E-Paper

নতুন সফটওয়্যার আসতেই বিপর্যস্ত ডাক পরিষেবা, চিঠি-নথি আটকে হয়রান লক্ষ লক্ষ গ্রাহক

ডাক বিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের সিংহভাগ ডাকঘরে ৪ অগস্ট থেকে নতুন সফটওয়্যার চালু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ০৯:১৮
ভারতীয় ডাকঘর।

ভারতীয় ডাকঘর। —ফাইল চিত্র।

ডাকঘরগুলিকে পুরোদস্তুর ডিজিটাল করে তুলতে নতুন সফটওয়্যার চালুর পরেই দেশে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল ডাক পরিষেবা। অভিযোগ, সপ্তাহখানেক পেরিয়েও হাল পাল্টায়নি। ফলে লক্ষ লক্ষ চিঠি গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। বহু মানুষের প্রয়োজনীয় চিঠি-নথি ও পণ্য আটকে গিয়েছে। গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অসংখ্য গ্রাহক। একে কেন্দ্র করে অসন্তোষ বাড়ছে। বিরক্ত কর্মীদের একাংশও। অব্যবস্থার দাবিও তুলছেন কেউ কেউ। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, উন্নত এবং দ্রুত ডাক পরিষেবা দিতেই তা ডিজিটাল হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি চালুর পরে কিছু সঙ্কট তৈরিও অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রশ্ন উঠছে, পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা নেওয়া হয়েছিল কি? নাকি তাড়াহুড়ো করার কারণেই এই বিপত্তি?

ডাক বিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের সিংহভাগ ডাকঘরে ৪ অগস্ট থেকে নতুন সফটওয়্যার চালু হয়। তার পরে গোটা ছ’টি কাজের দিনের মধ্যে প্রায় তিন দিনই গোটা কর্মকাণ্ড কার্যত থমকে ছিল, অভিযোগ ডাক কর্মীদের একাংশের। সূত্রের দাবি, জিপিও থেকে প্রায় কোনও চিঠি বা পণ্যই গন্তব্যে পাঠানোর জন্য বুক করা যায়নি। সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের একাধিক অঞ্চলের (ডিভিশন) বিভিন্ন ডাকঘরে পরিষেবা দিতে না পারায় তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের একাংশের। শুধু ডাক পরিষেবাই নয়, পেনশনভোগীরাও মাসের টাকা তুলতে পারছেন না। ফলে সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছেন একাংশ।

বারুইপুরের এক ব্যক্তির অভিযোগ, ‘‘চাকরির চিঠি গত সপ্তাহে স্পিড পোস্টে পাঠানো হয়েছিল। এখনও আসেনি। অনলাইন ট্র্যাকিং-এ দেখানো হচ্ছে ‘অন ট্রানজিট’। কিন্তু স্থানীয় ডাকঘর থেকে বলতে পারছে না কবে তা আসবে।’’ সময়ের মধ্যে না এলে চাকরিতে সময়ে যোগ দেওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলেই মনে করছেন তিনি। কারও কারও আবার ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ নথি আটকে গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে ডাক বিভাগ সামগ্রিক ভাবে বা ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের পক্ষ থেকে সমাজ মাধ্যমে কিছু পোস্ট করেই দায় সারা হয়েছে। সার্কলের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারালের পক্ষ থেকেও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শুধু পরিষেবা বন্ধ হওয়া নয়, গত এক সপ্তাহ ধরে কোনও কাজ না করতে পেরে কর্মীদের একাংশও বিরক্ত। তাঁদের অভিযোগ, জিপিও থেকে স্থানীয় ডাকঘরে চিঠি ও পণ্যের পাহাড় হয়ে রয়েছে। কিন্তু তা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ গত এক সপ্তাহ ধরে বেশির ভাগ কাজই হয়নি। দিনে সাকুল্যে ঘণ্টা দুয়েক কাজের পরেই নতুন সফটওয়্যারে আর কিছু করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে তাঁদের কাছেও কোনও উত্তর নেই।

কলকাতা জিপিও-র এক কর্মী জানান, উন্নত ও দ্রুত পরিষেবার জন্য এই সফটওয়্যার চালু করা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে এটাই কার্যত ‘অভিশাপ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে, এত দীর্ঘ সময় ধরে কখনও ডাক পরিষেবা ধাক্কা খায়নি। বহু মানুষ গুরুত্বপূর্ণ চিঠির জন্য এখনও ডাক নির্ভর। ফলে চরমভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা। অথচ এনিয়ে কেন্দ্র বা ডাক বিভাগের তরফে ঘোষণা করা হচ্ছে না, এটাই আশ্চর্যের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India Post Post Offices

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy