, কাজের সুযোগ মূলত তৈরি হয়েছে গ্রামে। একশো দিনের কাজে বরাদ্দ বেড়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে চালু হওয়া সরকারি প্রকল্পেও রোজগারের জন্য নাম লিখিয়েছেন অনেকে। ওই সব কাজের মজুরি এবং স্থায়িত্ব দুই-ই কম। কিন্তু আপাতত সংসার চালাতে অনেকে তাতে নাম লেখানোয়, প্রকৃত অর্থেই কর্মহীনের সংখ্যা কমেছে। সেপ্টেম্বরে গ্রামাঞ্চলে যেখানে ৭৪ লক্ষ জন কাজে যোগ দিয়েছেন, সেখানে ঘোষিত বেকারের সংখ্যা কমেছে ৫০ লক্ষ। অর্থাৎ, কাজে যোগ দিয়েও তা মনঃপুত না-হওয়ায় অনেকে নতুন জীবিকার সন্ধানে রয়েছেন।
কিন্তু শহরের ছবিই সব থেকে সঙ্গিন। বিভিন্ন কল-কারখানা ধাপে ধাপে ঝাঁপ তুলতে শুরু করলেও, সেপ্টেম্বরে শহরাঞ্চলে কাজ গিয়েছে ২৩ লক্ষ জনের। অথচ একই সময়ে ঘোষিত কর্মহীন কমেছে ২৩ লক্ষ। অর্থাৎ, মোট ৪৬ লক্ষ জন নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন কাজের বাজার থেকে। একমাত্র এপ্রিল ছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে কাজের বাজার এক মাসে এতখানি (৩.৩%) সঙ্কুচিত হয়নি, দাবি সিএমআইই-র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে কাজ খুঁজেও না-পেয়ে আপাতত হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বহু শ্রমিক। ফিরে আসছেন গ্রামে। জীবনধারণের খরচ কমিয়ে কঠিন সময়টুকু পার করে দিতে। সেই সঙ্গে এই আশায়, যদি সেখানে আপাতত চালিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি প্রকল্পে কাজের সুবিধা মেলে। মনের মতো বেতন কিংবা কাজ না-পেয়ে আপাতত অপেক্ষার পক্ষপাতী এত দিন ভাল বেতনে কাজ করে ছাঁটাই হওয়া অনেক দক্ষ কর্মীও।