গোটা পৃথিবী এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। ঝুঁকি যেন সব কিছুতেই। বড় মেয়াদে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে পারবেন, এমন আশা অনেকেই আর করতে পারছেন না। এই অবস্থায় অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকিজনিত লোকসান নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম উপায় বিমা করা।
যে সব ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বিশেষ চিন্তিত তার মধ্যে প্রথমেই আছে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোনও রোগের চিকিৎসা করানো। বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালের খরচ এখন আকাশছোঁয়া, যা বেশিরভাগেরই নাগালের বাইরে। যে কারণে স্বাস্থ্য বিমা খুবই জরুরি। এ ছাড়া পরিবারের প্রধান রোজগেরের হঠাৎ মৃত্যু যাতে সমস্যা তৈরি না করে, সে জন্য থাকতে হবে পর্যাপ্ত জীবন বিমা। যাঁরা দুর্ঘটনাপ্রবণ কাজে নিযুক্ত, তাঁদের দুর্ঘটনা বিমা করানো আবশ্যিক। এ ছাড়া বেড়াতে গেলে ভ্রমণ বিমা, চার চাকা-বাইক থাকলে গাড়ি বিমা থাকাও দরকার। বিমা করা যায় বাড়িতে চুরি, ডাকাতি, বন্যা, আগুন ইত্যাদি থেকে হওয়া ক্ষতির বিরুদ্ধেও। এমনকি এখন অনিশ্চিত চাকরির জগতের কথা মাথায় রেখে আনা হচ্ছে বিশেষ বিমা।
তবে বলা যত সহজ, কাজটা কিন্তু মোটেও তত সহজ নয়। বিভিন্ন বিমায় প্রিমিয়াম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে তা এখন বহু মানুষের সাধ্যের বাইরে। তার উপরে প্রিমিয়ামে চাপে ১৮% জিএসটি। এই কর কমানো নিয়ে বহু আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। অথচ সরকার বলছে ভারতে বিমার প্রসার খুব কম। তা দ্রুত বাড়াতে হবে। জীবন বিমার সচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। কিন্তু জিএসটি রয়েচে সেই ১৮ শতাংশেই। ফলে বিমার প্রসার তত দিন বাড়বে না যত দিন না মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও বিমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে এবং করের হার কমছে।
বিমায় আগ্রহ কমার আরেকটি কারণ আয়কর আইনের নতুন কর কাঠামোয় প্রিমিয়ামে ছাড় না থাকা। ২০২২-২৩ সালে মোট প্রিমিয়াম জাতীয় আয়ের ৪% হলেও ২০২৩-২৪ সালে নেমেছে ৩.৭ শতাংশে। জীবন বিমায় ৩% থেকে ২.৮%। অন্যান্য বিমায় ১%। অথচ বিশ্বের গড় ৭%। চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে বিমার এহেন প্রসার বড়ই করুণ। জীবন বিমার তেমন প্রসার না হওয়ার অপর কারণ বিমা ও বিনিয়োগকে এক করে দেখা। বিমা হল ঝুঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। যার খরচ বহন করে বিমা সংস্থা। তাই এর রিটার্ন সাধারণত লগ্নির থেকে কম হয়। ফলে বিমাকে লগ্নির সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না।
এ দিকে এখন বেশিরভাগই হল চুক্তিভিত্তিক চাকরি। চুক্তি শেষ হলে নবীকরণ না-ও হতে পারে। যেতে পারে পাকা চাকরিও। উপরন্তু কৃত্রিম মেধার প্রসার বৃদ্ধির সঙ্গে বহু ক্ষেত্রেই নিয়োগ কমতে পারে বলে আশঙ্কা। কাজের বাজারে চিন্তা থাকছে আমেরিকার শুল্ক নীতি নিয়েও। এই ঝুঁকি মাথায় রেখেই অন্য বিমার সঙ্গে যুক্ত করে চাকরি হারালে ১২ মাস পর্যন্ত আয়ের টাকা দেওয়ার প্রকল্প এনেছে কিছু সংস্থা। তবে তার শর্ত ও প্রিমিয়াম দেখে নিতে হবে। এই বিমা এড়ানো যায় আগেই অন্তত এক বছরের খরচের তহবিল তৈরি রাখতে পারলে। তবে এটা স্পষ্ট, অবস্থা যা তাতে মানুষকে অনাবশ্যক খরচ কমাতে ও সঞ্চয় বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে বাড়ি ভাড়া বা অন্য খাতে দ্বিতীয় আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মোদ্দা কথা বিশ্ব ও দেশ আর্থিক সঙ্কটে পড়তে পারে ধরে নিয়ে সকলকে সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যাপ্ত রসদ তৈরি করে রাখতে হবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)